দীপঙ্কর মণ্ডল: ‘হাওড়া ব্রিজ’-এর সমান্তরাল আরও একটি সেতু তৈরি হচ্ছে গঙ্গার উপর দিয়ে। ছয় লেনের নয়া সেতুটি দক্ষিণ শহরতলি সঙ্গে হাওড়াকে যুক্ত করবে। একদিকে খাস কলকাতা, বেহালা, মহেশতলা, বজবজ, পূজালি, অন্যদিকে হাওড়া ও পূর্ব মেদিনীপুরের লক্ষ লক্ষ মানুষ উপকৃত হবেন বলেই মনে করা হচ্ছে। প্রস্তাবিত সাগর বন্দরেরও এর ফলে লাভ হবে। নবান্নে ইতিমধ্যে বিষয়টি নিয়ে বেশ কয়েক দফা আলোচনা হয়েছে। রাজ্যের শীর্ষ প্রশাসন সূত্রে খবর, এহেন বিশাল একটি প্রকল্প রূপায়ণ করতে গিয়ে রাজ্য সরকার যাতে কেন্দ্রের মুখাপেক্ষী না হয়ে থাকে, সে ব্যাপারে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছেন প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের। যার নেপথ্য বার্তা–দিল্লি সাহায্যের হাত না বাড়ালেও ‘তৃতীয় হুগলি সেতু’ পশ্চিমবঙ্গ সরকার গড়ে তুলবে।
প্রাথমিকভাবে ঠিক করা হয়েছে ডায়মন্ডহারবারের পূজালি থেকে সেতুটি হাওড়ার ফুলেশ্বরে মিশবে। নবান্ন সূত্রে খবর, মুখ্যমন্ত্রীর চূড়ান্ত অনুমোদন নিয়েই জায়গা স্থির করা হবে। তারপরই সেতু নির্মাণে দ্রুত হাত দেবে রাজ্য সরকার। প্রথমে ঠিক হয়েছিল বেসরকারি সংস্থাকে কিছু শেয়ার দেওয়া হবে। কিন্তু সেক্ষেত্রে চড়া হারে ‘টোল ট্যাক্স’ আদায় করা হবে। এমনটাই আশঙ্কা প্রকাশ করেন আধিকারিকরা। তাই ঠিক হয়েছে, পুরো প্রকল্প রাজ্য সরকারের হাতেই থাকবে। পঞ্চায়েত ভোটের আগে কাজ শুরু করতে চায় রাজ্য সরকার। উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে পাঁচ বছরের মধ্যে প্রকল্প শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করা হয়েছে। কলকাতার কাছাকাছি নয়া সেতুটি তৈরির উপর জোর দিচ্ছে নবান্ন। কিন্তু জমি এক্ষেত্রে বড় সমস্যা। নিয়ম অনুযায়ী কোনও সেতুর ‘অ্যাপ্রোচ রোড’ রাখতে হয় অন্তত ৩৫০ মিটার। কলকাতায় এই বাড়তি রাস্তা পাওয়া নিয়ে সমস্যা দেখা দেওয়ায় সেতুটিকে দক্ষিণ শহরতলিতে পাঠানোর পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
হাওড়া ব্রিজ বা রবীন্দ্র সেতু ৭৪ বছর আগে তৈরি হয়েছিল। এই সেতুর উপর থেকে চাপ কমাতেই বিদ্যাসাগর সেতু তৈরি হয়। কিন্তু সেটিও বিকল্প হয়ে উঠতে পারেনি। উত্তর শহরতলির বিবেকানন্দ এবং নিবেদিতা সেতুও ওই ‘আশ্চর্য’ সেতুর বিকল্প নয়। হেরিটেজ হাওড়া ব্রিজ বাঁচাতে আগেই ট্রাম চালানো বন্ধ হয়েছে। আরও একটি নতুন সেতু তৈরি না হলে হাওড়া ব্রিজ আগামী কয়েক বছরের মধ্যে দুর্ঘটনার মুখে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। নবান্ন থেকে এখন ‘হিন্টার ল্যান্ড’ নিয়ে সমীক্ষা করা হচ্ছে। অর্থাৎ কোথায় সেতুটি হলে সবচেয়ে বেশি এলাকার মানুষ উপকৃত হবেন তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। প্রস্তাবিত সমুদ্র বন্দর উপকৃত হওয়ার পাশাপাশি তৃতীয় হুগলি সেতু লাগোয়া জাতীয় সড়ক ও রাজ্য সড়কের অবস্থানের কথাও মাথায় রাখা হচ্ছে।
নবান্ন সূত্রে খবর, প্রযুক্তি, দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও উচ্চতার নিরিখে নয়া সেতু দ্বিতীয় হুগলি সেতুর চেয়েও বড় হবে। প্রসঙ্গত, হাওড়া ব্রিজটি চার লেনের। চওড়া ৭১ ফুট। হেঁটে যাওয়া-আসার জন্য দু’দিকে ১৫ ফুটের আলাদা রাস্তা আছে। বিদ্যাসাগর সেতু ছয় লেনের। চওড়া ১১৫ ফুট। দৈনিক গড়ে এক লক্ষের কিছু কম গাড়ি নির্দিষ্ট টোল ফি দিয়ে এই সেতুতে যাওয়া-আসা করে। নবান্নের এক কর্তা জানিয়েছেন, প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী দ্বিতীয় হুগলি সেতুর ভিত্তি স্থাপন করেছিলেন। চালু হতে বাইশ বছর সময় লেগেছিল। দক্ষিণ শহরতলির নয়া সেতুর ভিত্তি স্থাপন করবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দ্বিতীয় সেতু নির্মাণ সময়ের চার ভাগের একভাগ সময় তৃতীয় সেতুর জন্য বেঁধে দেওয়া হয়েছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.