সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: এক দফায় পঞ্চায়েত ভোটের গুঁতোয় পুরুলিয়ায় রক্ষীবিহীন মন্ত্রী থেকে জেলাশাসক। এমনকী বিচারকও। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে শুক্রবার বিকাল চারটের পর থেকে দেহরক্ষী ছাড়াই ঘুরতে হচ্ছে একদা মাও উপদ্রুত পুরুলিয়ার মন্ত্রী থেকে জেলাশাসক, বিধায়ক থেকে আমলাদের। বিচারক ও উপাচার্য-সহ শিল্পপতিদেরও একই সমস্যা। ফলে ভোটের আগের মুহূর্তে ঝুঁকি নিয়েই চলাচল করতে হচ্ছে এই ভিআইপিদের।
গত বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে পুরুলিয়া জেলা পুলিশের মাধ্যমে জেলার মন্ত্রী, জেলাশাসক, বিধায়কদের কাছে চিঠি পাঠিয়ে বলা হয়, প্রত্যেকের দেহরক্ষীদের শুক্রবার বিকাল চারটে পর্যন্ত পুরুলিয়া বেলগুমা পুলিশ লাইনে অস্ত্রশস্ত্র, বেডিং, রেনকোর্ট, টর্চ-সহ সশরীরে উপস্থিত হতে হবে। এবং ওই চিঠিতে লেখা হয়, ওই দেহরক্ষীদের ছাড়া হবে ভোটের পরে। একদা মাও উপদ্রুত এলাকায় ভিআইপিরা এভাবে রক্ষীবিহীন হওয়ায় খুব সমস্যায় পড়েছেন। তবে এই বিষয়ে জেলা নির্বাচন আধিকারিক তথা জেলাশাসক অলকেশ প্রসাদ রায় ও পুলিশ সুপার জয় বিশ্বাস কিছু বলতে চাননি। দেহরক্ষী তুলে নেওয়ার পরও এব্যাপারে কোন প্রতিক্রিয়া দিতে চাননি রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন বিভাগের মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতোও। তবে এইভাবে দেহরক্ষী তুলে নেওয়ায় ব্যাপক ক্ষুব্ধ একদা মাও হিটলিস্টে থাকা জঙ্গলমহলের একাধিক তৃণমূল নেতা।
[ভোটের দিন প্রতিরোধের ডাক দিলীপের, কমিশনের সমালোচনায় রাহুল]
অভিযোগ, এমনিতেই বিজেপির হাতে শাসক দলের নেতাদের মার খেতে হচ্ছে জেলায়। সম্প্রতি জঙ্গলমহলে ঝাড়খণ্ডের বহিরাগত বাইক বাহিনীর হাতে খুন হয়েছেন তৃণমূলের প্রাক্তন ব্লক সভাপতি। তৃণমূল নেতাদের কথায়, সাম্প্রতিককালে কোনও ভোটেই এভাবে দেহরক্ষী তুলে নেওয়ার ঘটনা ঘটেনি। এই জেলায় পঞ্চায়েত ভোটের কাজে প্রায় ১২ হাজার পুলিশ মোতায়েন করা হবে। তার মধ্যে তেলেঙ্গানা থেকে প্রায় দেড়শো পুলিশ এই জেলায় আসছে। ভিআইপিদের দেহরক্ষী তুলে নেওয়ার তালিকায় রয়েছেন রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন বিভাগের মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতো, অনগ্রসর শ্রেণিকল্যাণ বিভাগের মন্ত্রী সন্ধ্যারানি টুডু, জেলাশাসক অলোকেশ প্রসাদ রায়, অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) উত্তমকুমার অধিকারী, অতিরিক্ত জেলাশাসক (উন্নয়ন) প্রবালকান্তি মাইতি, অতিরিক্ত জেলাশাসক (জেলা পরিষদ) অরিন্দম দত্ত, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপারেশন) ধৃতিমান সরকার, জেলা ও দায়রা বিচারক, অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক, প্রিন্সিপাল ম্যাজিস্ট্রেট জুভেনাইল জাস্টিস বোর্ড, বিধায়ক, জঙ্গলমহলের বিডিও-সহ আরও কয়েকজন। পঞ্চায়েত ভোটে বিডিওরা হলেন রিটার্নিং অফিসার যাঁরা এই ভোটের সময় বিভিন্ন জায়গায় নির্বাচনের কাজ দেখতে যাবেন। তাছাড়া জেলাশাসক জেলা নির্বাচন আধিকারিক হওয়ায় তাঁকে যেতেও হবে জেলার প্রায় সর্বত্র। অথচ তাঁদের কাছে কোন দেহরক্ষী থাকবে না। দেহরক্ষী না থাকায় সবচেয়ে মুশকিলে পড়তে হচ্ছে অতিরিক্ত পুলিশ সুপারেকও (অপারেশন)। কারণ তাঁর নেতৃত্বে জঙ্গলমহলে অ্যামবুশ, লঙ রুট পেট্রোলিং চলছে। সীমান্ত এলাকায় চলছে তল্লাশি।
[পঞ্চায়েত নির্বাচনের নিরাপত্তার জন্য চার রাজ্য থেকে আসছে বাহিনী]