নিজস্ব সংবাদদাতা, বনগাঁ: পুলওয়ামায় জঙ্গি হামলার পর জওয়ানদের নিয়ে ফেসবুকে ব্যক্তিগত মতামত লিখেছিলেন এক স্কুল শিক্ষক। তবে বিতর্ক শুরু হতেই পোস্টটি মুছে দেন তিনি। তা সত্ত্বেও বনগাঁর ওই শিক্ষকের বাড়িতে চড়াও হয়ে ভাঙচুর চালানোর অভিযোগ উঠল স্থানীয় জনা কয়েক যুবকের বিরুদ্ধে। এসব নিয়ে অশান্তির জেরে স্কুলের চাকরি ছাড়তে বাধ্য হলেন শিক্ষক চিত্রদীপ সোম। এনিয়ে তাঁর অভিযোগ, পোস্ট নিয়ে তাঁর যুক্তি পুরোপুরি না পড়েই তাঁর বিরুদ্ধে এমন কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হল।
[রুটিন মেনে ষষ্ঠ দিনে ফাঁস, সোশ্যাল মিডিয়ায় মাধ্যমিকের ভৌতবিজ্ঞান প্রশ্ন]
বৃহস্পতিবার কাশ্মীরে সিআরপিএফ কনভয়ে ভয়ঙ্কর জঙ্গি হামলার পর উত্তর কলকাতার এক নামী স্কুলের শিক্ষক চিত্রদীপ সোম নিজের ফেসবুক প্রোফাইলে লিখেছিলেন, তিনি সেনা জওয়ানদের ‘শহিদ’ বলার পক্ষপাতী নন। এর স্বপক্ষে যুক্তি দিয়ে তিনি নিজের মতামত জানিয়েছিলেন। এরপর তাঁর এই পোস্টের বিরোধিতায় মন্তব্য করেন বহু মানুষ। আরও উসকে ওঠে বিতর্ক। এরপর রবিবার তাঁর বিচুলিহাটার বাড়িতে চড়াও হয়ে একদল যুবক ভাঙচুর করে বলে অভিযোগ। সন্ধের পর ফের তাঁর বাড়িতে দফায় দফায় চড়াও হয় এলাকার যুবকরা। বাড়ির সামনের রেলিং, কাচের জানলা, লাইট ভেঙে দেয় বলে অভিযোগ৷ ঘটনার পর তাঁর বাড়িতে তালা দিয়ে পালিয়ে যায়। ঘটনার পর শিক্ষক চিত্রদীপ সোম অভিযোগ তোলেন, “আমাকে মারধর করে জোর করে ক্ষমা চাওয়ানো হয়েছে৷ জোর করে ‘ভারত মাতা কি জয়’ বলানো হয়েছে।” এসব তাণ্ডবের জেরে রাতেই বনগাঁ থানায় এসে বিস্তারিত জানিয়ে অভিযুক্তের গ্রেপ্তারের দাবি তোলেন চিত্রদীপ। এমনিতেই এসব ঘটনার জেরে বাড়তি সতর্ক রাজ্য প্রশাসন। মুখ্যমন্ত্রী সাংবাদিক বৈঠক করে নির্দেশ দিয়েছেন, কোথাও কোনওরকম অবাঞ্ছিত ঘটনা ঘটলে, দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে। সেই নির্দেশ মেনেই শিক্ষক চিত্রদীপের বাড়ির সামনে পুলিশ প্রহরা বসানো হয়েছে। ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে বনগাঁ থানার পুলিশ।
[বাড়ির চৌহদ্দিতেই ৪ কুকুরছানাকে বিষ খাইয়ে খুনের চেষ্টা!]
কিন্তু এখানেই থেমে নেই সবটা। এরপর মঙ্গলবার তাঁর কর্মক্ষেত্র উত্তর কলকাতার নামী স্কুলের তরফে সোশ্যাল মিডিয়ায় চিত্রদীপের মতামতের বিরোধিতা করে পোস্ট দেওয়া হয়। জানানো হয়, কর্তৃপক্ষ শিক্ষক চিত্রদীপ সোমের মতামতের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে। তাঁরা ভারতীয় সেনাবাহিনীর আত্মত্যাগের জন্য গর্বিত। সেই পোস্টেই জানানো হয়, চিত্রদীপ স্কুল শিক্ষকের পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন।
পুলওয়ামা হামলার পর থেকেই জঙ্গি বিরোধী নানা প্রতিক্রিয়া ছড়িয়ে পড়ছে। পাকিস্তানকে যথাযথ জবাব দেওয়ার দাবি উঠছে সব মহলে। সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ছে একাধিক মতামত। আর এসবের মাঝেই উসকে উঠছে কট্টরবাদী মনোভাব। সোশ্যাল মিডিয়ায় কোনও অন্যরকম মতামত পেশ করা হলেই, তা নিয়ে শোরগোল পড়ে যাচ্ছে। ওই ব্যক্তিকে খুঁজে বের করে চড়াও হচ্ছে একদল কট্টরবাদী। যেনতেনভাবে হেনস্তা করার অভিযোগ উঠছে। কোথাও কোথাও বাড়ির বয়স্কদের প্রতিও রূঢ় আচরণ করা হচ্ছে। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে এধরনের হেনস্তার ঘটনার অভিযোগ পাওয়া মাত্রই সক্রিয় হয়েছে পুলিশ। সেইমতো চিত্রদীপের সুরক্ষার ব্যবস্থাও করা হয়েছে। কিন্তু এসব সত্বেও নিজের কেরিয়ার নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়ল শিক্ষক চিত্রদীপ সোমের।