সংবাদ প্রতিদিন ব্যুরো: কংগ্রেসের উপর ‘ভরসা’ না করেই মুর্শিদাবাদ জেলা পরিষদের ৭৮ টি আসনের নাম ঘোষণা করে দিল মুর্শিদাবাদ জেলা বামফ্রন্ট। শনিবার বহরমপুর সিপিএম কার্যালয়ে জেলা বামফ্রন্ট নেতৃত্ত্ব উপস্থিত হয়ে ওই ঘোষণা করে। সিপিএম জেলা সম্পাদক জামির মোল্লা জানান, জেলা পরিষদের মোট আসনের মধ্যে ৫৮টি আসনে সিপিএম লড়াই করবে, ২টি আসনে লড়াই করবে সিপিআই, ১৩টি আসনে আরএসপি এবং ৩ টি আসনে ফরোয়ার্ড ব্লক লড়াই করবে। তবে ২ টি আসনে বামফ্রন্ট সমঝোতা হয়নি, তাই তা পরে ঘোষণা হবে বলে জানানো হয়েছে। জামির মোল্লা বলেন, ”আসন সমঝোতার জন্য কংগ্রেসকে বলা হয়েছিল। তবে এখনও পর্যন্ত কংগ্রেসের সঙ্গে কোনও সমঝোতা হয়নি বলেই জেলা পরিষদের সমস্ত আসনে প্রার্থী ঘোষণা করা হল।”
যদিও গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতির আসনে কংগ্রেসের সঙ্গে সমঝোতা হয়েছে। কিন্তু পঞ্চায়েত এবং পঞ্চায়েত সমিতির আসনে বামেদের প্রার্থী দেওয়া হলেও তৃণমূল ও বিজেপিকে হারাতে শুধু কংগ্রেস কেন ধর্মনিরপেক্ষ নির্দলের সঙ্গেও সমঝোতা করবে বামেরা বলে জানান সিপিএম জেলা সম্পাদক জামির মোল্লা। প্রসঙ্গত, সাগরদিঘি উপনির্বাচনে বাম-কংগ্রেস জোটের বিধায়ক বাইরন বিশ্বাস (Bairon Biswas) দল ছেড়ে সদ্য তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। ওই যোগদানের পর অনেকটাই ব্যাকফুটে বাম-কংগ্রেস জোট। কারণ, সাগরদিঘির (Sagardighi) বিধায়ক বামফ্রন্টের হলে কোনওভাবেই দল পরিবর্তন করতেন না বলে কানাঘুষো শুরু হয়ে গিয়েছে বাম শিবিরে। ফলে কংগ্রেসের উপর তাদের আর আস্থা যে নেই, সেটা স্পষ্ট হচ্ছে মুর্শিদাবাদ জেলা পরিষদের বামেদের একতরফা আসন ঘোষণা।
[আরও পড়ুন: রামের ভূমিকায় রণবীর, সহ্য হল না কঙ্গনার! ‘সাদা ইঁদুর’ বলে ভয়ংকর কটাক্ষ কাপুরপুত্রকে]
তাহলে কি জেলা পরিষদের আসনে সত্যিই জোট হচ্ছে না? প্রশ্ন রাজনৈতিক মহলেও। যদিও পঞ্চায়েত নির্বাচনে জোট প্রসঙ্গে অধীর চৌধুরীর বক্তব্যে স্পষ্ট যে তিনি বামেদের সঙ্গে ঝামেলায় জড়াতে চান না। এদিন জোট প্রসঙ্গে অধীর চৌধুরী বলেন, ”সিপিএম- কংগ্রেস জোট স্থানীয়ভাবে ঠিক হবে।” সিপিএম ও কংগ্রেসের নিজেদের মধ্যে মারামারি তিনি চান না, প্রতিক্রিয়া অধীরের। তিনি বলেন, ”যেখানে জোট হয়নি, সেখানে যা হয়েছে হয়েছে। আর যেখানে জোট হয়েছে সেখানে হয়েছে, সেটা স্থানীয়রা ঠিক করবে।”
এদিকে বামেরা জোটের আহ্বান জানিয়েছে কংগ্রেসকে। তবে অধীর চৌধুরী (Adhir Ranjan Chowdhury) সিপিএমের জেলা পরিষদের ওই ঘোষিত আসন কতটা মানবেন, সেটাই এখন বড় প্রশ্ন। কারণ, জেলা পরিষদের সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন সিপিএম তাদের আয়ত্তে রেখেছে। বামফ্রন্টের অন্য শরিক দল ছাড়াই সব আসনে জয়ী হলে একাই জেলা পরিষদ গঠন করতে পারবে সিপিএম। আবার কংগ্রেসও জেলা পরিষদ গঠন করতে চায়। ফলে জেলা পরিষদের মোট ৭৮ টি আসনের মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে কংগ্রেস যে প্রার্থী দেবে, সেটা বিলক্ষণ জানে বামেরা। তবুও জেলা পরিষদের আসনে আগেভাগেই প্রার্থীর তালিকা ঘোষণা করে দিয়ে কংগ্রেসকে কি চাপে ফেলে দিল বামফ্রন্ট (Left Front)?
[আরও পড়ুন: পার্টির আড়ালে তিনতারা হোটেলে রমরমা মধুচক্র! দুর্গাপুরের সিটি সেন্টারে পর্দাফাঁস]
অন্যদিকে, পুরুলিয়াতেও (Purulia) একই ছবি। জেলা পরিষদের সমস্ত আসনে প্রার্থীদের নামের তালিকা ঘোষণা করা হয়েছে। শরিক দলগুলিকে সঙ্গে নিয়েই এই তালিকা প্রকাশিত হয়েছে।
আবার পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পরিষদের প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেছে জেলা বামফ্রন্ট। শনিবার সিপিএমের রাজ্য নেতা সুজন চক্রবর্তী এবং নিরঞ্জন সিহির উপস্থিতিতে তমলুকের নিমতৌড়িতে জেলা সিপিএমের পার্টি অফিসে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পরিষদের ৭০ টি আসনের মধ্যে ৫৯ টি জেলা পরিষদের প্রার্থী ঘোষণা করা হয়। এর মধ্যে সিপিএম ৪৯টি, সিপিআই ৮টি, আরএসপি১টি এবং এনসিপি ১ টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চলেছে। সেই সঙ্গে তৃণমূল এবং বিজেপি বিরোধী শক্তির জন্য বাকি ১১টি আসনের প্রার্থী অঘোষিত রাখা হয়েছে বলে দাবি বাম নেতৃত্বের।