ধীমান রায় ,কাটোয়া: বাবা দর্জির কাজ করেন৷ দিন গেলে কখনও এক-দেড়শো টাকা রোজগার৷ কঠিন দারিদ্রের সঙ্গে লড়াই করা পরিবারের মেয়ে কাটোয়ার ১৭ নম্বর ওয়ার্ড এলাকার তাঁতিপাড়ার বাসিন্দা সুস্মিতা দে৷ এই অভাবের মধ্যেই উচ্চ মাধ্যমিকে ৯৩ শতাংশ নম্বর পেয়ে পাশ করেছে সুস্মিতা৷ সাফল্য সত্যেও বাবা মা চাইছেন মেয়ের বিয়ে দিতে দিতে। সুস্মিতার স্বপ্ন উচ্চশিক্ষা শেষ করে ভবিষ্যতে সে কলেজে শিক্ষকতা করবে। কিন্তু পরিবারের চাপে শেষ পর্যন্ত সে স্বপ্নপূরণ হবে কিনা তা নিয়ে ধন্দে রয়েছে ওই মেধাবী ছাত্রী।
[ খুনের আগে অজয়ের সঙ্গে মদ্যপান সখী-বিশ্বজিতের, অশোকনগর কাণ্ডে নয়া মোড় ]
কাটোয়ার তাঁতিপাড়া এলাকায় বহু পুরনো আমলের একটি বাড়িতে একটি ঘরে স্ত্রী ও একমাত্র সন্তানকে নিয়ে থাকেন শ্রীবাস দে। শরিকানা বাড়িতে একটি ঘরই তিনি ভাগ পেয়েছেন। কাটোয়ার একটি টেলারিংয়ের দোকানে কাজ করেন শ্রীবাসবাবু। তিনি সারাদিনে যেটুকু কাজ পান তার উপর ভরসা করেই চলতে হয়। শ্রীবাসবাবু বলেন, ‘‘বাবা মায়ের তো ইচ্ছা হয়, নিজের সন্তানকে ভালভাবে পড়াশোনা করানোর। কিন্তু সংসার চালাতেই দেনায় পড়ে যেতে হচ্ছে। তার পরও মেয়ের পড়াশোনার খরচ জোগানোর সামর্থ্য আমার নেই। তাই অভিভাবক হিসাবে ভেবেছি মেয়েটার বিয়ে দিয়ে দিতে। তবে মেয়ের মন পড়াশোনা করার।’’
[ দিনেদুপুরে অবাধে গাছ কেটে পাচারের অভিযোগ, চাঞ্চল্য গাজলডোবায় ]
কাটোয়ার দুর্গাদাসী চৌধুরাণি উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রী সুস্মিতা জানিয়েছে, স্কুলের ৪ জন শিক্ষক শিক্ষিকা মিলে তাকে বিনা পারিশ্রমিকে টিউশন পড়িয়েছেন। আরও দুজন গৃহশিক্ষক তাকে সহযোগিতা করেছেন। সুস্মিতার প্রাপ্ত নম্বর ৪৬৫। তার মধ্যে বাংলায় ৮৫, ইংরেজি ৯৬, ভূগোলে ৯১, অর্থনীতিতে ৯৬ এবং দর্শনে ৯৫ নম্বর পেয়েছে। কাটোয়া কলেজে ইংরেজি বিষয়ে অনার্স নিয়ে ভর্তি হবে বলে জানিয়েছে সুস্মিতা। সাফল্যের পর সুস্মিতার বক্তব্য, ‘বাড়িতে বিয়ে দিতে চাইলেও আমি এখন বিয়ে করতে রাজি নই। আরও পড়াশোনা চালিয়ে যেতে চাই।’ প্রতিবেশী কাটোয়া পুরসভার অবসরপ্রাপ্ত কর্মী নিতাই পাল বলেন, ‘সুস্মিতার প্রচণ্ড মেধা। অভাবের সঙ্গে লড়াই করে যা ফল করেছে তা দৃষ্টান্ত। আমরা যতটা পারব ওকে সাহায্য করব৷’
ছবি: জয়ন্ত দাস।