সন্দীপ মজুমদার, উলুবেড়িয়া: যানজটের ফাঁসে জর্জরিত শহর বাগনানের লাইফ লাইন। জট মুক্তির পথ খুঁজছে শাসকদল। বাগনান বাস টার্মিনাস থেকে শুরু করে স্টেশন রোড এবং ওটি রোড সকাল ও সন্ধ্যায় যানজটে স্তব্ধ হয়ে পড়ে। ঘন্টার পর ঘন্টা ধরে জটের ফাঁসে আটকে পড়ে নাগরিক জীবন। যানজট এমন আকার ধারণ করে যে সাধারণ পথচারীদেরও হেঁটে যাওয়ার উপায় থাকে না। দিন দিন বেড়েই চলেছে এই নরক যন্ত্রণা। তাই ক্ষোভ বাড়ছে সাধারণ মানুষ থেকে নিত্যযাত্রী সকলের। এদিকে মানুষের এই ক্ষোভকেই নির্বাচনে হাতিয়ার করতে চাইছে বিরোধীরা।
[ভরসা নারীশক্তিতে, কংগ্রেসের গড়ে তৃণমূলের তুরুপের তাস স্বনির্ভর গোষ্ঠীর জনপ্রিয় নেত্রী]
পরিসংখ্যান অনুযায়ী বাগনান বাস টার্মিনাসে বর্তমানে প্রায় এক হাজার ছোট গাড়ি চলাচল করে। এর মধ্যে বেশ কিছু গাড়ির বৈধ কাগজপত্র নেই বলে বারবার অভিযোগ উঠেছে। ন’টি বাসরুটে প্রায় ১৬০টি বাস চলাচল করে। এর মধ্যে বাগনান থেকে বর্ধমান, নিউটাউন, শ্যামবাজার ও ধর্মতলা পর্যন্ত চারটি রুট আছে। দিন দিন গাড়ি যেমন বেড়েছে তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে হকার। বাগনান বাস টার্মিনাসের অধিকাংশ জায়গাই এখন বেআইনি হকারদের দখলে চলে গিয়েছে। ছোট গাড়ি আর হকারদের দাপটে বাস টার্মিনাসে পা রাখার জায়গা পাওয়া যায় না। গাড়ি চলাচলের রাস্তাগুলিও সঙ্কীর্ণ হয়ে পড়েছে। কোনও বাস এই টার্মিনাসে প্রবেশ করলে কখন আবার ছেড়ে বের হতে পারবে তা স্বয়ং বিধাতাও বলতে পারবেন না। টার্মিনাসটি এতটাই ঘিঞ্জি হয়ে পড়েছে যে কোনও অগ্নিকাণ্ড ঘটলে শুধু জলের অভাবেই মুহূর্তে ছাই হয়ে যাবে কয়েকশো দোকান। প্রতিদিন তিনটি জেলার প্রায় তিন লক্ষ যাত্রী বাগনান বাস টার্মিনাস হয়ে যাতায়াত করেন। এই তথ্য দিয়েছেন আইএনটিটিইউসি-র বাগনান কেন্দ্র সভাপতি বাপন কাজী। তিনি বাগনানবাসীর জন্য কিছুটা হলেও আশার বার্তা শুনিয়েছেন।
যানজট প্রসঙ্গে বাপন কাজী জানান, এই সমস্যা নিয়ে বাগনানের বিধায়ক রাজা সেনের সঙ্গে পরিবহণ মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীর কথা হয়েছে। পরিবহণ মন্ত্রী বাস টার্মিনাসের জন্য ২২ কোটি টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন। কিন্তু এই মুহূর্তে সরকারের আর্থিক সংকটের কারণে টাকা মঞ্জুর হয়নি। সেই টাকা পাওয়া গেলে বাগনান রেলওয়ে উড়ালপুলের উত্তর ও দক্ষিণে আরও দুটি বাস স্ট্যান্ড হবে। দক্ষিণের স্ট্যান্ড থেকে শ্যামপুর, গাদিয়াড়াগামী সমস্ত যানবাহন চলাচল করবে। অন্যদিকে উত্তরের স্ট্যান্ড থেকে কলকাতা-সহ অন্যান্য দূরের গাড়ি গুলি চলবে। একই সঙ্গে হকার সমস্যারও সমাধান করা হবে। বিজেপি-র গ্রামীণ জেলা সভাপতি অনুপম মল্লিক বলেন, বাস স্ট্যান্ডে নব্বই শতাংশ গাড়ির বৈধতা নেই। তৃণমূলের তহবিলে টাকা দিয়ে চলে এই সব গাড়ি। এগুলোকে সরানো হলে বাস স্ট্যান্ডের উপর থেকে চাপ অনেকটাই কমে যাবে। বাগনান-এক নম্বর পঞ্চায়েত সমিতির বিদায়ী সভাপতি ও তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী নয়ন হালদার এই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, এটা গত কয়েক দশকের সমস্যা। বাগনানে জনবসতির আধিক্যের জন্য এই সমস্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। সমস্যার সমাধানে কিছুটা সময় লাগছে। তবে অন্যান্য সমস্যার মতো এটিরও সমাধান হবে।