স্টাফ রিপোর্টার: রাজ্যসভা নির্বাচনে পঞ্চম আসনে প্রার্থী দেবে তৃণমূল কংগ্রেস। এ কথা জানিয়ে দিলেন তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পাশাপাশি তৃণমূলের পাঁচ প্রার্থীর মধ্যে প্রথম প্রার্থীর নামটাও ঘোষণা করলেন মমতা। তিনি বর্তমানে রাজ্যসভার সদস্য নাদিমুল হক। বাকি চার আসনে কারা লড়বেন সময়ে নেত্রী জানাবেন। পঞ্চম আসনে বাম-কংগ্রেস মিলিত প্রার্থী দেয় কি না, সেদিকে নজর রাখছেন তৃণমূলনেত্রী। অঙ্কের বিচারে বাম অথবা কংগ্রেস কারও একার পক্ষে পঞ্চম আসন জেতা সম্ভব নয়। অথচ দু’দল এক হলে এবং সব বিধায়ক একযোগে ভোট দিলে জোটপ্রার্থী জিততে পারেন। কিন্তু প্রশ্ন, বাম-কংগ্রেস জোট কি দুই দলের বিধায়করা মেনে নেবেন? বিধায়কদের মধ্যে যে দোদুল্যমানতা রয়েছে, কে বলতে পারে কাটাকুটির খেলায় এই আসনও তৃণমূল জিতে যেতে পারে। এই ভয় আছে বলেই অরাজনৈতিক মুখকে সামনে আনতে চাইছে বাম-কংগ্রেস পরিষদীয় নেতৃত্বের একাংশ। সেক্ষেত্রে প্রার্থী হিসাবে শোনা যাচ্ছে প্রাক্তন আমলা জহর সরকার ও রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ পুরঞ্জয় গুহঠাকুরতার নাম। তাঁরা আগ্রহী। অর্থাৎ রাজ্যসভা নির্বাচনে ভোটাভুটি হচ্ছেই।
যদিও অধীর চৌধুরি এদিন সরাসরি সিপিএমের সীতারাম ইয়েচুরিকে প্রার্থী হিসাবে চেয়েছেন। মজার কথা হল অধীরের পাশে কংগ্রেস পরিষদীয় দল কতটা আছে তা নিয়ে সন্দেহ। এদিন বিধানসভায় অধীরের বৈঠকে হাজির ছিলেন মাত্র ৯ বিধায়ক। অধীর চারদিন আগে এই বৈঠক ডাকেন। বোঝা যাচ্ছে আবদুল মান্নান বৈঠকে হাজির থাকলেও প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতিকে পাত্তাই দিতে চাইছেন না কংগ্রেস বিধায়করা। এদিন মান্নান দু’জন বিধায়ককে নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর ঘরে গিয়ে দেখা করে আসেন। সিপিএমে এখন সব কিছুই অন্যরকম। দল কোনও প্রার্থীর নাম ঠিক করছে না। কোনও পলিটব্যুরোতেও তা অনুমোদিত হবে না। পরিষদীয় দলকে বলা হয়েছে প্রার্থী ঠিক করে নিতে। এদিকে অধীর চৌধুরি যা-ই বলুন, কংগ্রেসের কে প্রার্থী হবেন সে ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে হাইকমান্ড। অতীতে দেখা গিয়েছে, আবদুল মান্নানের মতো নেতা প্রার্থী হবেন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়েও শেষপর্যন্ত তৃণমূলকে সমর্থন করে হাইকমান্ড। এখন সর্বভারতীয় প্রেক্ষাপট যে খাতে প্রবাহিত হচ্ছে তাতে মমতাকে চটিয়ে সোনিয়া-রাহুল কিছু করবেন, তা ভাবা যাচ্ছে না। যদিও কংগ্রেসে সবই সম্ভব।
বিধানসভায় এখন তৃণমূলের শক্তি ২১৩। বাম ও কংগ্রেস থেকে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন ১০ জন বিধায়ক। তাঁরা এখনও খাতায়-কলমে পুরনো বিধায়কই রয়েছেন। বিজেপির তিন বিধায়ক ভোট দেবেন না। পাহাড়ে নতুন সমীকরণে লাভবান হবে তৃণমূল। মোর্চার তিন বিধায়ক তৃণমূলের পাশেই থাকবেন। পক্ষান্তরে এই মুহূর্তে বামেদের পক্ষে ৩০ ও কংগ্রেসের পক্ষে ৩৪ বিধায়ক রয়েছেন। এদের সবাই দলের হুইপ মানবেন এমন কোনও গ্যারান্টি নেই। ফলে মমতা পঞ্চম আসনে প্রার্থী দেওয়ার কথা ঘোষণা করে রাজ্যসভার ভোট জমিয়ে দিলেন। গতবার এই পাঁচ আসনে তৃণমূলের পক্ষে জিতেছিলেন মুকুল রায়, কুণাল ঘোষ, নাদিমুল হক ও বিবেক গুপ্তা। বামেদের ছিলেন তপন সেন। এবার পরিস্থিতি এমন- মুকুল রায় আগেই পদত্যাগ করেছেন। এখন তিনি বিজেপিতে। মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ীই স্পষ্ট, নাদিমুল হককে বাদ দিয়ে নিশ্চিত ৩ আসনে এবার তিনি অন্য মুখ আনছেন। এর পর পঞ্চম আসন নিজেদের পক্ষে আনার লড়াই। নিজেদের চার প্রার্থীকে জিতিয়ে বাড়তি ভোট ও দ্বিতীয় পছন্দের ভোট ছাড়াও ক্ষুব্ধ বাম-কংগ্রেস বিধায়কদের ভোট যদি তৃণমূলের দিকে চলে যায় তা হলে মমতার পঞ্চম প্রার্থী জিতে যেতে পারেন। আগামী ২৩ মার্চ রাজ্যসভা নির্বাচন। ৫ তারিখ থেকে মনোনয়ন জমা দেওয়া শুরু হচ্ছে। অর্থাৎ আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই প্রার্থীর নাম চূড়ান্ত হয়ে যাবে। স্নায়ুযুদ্ধ তুঙ্গে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.