সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: রাজনীতি বড় বালাই। তাই বোধহয় রাষ্ট্রপতি পুরস্কার প্রাপ্ত শিক্ষকও হয়ে যান ভোট প্রার্থী। শুধু তাই নয়, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতির পদও ছেড়ে দিয়েছেন তিনি। সোমবার মনোনয়ন জমা দেওয়ার শেষ দিন পুরুলিয়া জেলা পরিষদের পুরুলিয়া দু’নম্বর ব্লকের কুড়ি নম্বর আসনে তিনি তাঁর মনোনয়ন জমা করেন। তার আগে শিক্ষা দপ্তরের সচিবের কাছে পদত্যাগপত্র জমা করে আসেন। মঙ্গলবার দুপুরে তাঁর পদত্যাগপত্র গ্রহণও করে নেয় শিক্ষা দপ্তর। বিষয়টি পুরুলিয়া জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদে জানিয়েও দেওয়া হয়।
ইংরাজিতে এমএ, বিএড পুরুলিয়া দু’নম্বর ব্লকের ছররা-দুমদুমী গ্রামের বাসিন্দা হেমন্ত রজক ১৯৮৮ সাল থেকে শিক্ষকতার সঙ্গে যুক্ত। সেই সময় তিনি পুরুলিয়া দু’নম্বর ব্লকের গোলামারা হাই স্কুলের শিক্ষক ছিলেন। সেখানে শিক্ষকতার সময় থেকেই শাসক বিরোধী রাজনৈতিক কাজে যুক্ত হয়ে পড়েন। এরপর ১৯৯৬ সাল নাগাদ তিনি পুরুলিয়া দু’নম্বর ব্লকের কংগ্রেসের সভাপতি হন। তারপর থেকে তিনি ২০০৮ সাল পর্যন্ত কংগ্রেসের ওই পদ সামলে আসেন।
[এককাট্টা একান্নবর্তী পরিবারের ভাঙন ডাকল পঞ্চায়েত ভোট! ব্যাপারটা কী?]
এদিকে গোলামারা হাই স্কুলে ২০০০ সাল পর্যন্ত শিক্ষকতা করার পর স্কুল সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে পুরুলিয়া এক নম্বর ব্লকের পুকুরগড়িয়া বিভূতিনাথ বিদ্যাপীঠ যোগ দিয়ে তিনি প্রধান শিক্ষকের পদ পান। এরপরই দলের সাংগঠনিক পদ ছেড়ে সোজা জনপ্রতিনিধি। পঞ্চায়েত সমিতিতে কংগ্রেসের তরফে ভোটে লড়ে পুরুলিয়া দু’নম্বর পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য। তারপর রাজ্যে পালাবদল হলে ২০১৩ সাল নাগাদ তিনি কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে নাম লেখান। এরপরই দল তাঁকে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতির আসন দেয়। তিনি তাঁর শিক্ষকতার চাকরি থেকে লিয়েন লিভ নিয়ে ২০১৪ সালের ১৬ জুলাই শিক্ষা সংসদের সভাপতি পদে বসেন।
একদিকে শিক্ষাক্ষেত্র, সেই সঙ্গে রাজনীতি। এখানেই শেষ নয়, প্রশাসকের কাজ সামলে আবার এলাকায় একটি ক্লাবের মাধ্যমে জনসেবা। এই বিষয়গুলির জন্যই তিনি ২০১৪ সালের নিরিখে ২০১৫ সালের ৫ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রপতির হাত থেকে পুরস্কার পান। তাঁর কথায়, “ছাত্র পড়ানো যেমন আমার কাজ, এই কাজে যেমন ভাললাগা রয়েছে তেমনই রাজনীতিও ভীষণভাবে টানে। রাজনীতি করতে গিয়ে অনেক কাজের সুযোগ হয়। তবে জেলা পরিষদে প্রার্থী হয়েছি দলের নির্দেশেই। শিক্ষা সংসদের সভাপতি থেকে পদত্যাগ করে নিজের স্কুলে আবার যোগ দিয়ে মনোনয়ন করি।” তবে প্রতিদিন এত কাজের মধ্যেও তাঁর গ্রামের ক্লাবকে তিনি ফি দিন সময় দেন। এই ক্লাবের ব্যানারেই চলে তাঁর নানা সমাজসেবামূলক কাজ।
ছবি: সুনীতা সিং