রাজকুমার কর্মকার: ভোটের লড়াইয়ে ভাঙল সংসার। শুধু বাবা-ছেলের মধ্যে সম্পর্কের পাঁচিল তুলেছে তাই নয়, আলাদা হয়ে গিয়েছে হাঁড়িও। আলিপুরদুয়ারের পারোকাটা গ্রাম পঞ্চায়তের ১০/২৭৯ নম্বর বুথে বাবা ভোগনারায়ণ দাস তৃণমূলের প্রার্থী। আর তাঁরই বিপরীতে বিজেপির হয়ে দাঁড়িয়েছেন চতুর্থ ছেলে অমল দাস। আর তারপর থেকে বাবা-ছেলের সম্পর্কে আড়াআড়ি ফাটল। এতদিন অবশ্য মুখদর্শন না করা থেকে একে অন্যের বিরুদ্ধে প্রচার পর্যন্তই সীমাবদ্ধ ছিল বিষয়টি। কিন্তু রবিবারই ছেলেকে রীতিমতো সংসার থেকেই আলাদা করে দিয়েছেন বাবা ভোগনারায়ণ দাস।
ভোগনারায়ণবাবু দীর্ঘ ৪০ বছর থেকে এই একই কেন্দ্রে গ্রাম পঞ্চায়েত নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন। পেশায় প্রাথমিক স্কুলের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক ভোগনারায়ণবাবুর যথেষ্ট নামডাক রয়েছে এলাকায়। সেই কারণে একবারও পঞ্চায়েত নির্বাচনে হারের মুখ দেখতে হয়নি তাঁকে। কিন্তু এবার পরিস্থিতি আলাদা। তাঁরই ছেলে অমল দাস এবার বিজেপির প্রার্থী হওয়ায় রীতিমতো ক্ষুব্ধ ভোগনারায়ণবাবু।
[লড়াইয়ের আগেই বিপাকে, কাঁকসায় বিরোধিতার ইস্যু খুঁজতেই হিমশিম বাম-বিজেপি]
তাই রবিবার ছেলে শ্বশুরবাড়ি থেকে ফিরতেই তাঁর ভাতের হাঁড়ি আলাদা করে দিয়েছেন। তবে এখনও ভিটেছাড়া করেননি। তবে ভোটপর্ব মেটার পরই সেই পর্বও চুকিয়ে ফেলবেন বলে ঘনিষ্ঠ মহলে জানিয়েছেন তৃণমূল প্রার্থী বাবা।
তবে শুধুমাত্র তাঁর বিরুদ্ধে বিজেপি প্রার্থী হওয়ায় এভাবে ছেলের সঙ্গে অবিচার করার বিষয়টি অনেকেই মেনে নিতে পারেননি। ভোগনারায়ণের খুড়তুত ভাই খোকা দাস বলেন, “এটা গণতান্ত্রিক দেশ। সাবালক ছেলে বাবার মতের বিরুদ্ধে যাওয়ায় ভোগনারায়ণবাবু যে কাজ করেছেন, তা ঠিক হয়নি। ছেলেটি সমস্যায় পড়েছে। আমরা অনেক চেষ্টা করেছি। কিন্তু ভোগনারায়ণবাবু কারও কথা শুনতে রাজি নন।”
ভোগনারায়ণবাবুর বক্তব্য, “এলাকার প্রাথমিক স্কুল আমার দান করা জমিতে গড়ে উঠেছে। এলাকার জল প্রকল্পের জন্যও আমি জমি দান করেছি। ৪০ বছরে একবারও আমি নির্বাচনে হারিনি। ছেলেকে না করেছিলাম বিজেপির হয়ে ভোটে দাঁড়াতে। কিন্তু ও কথা শোনেনি। আমার ছয় ছেলের সবাইকেই প্রয়োজন মতো আলাদা করে দিয়েছি। এবার চতুর্থ ছেলে অমলকেও করে দিলাম। ও সুখে থাকুক। আমার বিরুদ্ধে ভোটে লড়াই করে যদি ও সুখে থাকে তা হলে থাকুক না। ওর স্ত্রী-সন্তান রয়েছে। তাই ওকে এই মুহূর্তে আমি ঘরছাড়া করতে পারি না।”
ছেলে অমল বলেন, “বাবার আগে আমি মনোনয়ন জমা দিয়েছি। তা হলে আর আমি বাবার বিরুদ্ধে লড়াই কোথায় করছি। আমি তৃণমূলের দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইতে নেমেছি। এলাকার উন্নয়নের তাগিদে আমি এবার বিজেপির প্রার্থী হয়েছি।” সংসার থেকে আলাদা করার বিষয় তিনি বলেন, “একদিন না একদিন আমকে তো অন্যান্য ভাইদের মতো আলাদা হতেই হত। সেটা না হয় এই ভোটের সময় হলাম। কিন্তু ভোটে লড়বই।” বাবা ছেলের সংসারের এভাবেই কার্যত পাঁচিল তুলে দিয়েছে এবারের ভোট। গ্রামের মানুষের মুখে মুখেও ফিরছে এই একই আলোচনা। শেষ পর্যন্ত কার জয় হয়, সেটাই এখন দেখার।
[মনোনয়ন প্রত্যাহারের হিড়িক, নলহাটিতে ভাঙলেও মচকাতে নারাজ বাম নেতারা]