সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: রাজ্যে দাঙ্গা পরিস্থিতি রুখতে এবার অভিনব পদক্ষেপ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। দাঙ্গার চক্রান্ত রুখতে এবার এগিয়ে আসতে বললেন সাধারণ মানুষকে। শুধু তাই নয়, এ কাজ করলে পুরস্কৃতও হবেন তাঁরা। এমনকী মিলতে পারে চাকরিও। প্রতিশ্রুতি মুখ্যমন্ত্রীর।
[হনুমানের মতো দেখতে ছাগলছানা, চতুষ্পদের অদ্ভুত দর্শনে মেলা লোক ]
সোমবার পশ্চিম বর্ধমানের প্রশাসনিক সভা থেকেই এই বার্তা দেন মুখ্যমন্ত্রী। রাজ্যে দাঙ্গা রুখতে দ্বিমুখী কৌশল নেন মুখ্যমন্ত্রী। একদিকে তিনি সতর্ক করেন প্রশাসন ও পুলিশকে। জানান, থানায় থানায় নজরদারি আরও বাড়াতে হবে। সাধারণ মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে হবে পুলিশকে। কোথাও কেউ কোনও অসুবিধায় পড়ছেন কিনা, তা খেয়াল রাখতে হবে। জনসংযোগ বাড়িয়েই দাঙ্গা রোখার ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। অভিযুক্তকে চিহ্নিত করতে হবে। মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ, বিজেপি-আরএসএস চক্রান্ত করে রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে দাঙ্গা ছড়াচ্ছে। সম্প্রতি হাবরা থেকে যারা ধরা পড়েছে তারা ওই দলের লোক বলেই উল্লেখ করেন মুখ্যমন্ত্রী। দাঙ্গা বাধিয়ে রাজ্যে অশান্তি তৈরি করার ব্যাপারটি বারবারই বলে আসছেন মুখ্যমন্ত্রী। একাধিক প্রশাসনিক সভায় এ ব্যাপারে বার্তা দিয়েছেন। সতর্ক করেছেন আধিকারিক ও পুলিশদের।
[পুলিশ পিটিয়ে অভিযুক্তকে ‘ছিনতাই’ গ্রামবাসীদের, তৃণমূল-বিজেপি সংঘর্ষ ]
তবে এবার আরও এক অস্ত্রে ধার দিলেন তিনি। এবার তাঁর হাতিয়ার সাধারণ মানুষ। যে মানুষ দাঙ্গার শিকার হন, সেই আম আদমিকেই দাঙ্গা রোখার ভার দিলেন তিনি। এদিন রাজ্যের জনসাধারণের উদ্দেশ্যে তাঁর বার্তা, দাঙ্গাবাজদের রুখতে এগিয়ে আসতে হবে এলাকার বাসিন্দাদের। সমস্ত নাশকতা ও চক্রান্তের আঁচ তাঁরাই আগে পান। সে কথা যেন তাঁরা প্রশাসনকে জানান। দাঙ্গাবাজদের চিহ্নিত করে, ছক বানচাল করেন। এর ইনাম হিসেবে অর্থ পুরস্কার পাবেন তাঁরা। সেই সঙ্গে চাকরি দেওয়ারও আশ্বাস দেন তিনি। সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা রুখতে মানুষকেই পুরো প্রক্রিয়ায় শামিল করলেন তিনি। একদিকে প্রশাসন ও অন্যদিকে আম আদমি- দুদিক থেকেই দাঙ্গা রোখার বন্দোবস্ত করলেন মুখ্যমন্ত্রী।
[ এখনও অধরা বাঘ, নতুন করে আতঙ্ক ছড়াল পশ্চিম মেদিনীপুরের ধেড়ুয়ায় ]
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের ধারণা, বিজেপির আগ্রাসন আঁচ করেই আটঘাট বেঁধে নামছেন মমতা। সামনে পঞ্চায়েত ভোট। তার আগে জেলাগুলি চষে ফেলছেন মুখ্যমন্ত্রী। সাধারণ মানুষের অভাব অভিযোগ শুনছেন। সুরাহার বন্দোবস্ত করছেন। কোথাও প্রকাশ্যেই তাঁর কাছে ধমক খাচ্ছেন প্রশাসনিক আধিকারিকরা। বাদ যাচ্ছেন না জনপ্রতিনিধিরাও। এতে মুখ্যমন্ত্রী ও তাঁর প্রশাসনের উপর আস্থা আরও বাড়ছে জনতার। পাশাপাশি দাঙ্গা নিয়ে যে আশঙ্কা, তাতে পুলিশেক কাছে যেতে অনেক সময়ই ভয় পান মানুষ। কিন্তু এখন মানুষের হাতেই সেই দায়িত্ব দিয়ে, তাঁদের অনেকটা নির্ভয় করে তুললেন মমতা। সিটিজেন পুলিশের নীতিতেই জোর দিলেন। এতে সুশাসনের দায়িত্ব শুধু আধিকারিকদের উপর বর্তায় না, মানুষের উপরও চলে আসে। ফলে প্রশাসন ও রাজ্যের প্রতি মানুষের দায়বব্ধতা অনেক বাড়ে। সেইসঙ্গে চাকরি ও অর্থ পুরস্কারের ঘোষণা এ কাজ করতে অনেক বেশি উদ্যোগী করে তুলবে মানুষকে। তবে পাশাপাশি আরও একটা আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে। অতীতে এই সিটিজেন পুলিশ নীতির প্রয়োগ করেছিলেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথও। কিন্তু তাতে হিতে বিপরীত হয়েছে। বাড়বাড়ন্ত হয়েছে নীতি পুলিশের। বিরূপ ঘটনাও ঘটেছে। মুখ্যমন্ত্রীর এই ঘোষণার পর গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব যেখানে আছে, সেখানে একে অন্যের প্রতি বদলা নেওয়ার প্রবণতা বাড়তে পারে বলেও কেউ কেউ মনে করছেন। সেক্ষেত্রে আরও বেশি সতর্ক থাকতে হবে প্রশানকে। নচেৎ এ সাধু উদ্যোগও মাটি হতে পারে বলে এমন মতও ঘুরছে রাজ্য রাজনীতিতে।