সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: মনোনয়ন থেকে প্রচারকাজ। বরাদ্দ একটি তিন চাকার যান। পঞ্চায়েত নির্বাচনে সমিতি ও গ্রাম পঞ্চায়েতের আসনে লড়াই করা প্রার্থীদের ভোটের যাবতীয় কাজের জন্য যানবাহনের এমনই মাপকাঠি বেঁধে দিয়েছে কমিশন। রাজ্য নির্বাচন কমিশনের এমন নিদানে মাথায় হাত রাজ্যের তাবড় পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি থেকে সহ-সভাপতিদের, যাঁরা চার চাকার গাড়ি ছাড়া এক পা নড়তেই চান না।
[পঞ্চায়েত নির্বাচনের মনোনয়নে গোলমাল ঠেকাতে বাঁশঝাড়েও সিসিটিভি]
রাজ্যের পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রথম দফার ভোটের জন্য সোমবার বিজ্ঞপ্তি জারির পর বারোটি জেলায় সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসন সর্বদলীয় বৈঠক ডেকে কমিশনের এই নির্দেশ জানিয়ে দিয়েছে। এখানেই শেষ নয়, গ্রাম পঞ্চায়েতে লড়াই করা প্রার্থীরা কোনও মোটরচালিত যানবাহনই ব্যবহার করতে পারবেন না। পায়ে হাঁটা বা বড় জোর সাইকেল কিংবা রিকশা। তবে জেলা পরিষদের ক্ষেত্রে প্রার্থী পিছু একটি চার চাকার গাড়ি বরাদ্দ হয়েছে। সোমবার পুরুলিয়ায় সর্বদলীয় বৈঠক শেষে জেলাশাসক তথা জেলা নির্বাচন আধিকারিক অলকেশ প্রসাদ রায় বলেন, “তিন চাকার যান হিসাবে অটো, টোটো, রিকশা ব্যবহার করতে পারবেন সমিতিতে লড়াই করা প্রার্থীরা। গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরে প্রার্থীরা কোনও ধরনের মোটরচালিত যান ভোটের কাজে ব্যবহারই করতে পারবেন না।”
পঞ্চায়েত সমিতিতে লড়াই করা প্রার্থীদের ভোটের কাজে চার চাকার গাড়ি ব্যবহারে এমন নিষেধাজ্ঞায় নিজেদের প্রচারকে অভিনব করতে তিন চাকার ঘোড়ার গাড়ি ও গরুর গাড়ির ব্যবহারের কথাও ভাবনা-চিন্তা শুরু করেছেন সমিতির সভাপতি, সহ-সভাপতি থেকে কর্মাধ্যক্ষরা। যেমন পুরুলিয়ার কাশীপুর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি তথা বিধায়ক পুত্র সৌমেন বেলথরিয়া বলেন, “প্রচারে চার চাকার গাড়িতে যখন এমন নিষেধাজ্ঞা তখন ভোটের প্রচারকে আকর্ষর্ণীয় করতে ঘোড়ার গাড়ি বা গরুর গাড়ি ব্যবহার করলে মন্দ কী?” কমিশনের এমন নির্দেশ শুনে নিতুড়িয়া পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি শান্তি ভূষণ প্রসাদ তো বুলেট মোটরসাইকেল কিনে রেখেছেন। তাঁর কথায়, “কমিশনের নির্দেশ তো মানতেই হবে। তাই গ্রামে-গ্রামে ঘুরে প্রচারকাজের জন্য বুলেট কিনে রেখেছি।”
[প্রার্থী দেওয়া না গেলে ভোট বয়কটের পথে কংগ্রেস, ইঙ্গিত অধীরের]
এদিকে হ্যান্ড মাইক ব্যবহারের ক্ষেত্রেও কিছু নির্দেশিকা রয়েছে। উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা চলায় ১১ এপ্রিল পর্যন্ত মাইক ব্যবহারে নিষেধ রয়েছে। তাই হ্যান্ডমাইক ব্যবহার করা গেলেও মনোনয়নের সময় সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রে যাওয়ার একশো মিটার আগে ওই মাইকও ব্যবহার করতে পারা যাবে না। কমিশন সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলা পরিষদে প্রার্থী হতে গেলে এক হাজার, সমিতিতে ৫০০টাকা, গ্রাম পঞ্চায়েতে ১৫০টাকার ডিসিআর (ডুপ্লিকেট কার্বন রিসিপ্ট) কাটতে হবে। এই ডিসিআর ব্লক ও মহকুমা শাসক কার্যালয়ে রয়েছে। টাকা জমা করলেই প্রার্থীর নামে তা কাটা হবে। তবে যাঁরা সংরক্ষিত তাঁদের ক্ষেত্রে এই টাকার অর্ধেক লাগবে। ফলে গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরে সংরক্ষিত আসনে মাত্র ৭৫ টাকা খরচ করলেই প্রার্থী হওয়া যাবে।