Advertisement
Advertisement

Breaking News

Mamata

উন্নয়নের দিশারী মমতাই, কথা রাখেননি বিজেপির বার্লা, বলছেন চা শ্রমিকরা

চা-সুন্দরীতেই বাজিমাত। আশায় আলিপুরদুয়ারের তৃণমূল প্রার্থী প্রকাশ চিক বরাইক।

Tea tribes places trust on Mamata's development
Published by: Suchinta Pal Chowdhury
  • Posted:April 10, 2024 2:14 pm
  • Updated:April 10, 2024 2:14 pm

ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়: বক্সার জঙ্গলের কিছু আগে মাঝেরডাবরি টি এস্টেট। রাস্তা পার করে উল্টোদিকে জঙ্গলের বুক চিরে রেললাইন। কারখানার ভিতরে যখন পা রাখলাম ফাস্ট শিফটের কাঁচামালের প্রসেসিং সবে শুরু হয়েছে। রোদ লাগা বাগান-জঙ্গলের গন্ধটা কারখানার ভিতরেও। বাগান থেকে তুলে আনা রাশি রাশি চা পাতার গন্ধ। শুকনোর কাজ চলছে। পিছনেই লেবার বস্তি। ওদিকের রাস্তাটাই ঘুরে এসে এদিকে মিশেছে। শ্রমিকদের বলা কথাগুলো সবে মগজে থিতু হচ্ছে।

সঙ্গে সঙ্গেই আরেক দফা কানে এসে লাগল পাতার প্রসেসিংয়ে রাক্ষসাকার ফ্যানের ব্লেডের আওয়াজ। মাঝেমাঝেই ফরফরিয়ে পাতা উড়িয়ে দিচ্ছেন কারখানার শ্রমিকরা। এটাই প্রক্রিয়া। নায়কের সেই টাকার সিনটা মনে পড়ছে! বছরভর কেমন প্রোডাকশন হয়? ‘গত বছর শুধু গুঁড়ো চা বেরিয়েছে ১৬ লাখ ৫৬ হাজার কেজি। বছরের শুরুতে প্রিমিয়াম কোয়ালিটি বেরিয়েছে আরও ১০-১২ হাজার। এবার হিসাব করুন।’ —–নাগাড়ে বলে গেলেন কারখানার অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার কেশব দাস।

Advertisement

[আরও পড়ুন: বিজেপি-তৃণমূলের লড়াইয়ে নেপোয় মারে দই! দলীয় কার্যালয় থেকে চেয়ার নিয়ে চম্পট চোরের]

ছোটখাটো শরীরে সাহেবসুলভ হাফ প্যান্টের সঙ্গে টিশার্ট। নানা জায়গায় চায়ের গুঁড়ো লেগে। সদা হাসিমুখ, এ লাইনে ১৪ বছর। প্রতি পরতে চায়ের পাতা আর গুঁড়ো হাতে মেপে নেন। আর বাগানের শ্রমিকরা? ‘ঘুরে দেখেছেন তো বাগানটা? শ্রমিকরা কী বলল?’ –গোটা কারখানা ঘুরিয়ে বাজারজাত চা কীভাবে নানা প্রক্রিয়ায় তৈরি হয়, সেসব দেখিয়ে পাল্টা প্রশ্নটা করলেন। মনে পড়ল, একটু আগে পাড়ার মোড়ে দুই প্রজন্মের যে ৪-৫ জন শ্রমিকের সঙ্গে কথা বলে এলাম তাঁরাও একইভাবে পরতে পরতে মেপে হিসাব দিচ্ছিলেন জন বার্লা কী করেছেন, স্থানীয় বিধায়ককে কতদিন দেখেছেন! তার সঙ্গে সঙ্গে একেকটা করে বাড়ির অ্যাসবেস্টাসের চাল দেখিয়ে বলছিলেন, এই মাস কয়েক আগে রাজ্য সরকারের দেওয়া পাট্টার টাকায় কে কে বাড়ি মজবুত করেছে। হ্যাঁ, টাকা সবাই এখনও পায়নি। তবু এর ফাঁকেই কেউ মনে করিয়ে দিয়েছেন তাঁর পরিবার লক্ষ্মীর ভাণ্ডার পেয়েছে।

Advertisement

ছেলেটির বাবা আবার বলে দিলেন, এই এপ্রিল থেকে কিন্তু টাকাটা বেড়েছে, দেখে নিস। সঙ্গে সঙ্গে এই প্রতিবেদককে তাঁদের প্রশ্ন, ‘‘বলুন তো মমতাদি তো এত দিল। বিনা পয়সার চাল পাচ্ছি রেশনে। কিন্তু বার্লা আমাদের কী দিয়েছে? কত বড় বাড়ি করেছে সে। ৫ বছরে একবারও কেউ দেখেছে তাকে?’’ এটাই চা সুন্দরী প্রকল্প। ৪ ডেসিমেল জমি, শ্রমিকদের পাট্টা, আর পাঁচিল-ছাদ তুলতে ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা। এতেই যেন চেহারা ঘুরে গেছে চা বাগানগুলোর। এবার কি তারই ছবি পড়বে ভোটে? বাগানের ম্যানেজার চিন্ময় ধরের কথায়, ‘‘মানুষ ভোট দিক। শান্তিতে ভোটটা হোক। শ্রমিকরা ভালো থাকুক। এটুকুই চাওয়া।’’

[আরও পড়ুন: প্রথমে ৩৫, পরে ২৫, এখন ৩০, বাংলায় বিজেপির টার্গেট কত? বিভ্রান্ত শাহ নিজেই]

আলিপুরদুয়ারের বাগানে বাগানে এবার এরকমই হিসাব-কিতাবের পালা। এখানে বিজেপি প্রার্থী মাদারিহাটের বিধায়ক মনোজ টিগ্গা আর তৃণমূল প্রার্থী রাজ্যসভার সাংসদ প্রকাশ চিক বরাইক। কে এগিয়ে? সপ্তাহে একবার করে কালচিনির এ তল্লাটে হাট বসে। সেই ফাঁকা হাটের দিকে তাকিয়ে বছর ৫৩-র এক শ্রমিকের বক্তব্য, ‘‘কিছু বলা যাচ্ছে না। জনকে তো কোথাও দেখি নাই, শুনলেন। আর এবার আমাদের প্রকাশ দাঁড়িয়েছে। ও তো কবে থেকে কাজ করছে।’’জনের সঙ্গে কী? বিজেপির প্রার্থী তো মনোজ। ‘‘সে আর কী করবে? ভালো মানুষ। যা করার তো করে রেখেছে বার্লা।’’ –চিড়বিড়িয়ে ওঠেন তিনি। যেন মনোজ কিচ্ছু না। ইস্যু বার্লা। 

বাগান থেকে বেরিয়ে রাজভাতখাওয়া আরও ২৫-৩০ মিনিট। সেখানে বনবস্তির কাছেই হোটেলে ভাত খেতে ঢুকেছিলেন কজন বিজেপির কর্মী। কাছেই তাঁদের মণ্ডলের বৈঠক চলছে। কালচিনি, মাদারিহাটেও চলছে। প্রধানমন্ত্রীর তাড়নায় বার্লাও নেমেছেন টিগ্গার সঙ্গে। তবু টিগ্গার মুখে হাসি নেই। পাশের রাস্তায় বলাবলি, ‘‘হাসি থাকবে কী করে! বার্লা তো মন থেকে নামে নাই।’’ বার্লা আবার দোষ দিচ্ছেন সংবাদমাধ্যমকে। সবই নাকি বানানো গল্প। সে ঠিকই প্রচার করে চলেছে ভিতরে ভিতরে।

ওদিকে এ বাগান সে বাগান ফুঁড়ে বেড়াচ্ছেন প্রকাশ। আড়াই লাখের বেশি ভোটের ব্যবধান। হাসিমারা, কালচিনি, বীরপাড়া দফায় দফায় ছুটছে। শেষ দফায় ঢুকবেন শহরে। শীত পেরিয়ে ফার্স্ট ফ্লাশের চা পাতা তোলা শেষের পথে। প্রিজম-স্বচ্ছ হলদেটে চায়ের মতো তরতাজা ভোট কি পাবে তৃণমূল? প্রকাশ বলেছিলেন, ‘‘আলিপুরদুয়ার এবার আমি বের করে নেব।’’ চা বাগান কি তৈরি হচ্ছে!

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ