নিজস্ব সংবাদদাতা, বহরমপুর ও ফরাক্কা: নির্মল বাংলা মিশনে জেলায় জেলায় পাকা শৌচাগার করতে সরকারি ও বেসরকারি স্তরে প্রচারের শেষ নেই। কয়েকবছর ধরে লাগাতার প্রচারের জেরে ধীরে ধীরে চোখ খু্লছে গ্রামবাসীদের। স্বাস্থ্যরক্ষার পাশাপাশি বাড়িতে পাকা শৌচাগার যে এলাকায় সম্ভ্রমরক্ষারও একটি সূচক তা এবার গ্রামের গরিবগুর্বো মানুষগুলি বুঝতে পারছে। তাই তো কখনও জামাইকে শ্বশুর শৌচাগার উপহার দিয়ে গ্রামে নজির গড়ছেন আবার রান্নাঘর না হলেও নিজের সোনার কানের দুল বেচে পাকা শৌচাগার বানিয়ে এলাকায় তাক লাগিয়ে দিচ্ছেন গৃহবধূ। মুর্শিদাবাদের বেলডাঙ্গায় যেমন জামাইবাবাজিকে শৌচাগার উপহার দিয়েছেন শ্বশুর। শ্বশুরের কাছ থেকে নগদ ৩০ হাজার টাকা পেয়ে ইতিমধ্যেই বাড়িতে শৌচাগারের কাজও শেষ করে ফেলেছেন জামাই। আবার মুর্শিদাবাদেরই সাগরদিঘিতে ছ’জনের টানাটানির পরিবারে সম্মান বাঁচাতে গৃহবধূ শৌচাগারের জন্য নিজের কানের দুল বেচেছেন।
[টাগের্ট বাংলার বৌধ্য গুম্ফা, মুর্শিদাবাদে ৮০ যুবক নিয়োগ জেএমবি’র]
বেলডাঙায় ফেরিওয়ালা শ্বশুর তাঁর দরিদ্র জামাইকে শৌচাগার উপহার দিয়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। কয়েকদিন আগে বেলডাঙ্গা ২ নং ব্লকের দাদপুরের বকুলতলা গ্রামের বাসিন্দা জামাই মিঠুন শেখকে শ্বশুর হাফিজুর মল্লিক ৩০ হাজার টাকা দেন। জামাই সেই টাকা পেয়ে বাড়িতে শৌচাগারের কাজও প্রায় শেষ করে ফেলেছেন। এবিষয়ে মিঠুনের শ্বশুর হাফিজুর মল্লিক জানান, ছয় বছর আগে তাঁর মেয়ে হাসিনার বিয়ে হয়। বেলডাঙায় তাঁর বাড়ি হলেও তিনি আসানসোলের গ্রামে গ্রামে জিনিস ফেরি করে বেড়ান। বিয়ের সময় জামাইকে সাইকেল ও মেয়েকে কিছু সোনার গয়না ছাড়া কিছুই দিতে পারেননি। হাসিনা এখন চার সন্তানের জননী। ‘ক’দিন ধরেই মেয়েটা বাড়িতে শৌচাগার বানাবে বলে বায়না ধরেছে। গ্রামের লোকের কাছে মান-সম্মান বাঁচাতে তাই জামাইকে তিরিশ হাজার টাকা দিয়েছি’, জানিয়েছেন হাফিজুর।
অন্যদিকে জামাই মিঠুন শেখ জানিয়েছেন, শ্বশুরের মতো সেও পেশায় ফেরিওয়ালা। গরিবের সংসারে দু’বেলা দু’মুঠো ভাত জোটে। শৌচাগার করার পয়সা কোথায়? তাই পরিবারের স্বার্থে শ্বশুরের থেকে টাকা নিয়ে বাড়িতে পাকা শৌচাগার বানিয়েছেন। বেলডাঙা ২ নং ব্লকের বিডিও সমীর রঞ্জন মান্না জানান, বিষয়টি সত্যিই প্রশংসার যোগ্য। গরিব হলেও সচেতনতা যে রয়েছে তা মিঠুনের শ্বশুরকে দেখেই বোঝা যায়। অন্যদিকে, মুর্শিদাবাদের জেলাশাসক পি উলগানাথন জানান, এমাসের মধ্যেই নির্মল জেলা হিসেবে মুর্শিদাবাদকে ঘোষণা করা হবে।
[আহত চালকের ক্ষতিপূরণ না পেয়ে মালিকের ৩টি ট্রাক আটক, চাঞ্চল্য ওদলাবাড়িতে]
এদিকে মুর্শিদাবাদ জেলার জঙ্গিপুর মহকুমার মধ্যে সাগরদিঘি, সুতি এক ও দুই এবং সামশেরগঞ্জ ব্লক নির্মল বাংলা প্রকল্পে শৌচাগার নির্মাণে পিছিয়ে রয়েছে। সেখানে টানাটানির সংসারে নিজের সোনার দুল বিক্রি করে পাকা শৌচাগার তৈরি করেছেন সাগরদিঘির বাসিন্দা শ্যামলী মণ্ডল। ছয় জনের অভাবী পরিবার। স্বামী ফুচকা বিক্রেতা। বাড়িতে কোনও শৌচালয় না থাকায় মহিলারা অসম্মান বোধ করতেন। ঘরের লক্ষ্মী এভাবে সোনার গয়না বেচে শৌচাগার তৈরি করায় গোটা গ্রাম শ্যামলীদেবীর প্রশংসায় পঞ্চমুখ। শ্যামলী মণ্ডল জানান, ছয় আনা সোনার দুই জোড়া কানের দুল বিক্রি করে শৌচাগার বানিয়েছি। তবে এখনও রান্নাঘর তৈরি করতে পারিনি। ফলে বাড়ির বাইরে খোলা আকাশের নিচে রান্না করতে হচ্ছে। সরকারের তরফ থেকে যে প্রচার অভিযান চালানো হয় তাতে আমরা অনেক সচেতন হয়েছি এবং বুঝতে শিখেছি বাইরে মল-মূত্র ত্যাগ করার ক্ষতিকারক দিক রয়েছে। তাই রান্নাঘর বানানোর আগেই পাকা বাথরুম তৈরি করেছি।”