টিটুন মল্লিক, বাঁকুড়া: ছোট থেকেই কঠিন অঙ্ক অবলীলায় কষে ফেলাটা জলভাত। সঙ্গে জ্যামিতি ও পদার্থবিদ্যার প্রতি টান। আর রয়েছে মহাকাশের অমোঘ আকর্ষণ। কীভাবে মহাশূন্যে পৃথিবীটা একটা বলের মতো ভেসে রয়েছে, সেই রহস্য বুঝতে বুঝতেই মহাকাশকে আবর্জনা মুক্ত করার একটি গবেষণা প্রকল্প বানিয়ে ফেলেছে বাঁকুড়া ডিএভি স্কুলের দ্বাদশের পড়ুয়া অয়ন দেওঘরিয়া। সমাজ মাধ্যমের দৌলতে যা তাবড় সব মহাকাশ বিজ্ঞানীদের নজর এড়ায়নি। নভেম্বরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আলাবামায় আন্তর্জাতিক মহাকাশ বিজ্ঞান সম্মেলনে ডাক পেয়েছে বাঁকুড়ার ছাতনার মন্তুমুড়া গ্রামের অয়ন।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে মহাকাশে পাঠানো রকেট, মহাকাশ স্টেশন ও অসংখ্য কৃত্রিম উপগ্রহের যন্ত্রাংশ অনন্তকাল ধরে মহাকাশে ভেসে বেড়াচ্ছে। সে সব বর্জ্যের হাত থেকে মহাকাশকে মুক্ত করতেই অয়নের গবেষণাপত্র আন্তর্জাতিক মহাকাশ গবেষকদেরও নজর কেড়েছে। চলতি বছরের ১১ থেকে ১৫ নভেম্বর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আলবামা শহরে ইউনাইটেড স্টেট স্পেস অ্যান্ড রোবট সেন্টারে ওই সম্মেলনে অয়নের গবেষণাপত্র খতিয়ে দেখবেন বিশ্বের তাবড় বিজ্ঞানীরা।
আন্তর্জাতিক স্তরের এই মহাকাশ বিজ্ঞান সম্মেলনে এই খুদে গবেষক আমন্ত্রণ পাওয়ায় তার পরিবার-সহ বাঁকুড়াবাসী (Bankura) উচ্ছ্বসিত। অয়নের পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০২৩ সালে অয়নের মহাকাশ গবেষণার প্রকল্প দেরাদুন ইউনিভার্সিটি অফ পেট্রোলিয়াম অ্যান্ড এনার্জি আয়োজিত ন্যাশনাল স্পেস কনভেনশনে স্বীকৃতি পায়। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে বাঁকুড়ার এই খুদে গবেষকের ওই প্রকল্পই গোয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে (Goa University) অনুষ্ঠিত ন্যাশনাল স্পেস সায়েন্স সম্মেলনে আলোচিত হয়েছে। এর পরেই আগামী ১১ থেকে ১৫ নভেম্বর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আলাবামায় ইন্টারন্যাশনাল এয়ার অ্যান্ড স্পেস প্রোগ্রামে ডাক পেয়েছে ডিএভি স্কুলের দ্বাদশের এই পড়ুয়া।
এই খবর ছড়াতেই জেলাজুড়ে শোরগোল পড়ে গিয়েছে। অয়ন বলছেন, “নাসার স্বীকৃতি মিললে তবেই সফল হবে এই গবেষণা। আলাবামায় অনুষ্ঠিত ওই বিজ্ঞান সম্মেলনে বিশ্বের তাবড় বিজ্ঞানীদের কাছে পেশ করা হবে আমার গবেষণাপত্র। আমার গবেষণা পছন্দ হলে নাসার ইউনাইটেড স্পেস অ্যান্ড রকেট সেন্টারে পাঠান হবে। নাসার স্বীকৃতি মিললেই সফল হবে গবেষণা।”
অয়নের কথায়, “মহাকাশে অরবিটের বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন তাপমাত্রা রয়েছে। সেই স্পেস সেন্টারগুলির গতিবেগ কমিয়ে সেগুলিকে পৃথিবীতে নামিয়ে আনার গাণিতিক পদ্ধতিগুলি জ্যামিতি ও পদার্থবিদ্যার জটিল সব সূত্রের উপরেই নির্ভরশীল। এই বিষয়টিকেই বলে কোর্ডিনেট জ্যামিতি।” অয়নের বাবা কল্যাণাশিস একটি বেসরকারি সংস্থার চাকুরে। তিনি বলছেন, “ছেলের এই সাফল্যে আমরা খুশি। তবে আমেরিকার আলাবামায় ওই মহাকাশ বিজ্ঞান সম্মেলনে যাওয়ার খরচ অনেক। মধ্যবিত্ত পরিবারে কাজেই সহৃদয় কোনও সংগঠন যদি এগিয়ে আসেন তাহলে ছেলের স্বপ্নপূরণ হতে পারে।” অয়নের মা শিপ্রা দেওঘরিয়া গৃহবধূ। শিপ্রাদেবী ছেলের এই সাফল্য নিয়ে স্বপ্ন দেখেন। তিনিও আশঙ্কা করছেন খরচের কারণে আলাবামায় ওই সম্মেলনে না যেতে পারলে ছেলেটার এত পরিশ্রম ব্যর্থ হবে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.