Advertisement
Advertisement

জঙ্গলমহলের প্রাণের উৎসব টুসু, চৌডলে রঙিন সমস্ত জলাশয়

টুসু কী? কীভাবে তা সর্বজনের হল?

tusu festival is celebrated with great fanfare in Jangalmahal
Published by: Sangbad Pratidin Digital
  • Posted:January 14, 2018 9:02 am
  • Updated:September 17, 2019 5:08 pm

সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: সাগর সঙ্গম কিংবা নদীতট। পুণ্যস্নানে পুণ্যার্থীদের যেন প্রাপ্তির আনন্দ। কনকনে ঠান্ডায় বাংলা জুড়ে উৎসবের ঘনঘটায় অন্যরকম রাজ্যের পশ্চিমপ্রান্তে। বলা ভাল জঙ্গলমহলে। রাঢ়বাংলার সব থেকে বড় পরবের নাম যে টুসু। প্রাণের উৎসবে মাতোয়ারা পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, পশ্চিম মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রাম।

[মকর সংক্রান্তিতে বাড়িতে সহজেই বানিয়ে ফেলুন এই সুস্বাদু পিঠেগুলি]

Advertisement

টুসু মহামিলনের পরব। এই উৎসবকে ঘিরে জড়িয়ে জঙ্গলমহলের লোকসংস্কৃতি। যার নামও টুসু। রঙিন কাগজে বাঁশ দিয়ে তৈরি হয় নানারকমের রংবাহারি চৌডল। যা জলে ভাসানো হয়। তার জন্য সংক্রান্তির দিন পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, ঝাড়গ্রামের বিভিন্ন নদী এবং জলাশয় যেন রঙিন হয়ে ওঠে। এই উৎসবকে কেন্দ্র করে পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলি কার্যত বনধের চেহারা নয়। দোকানপাট সব বন্ধ। সবাই আজ শহর থেকে গ্রামমুখী। আলাদা ছন্দ, আলাদা সুরে টুসু গান গাওয়া হয় এই পৌষসংক্রান্তিতে। টুসু গান আসলে মানুষের হৃদয়ের কথা। লোকজীবনের সুখদুঃখ, হাসি-কান্না টুসুর সুরে উঠে আসে। প্রবীণদের মতো নতুন প্রজন্মও গান লিখছে। দু বছর পর এবার কনকনে ঠান্ডা পড়েছে পুরুলিয়ায়। টুসু গানে তাই উঠে এসেছে হিমেল ছোঁয়া। শীত নিয়ে নানা রঙ্গ, রসিকতা। টুসুর গান এরকম-

Advertisement

এমন জাড় (শীত) ভাই দেখি নাই আগে/গেল বুড়াবুড়ির দাঁত লাইগে/ টুসু হামার জাড়ের গ্যাঁদাফুল। মকর সিনান করে বাঁধব চুল।

টুসু

মানভুঁইয়া ভাষায় রচিত এই গান মনে ধরেছে সকলের। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে টুসু আরও সমকালীন, আধুনিক হয়েছে। একসময় এই পরব কুরমি, মাহাতোদের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। টুসু এখন সর্বজনের। টুসুর প্রতীক চৌডল গ্রামবাংলায় আটকে নেই, এখন সাজানো-গোছানো ড্রইংরুমেও শোভা পাচ্ছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মাটির গন্ধ মাখা এই উৎসব এখন কর্পোরেট ছোঁয়া পেয়েছে। বড় বড় শপিং মল, বিপণিতেও মিলছে চৌডল। তবে টুসু কোনও আবরণে মোড়া দেব বা দেবীর নয়। টুসু আসলে একটি প্রতীক। যে প্রতীক হিসাবে বিভিন্ন রকম মূর্তি গড়া হচ্ছে। তার বিক্রিও বেশ। টুসুকে নারী চরিত্র হিসাবে ধরা হয়। কেউ তাকে মা বলে, কারও কাছে সে ঘরের মেয়ে। কারও তা প্রেমিকা কিংবা ঠাকুমা। টুসুর গান ইউটিউবেও বেশ জনপ্রিয়। এমন একটি গান হল –

টুসু আমার মা যা চাইবি চা/ টুসু আমার মা দেবী মা শুধু দেয় কিছু নেয় না/ টুসু আমার ঠাকুর মা, সর্বদা অনন্যা/ টুসু আমার মেয়ে সুন্দরী সবার চেয়ে/ টুসু আমার ভালবাসা, মেটে না কভু আশা/ টুসু আমার টুসুধ্বনী, সর্বগুনে গুনমণী/ টুসু আমার প্রেমিকা যা চাই, পাই তা/ টুসু আমার দেবী খুশি হয় অভাবী/ টুসু আমার জীবন, মরেও হয় না মরণ।

[সংক্রান্তির আগেই তৈরি করে ফেলুন দুধ-সুজির রসমাধুরী, নারকেলের পুলি]

গোটা উৎসবের মতো টুসুর ভাসানও বেশ বর্ণময়। টুসুর গানের পরতে পরতে ধরা পড়ছে জীবনের প্রাপ্তি, অপ্রাপ্তি। গানের কথা বুঝিয়ে দেয় যেন তাকে যেতে দেওয়া হবে না। শীত চলে গেলে ভাসান দেওয়া হবে। উৎসবের আগে শনিবার হয় টুসু জাগরণ। অর্থাৎ টুসুর গানে গানে তামাম জঙ্গলমহলের মানুষ রাত জাগেন। শুধু মকরসংক্রান্তির আগের রাতে এই গান গাওয়া হয়। এই এলাকায় মনে করা হয় টুসুর দিন থেকে রাধাকৃষ্ণ বনভোজনে যায়। পুরুলিয়ার বড়াবাজারে শুকনিবাসা জঙ্গলে এই উপলক্ষ্যে রথ বের হয়। এরপর বড়াবাজার, বান্দোয়ান এলাকার বাসিন্দারা বনভোজন শুরু করেন। টুসুর জন্য নতুন জামাকাপড় কেনা, ঘর সাজানো, জমিয়ে ভোজ। উৎসবের ষোলো কলা এভাবেই পূর্ণ হয় জঙ্গলমহলে।

টুসু পরবের ভিডিও দেখুন-

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ