সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: যে প্রথম হয়, সে প্রথমই। ইতিহাস দ্বিতীয়কে খুব একটা মনে রাখে না। তবে রাজনীতির ময়দানে এ কথা খুব একটা খাটে না। বিশেষত ভোটের পরিসংখ্যানে। তাই বাংলার পঞ্চায়েতে প্রথম স্থান তৃণমূল ধরে রাখলেও, চর্চা হচ্ছে দ্বিতীয় স্থানাধিকারী বিজেপিকে নিয়েও।
[ তৃণমূল হটিয়ে বাংলা বাঁচান, পরাজয় নিশ্চিত জেনেও আহ্বান সূর্যকান্তর ]
গোটা দেশে গেরুয়া ঝড় বইছে। কিন্তু ব্যতিক্রম বাংলা। এই পঞ্চায়েতেও মানুষের রায়ে সবজ ঝড়ই উঠেছে। শেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী গ্রাম পঞ্চায়েতে ৪৮,৬৫০ আসনের মধ্যে ভোট হয়েছিল ৩১,৭৮৯টিতে। সেখানে তৃণমূলের দখলে ১৮,৭১৫টি, বিজেপির ঝুলিতে ৪,৬৫৬টি আসন। পঞ্চায়েত সমিতিতে লড়াই হয়েছিল ৬,১১৯টি আসনে। শাসক দলের দখলে ৩,৫৪১টি আসন, বিজেপির দখলে ২৮১টি। জেলা পরিষদের ৬২১টি আসনের মধ্যে তৃণমূলের দখলে ৩৫১টি আসন। বিজেপি এখনও পর্যন্ত দখল করেছে ৯টি আসন। পূর্ণাঙ্গ ফলাফলে এই পরিসংখ্যান বদলে যাবে। তবে মোটামুটি রূপরেখা স্পষ্ট। শাসক দল তার গড় রক্ষা করছে। দিকে দিকে দিনভর সবুজ আবির খেলাতেই প্রমাণ হয়ে গিয়েছে এই জয় যেন প্রত্যাশিতই ছিল। এদিন সন্ধেয় সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও জানিয়ে গেলেন, অনেক কুৎসা, অপপ্রচার হয়েছে। তা সত্ত্বেও ৯০ শতাংশ আসনে জিতেছে তৃণমূল। মানুষের সমর্থন না থাকলে এ জয় সম্ভব হত না।
[ একতরফা জয় পায়নি তৃণমূল, ফলাফল স্পষ্ট হতেই দাবি দিলীপ ঘোষের ]
ঠিক একই কথা বলছেন বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষও। তিনি জানাচ্ছেন, মনে হচ্ছে একতরফাভাবে তৃণমূলই জিতে গিয়েছে। কিন্তু তা নয়। বরং বিজেপি যথেষ্ট ভাল ফল করেছে। এবং পূর্ণাঙ্গ ফলাফল এলেই তা বোঝা যাবে। তাতে হয়তো ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে কোনও পরিবর্তন হবে না। কিন্তু একথা সত্যি যে, এবারের পঞ্চায়েতে প্রায় নজিরবিহীনভাবে ভাল ফল করেছে বিজেপি। নতুন জেলা ঝাড়গ্রামে দুরন্ত ফল গেরুয়া শিবিরের। একই ছবি পুরুলিয়াতেও। রামনবমীর মিছিল ঘিরে যে পুরুলিয়া উত্তাল হয়েছিল, সেখানে গেরুয়া যে জাঁকিয়ে বসেছে ব্যালটেই তার প্রমাণ মিলেছে। আবার জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার, উত্তর দিনাজপুরের মতো জেলাগুলোতেও ভাল ফল করেছে বিজেপি। মূলত আদিবাসী অধ্যুষিত এই জেলাগুলিতে শাসকের পালের হাওয়া অনেকাংশে কেড়ে নিতে সক্ষম হয়েছে বিজেপি শিবির। আর তাতেই আত্মবিশ্বাসী সভাপতি। প্রথম হওয়ার আশা হয়তো তাঁদের ছিল না। কিন্তু রাজ্যে যেভাবে দ্বিতীয় হয়েছে গেরুয়া শিবির, তা চমকপ্রদ। বিশেষত সাধারণ নির্বাচনের আগে এই ফলাফল তাঁদের বাড়তি অক্সিজেন জোগাবে।
[ গণনাকেন্দ্রে ঢুকে ছাপ্পা ভোট, অভিযোগে সরগরম নদিয়ার কৃষ্ণগঞ্জ ]
এই বছর কয়েক আগেও বাংলার রাজনীতি আবর্তিত হত সিপিএম বনাম তৃণমূলে। একদা প্রবল প্রতাপাণ্বিত কংগ্রেসও ছিল, তবে অনেকটাই গুরুত্ব হারিয়ে। নেতাবিশেষে কোনও কোনও অঞ্চলে তাদের আধিপত্য ছিল। কিন্তু এবার দেখা যাচ্ছে বামেদেরকে বলে বলে গোল দিয়েছে বিজেপি। ভোটপর্বের গোড়া থেকেই গুঞ্জন ছিল, একদা বাম কর্মীরাই এখন রাম কর্মী হয়ে বিজেপি শিবিরে মাথা গলিয়েছেন। সাধারণভাবে কোথাও কোনও জোট না হলে গ্রাম বাংলার এ সমীকরণ ভোটের ফলাফলে মোটামুটি স্পষ্ট। বিজেপি বাইরে থেকে কোনও সমর্থক আনেনি। তবে বামেদের থেকে সমর্থক ভাঙিয়ে নিজেদের দলে শামিল করতে পেরেছে। ফলে যে জেলাগুলিতে তৃণমূল দুর্বল ছিল, যা বিরোধীদের গড় ছিল তা এখন অনেকাংশেই বিজেপির দিকে চলে গিয়েছে। যদিও দুর্গাপুরের মতো ব্যতিক্রমও আছে। সব মিলিয়ে বিজেপির উত্থান বেশ নজরকাড়াই। আগামিদিনে সংগঠন বিস্তার করতে শাসক দল তৃণমূলকে তারা যে জোর টক্কর দেবে তা সহজেই অনুমেয়।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.