স্টাফ রিপোর্টার: শপথগ্রহণের আগে দলের সাংগঠনিক বৈঠক থেকে ফের কড়া বার্তা দিলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ দলে থেকে দলবিরোধী কাজ বরদাস্ত করা হবে না৷ দল থেকে বহিষ্কার করা হবে, এমন নির্দেশ মমতার৷
একদিকে দ্বিতীয় সরকার শুরুর আগে দলের রাশ নিজের হাতে টেনে ধরা৷ অন্যদিকে দলের ছাত্র সংগঠনের রাজ্য সভাপতি ও নদিয়া জেলা পরিষদের সভাধিপতি বদল করে মমতা বুঝিয়ে দিলেন, এবার তিনি কতটা কড়া৷ ২১১টি আসনে জিতলেও, আরও ৮৩টি আসনে দল ভাল ফল করতে পারত বলে মনে করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ তাঁর কাছে খবর আছে, বেশ কয়েকটি আসনে অন্তর্ঘাতের ঘটনাও ঘটেছে৷ অভিযোগ এসেছে, কোনও কোনও আসনে দলের স্থানীয় নেতৃত্ব প্রার্থীকে জেতাতে কাজ করেননি৷ ‘সাবোতাজ’ করেছেন৷ কারণ অনুসন্ধানের জন্য একটি ‘অন্তর্ঘাত কমিটি’ তৈরি করে দেন দলনেত্রী৷ কমিটিতে আছেন সুব্রত বক্সি, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, মুকুল রায়, পার্থ চট্টোপাধ্যায়, ফিরহাদ হাকিম, অরূপ বিশ্বাস, শোভন চট্টোপাধ্যায়রা৷ ১৫ দিনের মধ্যে এই কমিটিকে রিপোর্ট দিতে বলেছেন তৃণমূল নেত্রী৷
বৈঠকে তিনি বলেন, “দলে অন্তর্ঘাত, গোষ্ঠীবাজি, বিশৃঙ্খলা কোনও অবস্থায় বরদাস্ত করা হবে না৷ যাঁরা এই কাজ করবেন তাঁদের বিরুদ্ধে দলগতভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে৷ দলবিরোধী কাজ করলে দল থেকে বহিষ্কার করা হবে৷ সবাইকে একসঙ্গে দলের হয়ে কাজ করতে হবে৷”
এদিকে এদিনই প্রথামাফিক ইস্তফাপত্র রাজভবনে রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠির কাছে পাঠিয়ে দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ মুখ্যমন্ত্রীর ইস্তফার সঙ্গে সঙ্গে ভেঙে যায় মন্ত্রিসভাও৷ রাতে রাজভবন সূত্রে জানানো হয়, মুখ্যমন্ত্রীকে রাজ্যপাল অন্তর্বর্তী সময়ের জন্য তদারকি সরকার চালাতে বলেছেন৷ মুখ্যমন্ত্রীর সুপারিশে প্রবীণ তৃণমূল বিধায়ক জটু লাহিড়ীকে প্রোটেম স্পিকার হিসাবেও এদিন নিয়োগ করেছেন রাজ্যপাল৷
বুধবার কালীঘাটে দলের সাংসদ, বিধায়ক, সংগঠনের দায়িত্বে থাকা নেতৃত্বকে বৈঠকে ডাকেন মমতা৷ ঘণ্টাখানেক বৈঠক হয়৷ বৈঠকে আসেননি বারাকপুরের সাংসদ দীনেশ ত্রিবেদী৷ তাঁকে বৈঠকে আসতে বারণ করা হয়েছিল বলে তৃণমূল সূত্রে খবর৷ একাধিক আসনে খারাপ ফলের জন্য দলীয় নেতৃত্বকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে৷ মালদহ, নদিয়া জেলায় তৃণমূলের খারাপ ফলের জন্য সেখানকার নেতৃত্বকে এদিনের বৈঠকে বকাঝকাও খেতে হয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে৷ মালদহ জেলায় দলের কোর কমিটি ভেঙে দিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী৷ বৈঠকে মালদহ জেলার নেতাদের কাছে মমতা জানতে চান, “মালদায় এত খারাপ ফল কেন? কেন সংগঠনকে গুরুত্ব দিয়ে দেখা হয়নি? কেন একটি আসনেও জেতা গেল না? পাশের জেলা মুর্শিদাবাদ তো ভাল লড়াই দিয়েছে৷ আসনও জিতেছে৷ মুর্শিদাবাদে তৃণমূলের ভোট বেড়েছে৷ এখন আমাকেই মালদহর উপর বেশি নজর দিতে হবে৷”
নদিয়া জেলাতেও শান্তিপুর, রানাঘাট উত্তর-পশ্চিম আসনে খারাপ ফলের জন্য প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে নেতৃত্বকে৷ নদিয়া জেলায় পর্যবেক্ষকের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে৷ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে৷ নদিয়া জেলা পরিষদের সভাধিপতি বাণী রায়কে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে৷ সেখানে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে দীপক বোসকে৷ আসানসোলেও দলের সংগঠনকে শক্তিশালী করার নির্দেশ দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ আসানসোল-দুর্গাপুর ডেভলপমেন্ট অথরিটির চেয়ারম্যানও বদল করা হচ্ছে বলে তৃণমূল সূত্রে খবর৷ গদাধর হাজরাকে বীরভূম জেলা তৃণমূল যুব কংগ্রেসের সভাপতি করা হচ্ছে বলে জানা গিয়েছে৷
এদিনই দলের সাংগঠনিক স্তরে রদবদল করেছেন তৃণমূল নেত্রী৷ তৃণমূল ছাত্র পরিষদের রাজ্য সভাপতির পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে অশোক রুদ্রকে৷ তাঁর জায়গায় দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে জয়া দত্তকে৷ জয়া তৃণমূল ছাত্র পরিষদের উত্তর ২৪ পরগনার সভানেত্রীর দায়িত্বে ছিলেন৷ অশোক রুদ্রকে তৃণমূল যুব কংগ্রেসের কমিটিতে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ নীতি নির্ধারণ কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে সৌগত রায়, সুব্রত মুখোপাধ্যায়, শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়কে৷ দলের সংগঠনকে আরও শক্তিশালী করা, গায়ের জোর-ক্ষমতা না দেখিয়ে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ রাজারহাট-নিউটাউনে বেশ কয়েকটি ঘটনার কথা উল্লেখ করে কাকলি ঘোষদস্তিদার, সব্যসাচী দত্তকে সতর্ক করে দেন দলনেত্রী৷ তিনি জানিয়ে দেন, অবিলম্বে গণ্ডগোল বন্ধ করতে হবে৷ নইলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে৷
আগামী ১৮ জুন নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে দলের সাংসদ, বিধায়ক ও নির্বাচন জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে একটি বর্ধিত বৈঠক ডেকেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ ওই বৈঠকে দলের জন্য কীভাবে কাজ করতে হবে, তার রূপরেখা ঠিক করে দেবেন তিনি৷ পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে দলীয় নেতৃত্বকে তিনি জানান, ২১১ জন জিতেছেন৷ তার মধ্যে ২০০ জন মন্ত্রী হওয়ার যোগ্য৷ কিন্তু সবাইকে তো আর মন্ত্রী করা যায় না৷ জেলা, মহিলা, পুরুষ, নতুন, অভিজ্ঞ সবদিক দেখে মন্ত্রী করা হয়৷ কিন্তু যাঁকে মন্ত্রী করা হবে, তাঁকে নিজের বিধানসভা ছাড়াও পাশের কেন্দ্রগুলিও দেখতে হবে৷ ভালবেসে কাজ করতে হবে৷ বৈঠকে শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়কে মমতা বলেছেন, বিধানসভায় মুখ্যসচেতকের কাজ তাপস রায়কে বুঝিয়ে দিতে৷ পাশাপাশি পরাজিত প্রার্থীদের আরও দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে৷ দলের জন্য আরও বেশি করে কাজ করার নির্দেশ তৃণমূল নেত্রীর৷