মৃণ্ময় লাহিড়ি, কোচবিহার: দুই গোষ্ঠীর ঝামেলায় সরগরম মেখলিগঞ্জে তৃণমূলের কর্মিসভা। এবার রাজ্যের দুই বিধায়কের সামনেই শুরু হয় বচসা। রাজ্য নেতৃত্বের নির্দেশে রবিবার মেখলিগঞ্জে দলের পরিস্থিতি সামাল দিতে যান রাজ্যের বনমন্ত্রী বিনয়কৃষ্ণ বর্মন এবং বিধায়ক উদয়ন গুহ। তাদের সামনেই ক্ষোভ-বিক্ষোভে মাতল তৃণমূল কংগ্রেসের দুই পক্ষ।
সম্প্রতি রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সি কোচবিহারে আসেন। প্রত্যক্ষ করেন মেখলিগঞ্জে দলের বেহাল দশা। এরপরই দায়িত্ব দেওয়া হয় বনমন্ত্রী তথা মাথাভাঙা কেন্দ্রের বিধায়ক বিনয়কৃষ্ণ বর্মন ও দিনহাটার বিধায়ক উদয়ন গুহকে। আর সে অনুযায়ী রবিবার মেখলিগঞ্জে যান এই দুই নেতা। এদিন কথা ও গান হলঘরে কর্মীসভাও অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে সভার সভাপতিত্ব করতে এক নেতার নাম ঘোষণা হতেই বিক্ষোভ শুরু হয়ে যায়। পরে এলাকার বিধায়ক তথা তৃণমূল যুব কংগ্রেসের জেলা সভাপতি অর্ঘ্য রায়প্রধানকে সভায় সভাপতিত্ব করার দায়িত্ব দেওয়া হয়। কর্মিসভার পরে মেখলিগঞ্জ ব্লকের সব গ্রাম পঞ্চায়েতের অঞ্চল সভাপতি ও প্রধানদের নিয়ে আলাদা আলাদা করে বসে গোটা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করতে চাইলে তা নিয়েও প্রকাশ্যে বিক্ষোভ শুরু হয়ে যায়। কোনওমতে পরিস্থিতি সামাল দেয় নেতৃত্ব।
এই ঘটনা নিয়ে উদয়ন গুহর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, সকলকে নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। এদিন সভাপতি ঠিক করার কোনও বিষয় ছিল না। তাঁরা সকলের সঙ্গে কথা বলতে এসেছিলেন। সকলের সঙ্গে আলোচনা করেই রাজ্য নেতৃত্বের কাছে রিপোর্ট পেশ করবেন। রাজ্যের বনমন্ত্রী বিনয়কৃষ্ণ বর্মন বলেন, সব কর্মীদের সঙ্গে কথা বলেছেন প্রায় সাড়ে চার ঘন্টা ধরে। কর্মীদের বক্তব্য শুনে তা নোট করে নিয়েছেন। তা যথাস্থানে পৌঁছে দেবেন তাঁরা। আর একটু বাগবিতণ্ডা হবেই এটা ধরেই নেওয়া হয়েছিল। সকলকে এক জায়গায় এনে আলোচনায় বসেছেন তাঁরা। সমস্যা মিটে যাবে।
এর আগে গত কালীপুজোর রাতে মেখলিগঞ্জের চ্যাংড়াবান্ধায় সাংসদের গাড়ি থেকে নামিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রাক্তন ব্লক সভাপতি লক্ষীকান্ত সরকারকে ধারাল অস্ত্র দিয়ে কোপানোর অভিযোগ ওঠে ব্লক সভাপতি তপন দাম ও তাঁর অনুগামীদের বিরুদ্ধে। দীর্ঘদিন উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পর সম্প্রতি বাড়ি ফিরে এসেছেন লক্ষীকান্ত সরকার। আর ইতিমধ্যে গ্রেপ্তার হয়ে সংশোধনাগারে রয়েছেন তপন দাম-সহ বাকি অভিযুক্তরা। আর গোটা পরিস্থিতির জেরে মেখলিগঞ্জ মহকুমায় দলের যথেষ্ট অবনতি যে হয়েছে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। খবর পৌঁছেছে দলের রাজ্য নেতৃত্বের কাছেও। আর এই পরিস্থিতি সামাল দিতে তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য নেতৃত্ব বিধায়ক তথা দলের প্রদেশ সাধারণ সম্পাদক উদয়ন গুহ এবং বনমন্ত্রী বিনয়কৃষ্ণ বর্মনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।
এদিন বিবাদমান দু’পক্ষেরই অনুগামীরা উপস্থিত হন মেখলিগঞ্জে কথা ও গান হলঘরে আয়োজিত কর্মিসভায়। সেখানে একপ্রস্থ বিক্ষোভের পরে কর্মীসভা অনুষ্ঠিত হয়। এরপরে দলের অঞ্চল সভাপতি ও প্রধানদের নিয়ে আলোচনা করতে সার্কিট হাউসে বৈঠক করতে চাওয়ার কথা জানাজানি হতেই পরিস্থিতি ফের উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। দুপক্ষই সকলের সঙ্গে কথা বলার দাবি জানাতে থাকে। একপক্ষের অভিযোগ, বর্তমানে যারা নিজেদের অঞ্চল সভাপতি বলে দাবি করছেন তাঁরা এখন কোনও দায়িত্বে নেই। কারন এদের দায়িত্ব দিয়েছিলেন ব্লক সভাপতি তপন দাম যিনি এখন সংশোধনাগারে রয়েছেন। কমিটি ভেঙে দেওয়ার ফলে এদের দায়িত্বও চলে গিয়েছে। অন্যদিকে অপর পক্ষের অভিযোগ, তাঁরাই দায়িত্বে রয়েছেন। দল নির্দিষ্ট সময়ের জন্যই অঞ্চল সভাপতির দায়িত্ব দিয়েছে। এখন দেখার আগামীদিনে এই ঘটনা রাজ্যের শাসক দলের জন্য কোনও বিপদ ডেকে আনে কিনা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.