নিজের বাড়িতে দীপজ্যোতি।
রাজ কুমার, আলিপুরদুয়ার: মা-ছেলের, মেয়ের সংসারে নিত্য আর্থিক অনটন। বাবা দুরারোগ্য ক্যানসার রোগে আক্রান্ত ছিলেন। আর্থিক কারণে সেভাবে চিকিৎসা করা সম্ভব হয়নি। করোনাকালে মারা যান বাবা। সেসময় ডাক্তার হওয়ার লক্ষ্য ঠিক করেছিল দীপজ্যোতি। সেই পথেই আরও অনেক ধাপ এগিয়ে গেল আলিপুরদুয়ার শহরের দীপজ্যোতি সরকার। সর্বভারতীয় নিট পরীক্ষায় ৭২০ নম্বরের মধ্যে সে পেয়েছে ৫১২। সর্বভারতীয় স্তরে তার র্যাঙ্ক ৩৯,৪১৩। রাজ্যে ৯১৪ নম্বর স্থানে আছে সে।
ছোট থেকেই অত্যন্ত মেধাবী দীপজ্যোতি। প্রথম থেকে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত পূর্ব শান্তিনগর প্রাথমিক স্কুলে পড়েছে সে। তারপর ভর্তি হয় ম্যাক উইলিয়াম হাইস্কুলে। ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ার সময়ই বারোবিশার জওহর নবদয় বিদ্যালয়ে সে পড়ার সুযোগ পায়। সেই স্কুল থেকেই তারপর পড়াশোনা। সেখান থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকে ৯০ শতাংশের উপর নম্বর পেয়েছে দীপজ্যোতি। বাবার মৃত্যুর পর থেকেই মনের মধ্যে ডাক্তার হওয়ার সংকল্প করেছিল সে। সেই লক্ষ্যেই পড়াশোনা চালাতে থাকে।
বাবা ছিলেন পেশায় রাজমিস্ত্রী। কর্মসূত্রে থাকতেন কেরালায়। দীপজ্যোতি তখন দশম শ্রেণির ছাত্র। বাবার ক্যানসার ধরা পড়েছে। সেই কথা জানা যায়। চিকিৎসার সামর্থ তাঁদের ছিল না। একপ্রকার বিনা চিকিৎসাতেই সংসারের একমাত্র রোজগেরে মারা গিয়েছিলেন। তেমনই জানিয়েছেন দীপজ্যোতির মা সরস্বতী দাস সরকার। তারপর থেকেই ছেলের মধ্যে চিকিৎসক হওয়ার জেদ বেড়ে গিয়েছিল বলে মা জানিয়েছেন। তার জেদের কাছে কোনও প্রতিকূলতাই বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি। টানা এক বছরের জন্য নিট পরীক্ষার পড়াশোনার জন্য পুণেতে থেকেছে দীপজ্যোতি। একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের মাধ্যমে সে পড়াশোনা করে। সেজন্য তাকে কোনও অর্থ খরচ করতে হয়নি।
স্বামীর মৃত্যুর পর সেলাইয়ের কাজ শুরু করেন সরস্বতী দাস সরকার। দীপজ্যোতির বোন স্কুলে পড়াশোনা করে। ছেলেমেয়ের পড়াশোনা সামলে সংসার চালাচ্ছেন তিনি। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত পরিশ্রম করেন তিনি। মা চান, ছেলে সফল চিকিৎসক হোক। আজ, রবিবার তার এই সাফল্যের জন্য দীপজ্যোতিকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। দীপজ্যোতির কথায়, “টাকার অভাবে বাবার চিকিৎসা করাতে পারিনি। সে কারণে আরও বেশি করে চাইতাম, যাতে ডাক্তার হতে পারি।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.