Advertisement
Advertisement
Naihati

প্রোমোটারদের ‘কুনজরে’ পণ্ডিত হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর ভিটে! সংরক্ষণের দাবিতে মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি নৈহাটির বিধায়কের

সংস্কৃতি রক্ষায় জোর, পণ্ডিত হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর ভিটেকে 'হেরিটেজ' ঘোষণার দাবি সনৎ দে-র।

TMC MLA appeals to announce 'heritage' of Pandit Haraprasad Shastri's ancestral house in Naihati
Published by: Sucheta Sengupta
  • Posted:January 11, 2025 9:50 pm
  • Updated:January 11, 2025 9:50 pm  

অর্ণব দাস, বারাকপুর: সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের বসতভিটে হিসেবেই নয়, উত্তর ২৪ পরগনা জেলায় গঙ্গা তীরের প্রাচীন জনপদ নৈহাটি আরও নানা কারণে সমৃদ্ধশালী। তার বেশিরভাগটাই শিক্ষা, সংস্কৃতি পরিমণ্ডলে আবৃত। দেশের বহু কৃতী সন্তানের পদধূলি পড়েছে এখানে। তাঁদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন পণ্ডিত হরপ্রসাদ শাস্ত্রী, সাহিত্যিক সমরেশ বসু ও গায়ক শ্যামল মিত্র। নৈহাটিতে সমরেশ বসু ও শ্যামল মিত্রের বসতভিটের একটি ইটের চিহ্নও এখন আর অবশিষ্ট নেই। একমাত্র পণ্ডিত হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর বাড়িটি কোনওক্রমে টিকে রয়েছে নৈহাটি শাস্ত্রী পাড়া রোডে। আর সেই ভিটেকে সংরক্ষণের উদ্যোগ নিলেন নৈহাটির তৃণমূল বিধায়ক সনৎ দে। তাকে হেরিটেজ ঘোষণা করার জন্য মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানালেন তিনি। শনিবার সেই চিঠি সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করতেই অনেকে তাঁকে ধন্যবাদ জানিছেন। পাশাপাশি অনেকে ‘ভারত গৌরব’ হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর বসত ভিটেতে অসাধুচক্রের নজর পড়েছে বলেও অভিযোগ তুলেছে।

বাংলা সাহিত্যের প্রাচীনতম নিদর্শন চর্যাপদের আবিষ্কর্তা পণ্ডিত হরপ্রসাদ শাস্ত্রী যেমন ছিলেন সংস্কৃত বিশারদ, তেমনই ছিলেন ঔপন্যাসিক, পুঁথি সংগ্রাহক, ভারততত্ত্ববিদ। তাঁর উল্লেখযোগ্য রচনা – বাল্মীকির জয়, মেঘদূত ব্যাখ্যা, বেনের মেয়ে, কাঞ্চনমালা, সচিত্র রামায়ণ, প্রাচীন বাংলার গৌরব ও বৌদ্ধধর্ম। এশিয়াটিক সোসাইটির সভাপতি থাকার পাশাপাশি তিনি ১২ বছর বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের সভাপতি এবং লন্ডনের রয়্যাল এশিয়াটিক সোসাইটির সাম্মানিক সদস্য ছিলেন। ১৯১১ সালে ব্রিটিশ সরকার তাঁকে কম্পানিয়ন অফ দ্য ইন্ডিয়ান এম্পায়ার (সিআইই) উপাধি প্রদান করে। স্বনামধন্য এই বঙ্গসন্তানের নৈহাটির বাড়িতে এসেছিলেন পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর।

Advertisement
পণ্ডিত হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর বসতভিটা, নৈহাটির শাস্ত্রী পাড়া রোডে। নিজস্ব ছবি।

সেই ঐতিহ্যমণ্ডিত ইতিহাস সমৃদ্ধ ভবন এখনও রয়েছে। তাকেই ‘হেরিটেজ’ ঘোষণা করার জন্য সম্প্রতি আবেদন জানান সনৎ দে। তৃণমূল বিধায়ক বলেন, “আমরা আগেই হারিয়ে ফেলেছি সাহিত্যিক সমরেশ বসু, গায়ক শ্যামল মিত্র, ব্যারিস্টার পি মিত্র, কেশব সেনের স্মৃতি চিহ্ন। বর্তমানে থাকার মধ্যে রয়েছে পণ্ডিত হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর বাড়ি। তাকে রক্ষা করার উদ্যোগ গ্রহণ করে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি দিয়েছি। আশা করি, সরকার এই বিষয়ে সদর্থক উদ্যোগ গ্রহণ করবে।”

আসলে মাস খানেক আগে থেকে পণ্ডিত হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর এই বাড়িটি প্রোমোটিংয়ের জন্য অনেক অসাধুচক্রের নজরে পড়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এনিয়ে ক্ষোভও উগড়ে দিয়েছিলেন স্থানীয়রা। আর তাঁদের বক্তব্য নিয়ে রাজ্য বিজেপির নেত্রী ফাল্গুণী পাত্রের অভিযোগ, “হরপ্রসাদ শাস্ত্রীজির বাড়ি মানে ইতিহাস। অনেক আগেই সেটি হেরিটেজ ঘোষণা হওয়া উচিত ছিল। সেটাকেও প্রোমোটিং করিয়ে রোজগারের চেষ্টা করছে তৃণমূল। তবে তৃণমূল মানেই সবাই খারাপ নয়। কিছু ব্যক্তি হয়ত চাইছেন, এটি হেরিটেজ হোক। তবে তাদের সংখ্যা, শক্তি খুবই কম।”

বাড়িটিকে প্রোমোটার চক্রের হাত থেকে বাঁচাতে হেরিটেজ ঘোষণার আবেদন তৃণমূল বিধায়কের। নিজস্ব চিত্র।

নৈহাটি পুরসভার চেয়ারম্যান অশোক চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, “নৈহাটি পুরসভা চায় না, ওখানে প্রোমোটিং হোক।” বিধায়কের মত, ”আমরাও চাইছি হেরিটেজ ঘোষণা হোক। তাই, প্রোমোটিংয়ের খবর শোনামাত্রই আমরা পিডব্লিউডি ডিপার্টমেন্টে বিষয়টি অনুসন্ধান করতে পাঠিয়েছিলাম। যারা ওয়ারিশ তারাই বলছে, বাড়িটির ভগ্নদশা। তারাই চায় প্রোমোটিং হোক। কিন্তু পরিবার যদি চায় তাহলে তো আমাদের কিছু করার নেই।”

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement