সৈকত মাইতি ও চন্দ্রশেখর চট্টোপাধ্যায়: যদিদং হৃদয়ং মম, তদস্তু হৃদয়ং তবঃ। অগ্নিসাক্ষী রেখে মন্ত্রোচ্চারণ, সাতপাক ঘুরে শুভদৃষ্টিতে সামান্য রোমান্টিক দুষ্টুমি। ব্যস্ততম আধুনিক সময়ে জীবনসঙ্গীকে বরণের এই ছবি কমছে। তবে লিভ টুগেদারের চল বাড়লেও আইনি বিয়ে মানেই রেজিস্ট্রি। যা এতদিন হত নোটিস দিয়ে, দুই তরফের নথিপত্র পেশ করে। এবার তা অনলাইনে। জীবনের ইঁদুরদৌড়ের মাঝে সামান্য সময় বের করে মাউসের এক ক্লিকে চার হাত এক হয়ে যাবে। কালরাত্রি, প্রথাগত ফুলশয্যা? হায় তোমাদের দিন গিয়াছে। রাজ্য সরকারের তরফে চন্দননগর ও কলকাতার দুই ম্যারেজ রেজিস্ট্রারকে দিয়ে পাইলট প্রজেক্ট চালু হচ্ছে আগামী ৯ ডিসেম্বর। তারপর সারা রাজ্য এই পথে হাঁটবে।
আপাতত রেজিস্ট্রারদের প্রশিক্ষণপর্ব শেষ। আইনমন্ত্রী মলয় ঘটক বলেছেন, “দ্রুত এই পরিকল্পনা রূপায়িত হবে। ঝক্কি কমবে। নথিপত্র হারিয়ে যাওয়া, ফের কপি পেতে হয়রানির দিন শেষ হবে।” আইন দপ্তর সূত্রে খবর, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এর উদ্বোধন করতে পারেন। রেজিস্ট্রার জেনারেল অফ ম্যারেজ মৃদুল হালদার বলেছেন, “আমরা তৈরি। ম্যানুয়াল ব্যবস্থায় কাজে গতি আসছিল না। এবার দূরে থেকেও কাছে আসার কোনও বাধা রইল না।” রাজ্যের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে নয়া প্রজন্ম। যাঁদের কাছে বিয়ের অনুষ্ঠান, ধর্মাচরণ সময় ও অর্থের বাড়তি খরচের চাপ ছাড়া আর কিছু নয়। লিভ টুগেদারের জীবনচর্যায় ঢুকে পড়া ছেলেমেয়েরা তো আরও একধাপ এগিয়ে সম্পর্কের আইনি মান্যতাতেও আপত্তি জানাচ্ছেন। তবে যা-ই হোক না কেন, জীবনের প্রয়োজনেই বিয়ের আইনি নথিবদ্ধকরণ বা রেজিস্ট্রি অতি জরুরি পদক্ষেপ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাই সরকার পদ্ধতিগত জটিলতা কাটাতে উদ্যোগী। এবং অনলাইনেই মধুরেন সমাপয়েৎ। নাই-বা উচ্চারিত হল ‘যদিদং হৃদয়ং….।’ চুলোয় যাক কালরাত্রি।
ঠিক কী হবে? তার আগে দেখা যাক কী হত এতদিন। পাত্র ও পাত্রী নিজেদের ঠিকানার প্রমাণ, শিক্ষাগত শংসাপত্র, ছবি, তিনজন সাক্ষী নিয়ে হাজির হতেন নিজের থানা এলাকার কোনও ম্যারেজ রেজিস্ট্রারের দপ্তরে। তবে তার আগে নোটিস দিতে হত কমপক্ষে তিন সপ্তাহের। প্রতিটি নথি তিনি নিজের কাছে ফাইলবন্দি করে রাখতেন। সার্টিফিকেট আপলোড করতেন। রেজিস্ট্রার জেনারেলের অফিসে নির্দিষ্ট সময় পর সেই ফাইল পাঠাতে হত। নিজের কাছে একটা কপি রেখে দিতেন। কিন্তু দেখা যেত, রাইটার্স বিল্ডিং, নিউ সেক্রেটারিয়েট, শিয়ালদহ, সিআইটি বিল্ডিং-সহ রাজ্যে যে ছয়টি অফিস রয়েছে, সর্বত্র নথির পাহাড়। প্রয়োজন হলে তা পাওয়া খড়ের গাদায় সুচ খোজার শামিল। ফলে কখনও বিদেশ যাওয়ার সময়, চাকরিতে যোগদানের ক্ষেত্রে বা পাসপোর্ট করাতে নথির ট্রু কপি পেতে কালঘাম ছুটত সবার। এবার সেই মুশকিল আসান করে দেবে কম্পিউটার। সোজা কথায় অনলাইন বিয়ে।
প্রশাসন সূত্রে খবর, যা ইতিমধ্যেই দিল্লি, মুম্বই, উত্তরপ্রদেশে চালু করা হয়েছে। এবার বাংলায়। সমস্ত নথি পোর্টালে আপলোড করা থাকবে। ফাইলের কোনও অস্তিত্ব থাকবে না। ম্যারেজ রেজিস্ট্রার সার্টিফিকেট আপলোড করে দেবেন। পাত্র-পাত্রী বিয়ের পর যে কোনও সময় তাঁদের প্রয়োজনে তা পেতে পারেন। যা ফি দিলে তাঁদের ইমেলে পাঠিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব নেবে দপ্তর। আর ডাঁই করা ফাইলের দিকে তাকিয়ে অপেক্ষা করতে হবে না। গত শনিবার থেকে দু’দিনের সম্মেলন হয়েছে ম্যারেজ রেজিস্টারদের। সেখানে অনলাইন বিয়ের প্রাথমিক পাঠ দেওয়া হয় সরকারের তরফে। সংগঠনের রাজ্য সম্পাদক জয়ন্তকুমার মিত্র বলেন, “মানুষের স্বার্থেই অনলাইনে রেজিস্ট্রির দাবি তুলেছিলাম আমরা। এখন সরকার দাবি মেনে সেই পথে এগোনোয় আমরা খুশি।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.