সৌরভ মাজি, বর্ধমান: রাজনৈতিক লড়াই এবার উঠে এল পারিবারিক উঠোনে। তবে সেটা সীমাবদ্ধ থাকছে রাজনীতিতেই। পারিবারিক সম্পর্কের বাঁধন আলগা হচ্ছে না তাতে। পারিবারিক সম্পর্ক অটুট রেখে লড়াইটা রাজনীতির মধ্যেই সীমাবদ্ধ রেখেছেন কাকা-ভাইপো। হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক কাকা বনাম রঙের মিস্ত্রি ভাইপোর লড়াই নিয়ে এখন জোর চর্চা পূর্ব বর্ধমানের গলসিতে।
কাকা নারায়ণচন্দ্র ধাড়া বর্তমানে গলসি-২ পঞ্চায়েত সমিতির জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ সংক্রান্ত স্থায়ী সমিতির কর্মাধ্যক্ষ। তৃণমূল কংগ্রেস এবারও তাঁকে ২৭ নম্বর পঞ্চায়েত সমিতির আসনে প্রার্থী করেছে। গলসির উদয়নপল্লিতে তাঁর বাড়ি। একে শাসকদলের প্রার্থী। বিদায়ী বোর্ডের কর্মাধ্যক্ষ। সেই তুলনায় ধারে-ভারে অনেকটাই পিছিয়ে ভাইপো বিজয় ধাড়া। তাঁকে এবার কাকার বিরুদ্ধে প্রার্থী করেছে বিজেপি। নারায়ণবাবুর লাগোয়া বাড়িতেই থাকেন বিজয়বাবু। তিনি সাধারণ বিজেপি কর্মী হিসেবেই পরিচিত ছিলেন এলাকায়। কিন্তু দল যে তাঁকে প্রার্থী করবে তা তিনি বুঝতেই পারেননি। সাধারণ কর্মী থেকে এবার জনপ্রতিনিধি হওয়ার হাতছানি বিজয়ের কাছে।
[‘অনিশ্চিত’ ভোটের ঠেলায় থমকে গ্রাম-বাংলার বিয়ের অনুষ্ঠান]
এমনিতে গলসিতে তৃণমূল বেশ শক্তিশালী। অধিকাংশ আসনে বিরোধীরা প্রার্থীও দিতে পারেনি। শাসকদলের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলেছে বিরোধীরা। এরই মধ্যে ‘জয়’ হাসিল করতে পেরেছেন বিজয়। কাকার বিরুদ্ধে হলেও মনোনয়ন দাখিল করতে পেরেছেন তিনি। মনোনয়ন প্রত্যাহারে তাঁর উপর চাপ সৃষ্টিও করা হয়নি। সব ঠিকঠাক চললে গলসি এবার কাকা-ভাইপোর ভোটের লড়াই দেখবে। এই লড়াইয়ে কাকাকেই এগিয়ে রাখছেন ভাইপো। কিন্তু ভোটের লড়াইয়ে, প্রচার থেকে ভোটগ্রহণ ও গণনা পর্যন্ত কাকাকে এক ইঞ্চি জমিও ছাড়তে চান না তিনি।
কাকা নারায়ণবাবু সেই ১৯৮২ সাল থেকে পঞ্চায়েত ভোটে লড়ছেন। তখন অবশ্য কংগ্রেসের হয়ে দাঁড়াতেন। তৃণমূল কংগ্রেস প্রতিষ্ঠার পর সেই দলে যোগ দেন। সেবার তাঁর মেয়ে তৃণমূলের টিকিটে জিতে পঞ্চায়েত সদস্য হয়েছিলেন। সেই পরিবারের আর এক সদস্য এবার বিজেপি প্রার্থী। বিজয়বাবু ভোটে প্রার্থী হওয়ার পর কাকার কাছে ছুটে গিয়েছিলেন। তাঁর আপত্তি রয়েছে কি না জানতে। উদারমনস্ক কাকা আপত্তি করেননি। আর করবেনই বা কেন? জেতার ব্যাপারে যে তিনি একশো ভাগ নিশ্চিত। তাই বিরুদ্ধে কে প্রার্থী সেটা বড় কথা নয় তাঁর কাছে।
[প্রচার সভায় বলছেন মন্ত্রী, খোলা মঞ্চে নাক ডেকে ঘুমোচ্ছেন তৃণমূল প্রার্থী]
কিন্তু এই লড়াইয়ে পারিবারিক সম্পর্কে কোনও প্রভাব পড়বে না বলে জানাচ্ছে যুযুধান দুই পক্ষই। নারায়ণবাবু বলছেন, ‘ভোটে হার-জিত যাই ঘটুক তাতে পারিবারিক সম্পর্কে কোনও চিড় ধরবে না।’ বিপদ-আপদে পরস্পরের পাশে থাকবেন তাঁরা। দুই বাড়িতে যাতায়াত আগের মতই অটুট থাকবে। শুধু তাঁরাই নন, পরিবারের অন্য সদস্যরাও এই লড়াইকে শুধুমাত্র রাজনীতির মঞ্চের লড়াই হিসেবেই দেখেছেন। পারিবারিক লড়াই হিসেবে নয়। বিজয়বাবুর মা গায়ত্রীদেবীই হোক বা নারায়ণবাবুর ছেলে স্বরূপবাবু, ভোটের লড়াই দুই পরিবার দুই শিবিরে থাকলে তার আঁচ কোনওভাবেই পারিবারিক সম্পর্কে পড়তে দেবেন না বলেই জানাচ্ছেন।