বাবুল হক, মালদহ: তিনি শিক্ষারত্ন। স্রেফ সম্মান, পুরস্কারে মাস্টারমশাইকে আটকে থাকতে চাননি। পুরস্কারের অর্থ খরচ করলেন সন্তানসম পড়ুয়াদের জন্য। শিক্ষারত্ন হিসাবে পাওয়া টাকায় স্কুলে বিশুদ্ধ পানীয় জলের ব্যবস্থা করলেন শৈলেশকুমার মণ্ডল। প্রবীণ এই শিক্ষক ঘিরে মালদহবাসীর গর্বের শেষ নেই।
[ক্যানসার দূরে রাখতে তালিকা থেকে বাদ দিন এই ৭ খাবার]
মালদহের ইংরেজবাজারের শ্রীরামপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দীর্ঘ প্রায় ২০ বছর ধরে শিক্ষকতা করেন শৈলেশকুমার মণ্ডল। বর্তমানে তিনিই প্রধান শিক্ষক। বছর ঘুরলেই তাঁর অবসর নেওয়ার পালা। তিল তিল করে ইতিমধ্যেই তিনি ঝাঁ চকচকে স্কুল গড়েছেন। বাইরে থেকে দেখলে মনে হতেই পারে কোনও বেসরকারি মডেল স্কুল। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার জন্য মিলেছে নির্মল বিদ্যালয়ের পুরস্কারও। এবার শিক্ষারত্ন পুরস্কার পেয়েছেন শৈলেশবাবু। পুরস্কার হিসাবে নগদ ২৫ হাজার টাকা পেয়েছেন। তার সঙ্গে নিজের মাইনে থেকে আরও ৫ হাজার টাকা দিয়ে মোট ৩০ হাজার টাকা খরচ করে স্কুলেই পড়ুয়াদের জন্য একটি বিশুদ্ধ পানীয় জলের জলাধার তৈরি করে দিলেন তিনি।
[রহড়ায় মাশরুম-ম্যাজিক! ছাতুর ছোবলে নিকেশ ক্যানসার]
পড়ুয়াদের পাশাপাশি স্থানীয় দরিদ্র মানুষজনও সেই পানীয় জল ব্যবহার করতে পারবেন। প্রধান শিক্ষকের এই উদ্যোগে যারপরনাই খুশি খুদে পড়ুয়া থেকে শুরু করে এলাকার বাসিন্দারাও। শ্রীরামপুর গ্রামের বাসিন্দারা জানান, শৈলেশবাবু লেখাপড়ার পাশাপাশি সর্বদা নজর রেখেছেন খুদে পড়ুয়াদের স্বাস্থ্যের দিকেও। ইংলিশবাজার ব্লকের কাজিগ্রাম গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রত্যন্ত এলাকায় এই শ্রীরামপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়। কিছুটা পাকা ও কিছুটা কাঁচা পথ পেরিয়ে এই স্কুলে পড়তে আসে এলাকারই ১৩৫ জন খুদে পড়ুয়া। এই স্কুলেই দীর্ঘ ২০ বছর ধরে শিক্ষকতা করেন সদ্য শিক্ষারত্ন পুরস্কার প্রাপ্ত শিক্ষক শৈলেশকুমার মণ্ডল। এখানে মোট ছ’জন শিক্ষক রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে দু’জন পার্শ্বশিক্ষক। এই স্কুলে আর্সেনিকমুক্ত পানীয় জলের ব্যবস্থা ছিল না। আয়রনযুক্ত টিউবওয়েলের জলই পান করতে হত পড়ুয়াদের। প্রধান শিক্ষক শৈলেশবাবুর আক্ষেপ একটাই, প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদের অফিস থেকে শুরু করে জেলার সর্বোচ্চ আধিকারিক, এমনকী জেলার নেতা-মন্ত্রীদের কাছে দরবার করেও তিনি বিশুদ্ধ পানীয় জলের ব্যবস্থা করতে পারেননি। অবশেষে নিজের পুরস্কারের টাকা দিয়েই সেই ঘটতি পূরণ করে তিনিও খুশি।
[১০০ টাকা কিলো, তবুও এই বেগুন চাই মালদহবাসীর]
শ্রীরামপুর এলাকার বাসিন্দা মালা মণ্ডল, মেনকা মণ্ডলদের কথায়, “এলাকায় আর্সেনিকমুক্ত জল না থাকায় আমাদের টিউবওয়েলের আয়রনযুক্ত জল খেতে হত। আমাদের স্কুলের মাস্টার মশায় আর্সেনিক মুক্ত জলের ব্যবস্থা করে দিলেন। আমরা তাঁর কাছে কৃতজ্ঞ থাকব।” শৈলেশবাবুর এমন উদ্যোগে সমৃদ্ধ সহকর্মীরা। তাঁরা বলছেন শেখার যে কেন শেষ নেই তা এই মাস্টারমশাইকে দেখলে বোঝা যায়।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.