পলাশ পাত্র, তেহট্ট: নদিয়ার সীমান্ত এলাকায় তৃণমূলকে হারাতে একজোট হয়েছে বিরোধীরা। যেখানে যে দলের শক্তি বেশি, সেখানে সেই দলই শাসকদলের বিরুদ্ধে প্রার্থী দিয়েছে। এমনকী, সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকায় সিপিএম বা কংগ্রেস কিংবা বিক্ষুব্ধ তৃণমূল প্রার্থী হচ্ছে। আবার যেখানে বিজেপির সংগঠন মজবুত সেখানে তারা প্রার্থী দিলেও কংগ্রেস, সিপিএমের কোনও প্রার্থী নেই। একের বিরুদ্ধে এক প্রার্থী দিয়ে বিরোধীরা তৃণমূলকে হারাতে চাইছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিরোধী নেতারা এই তথ্য স্বীকার করে নিয়েছেন।
[খোদ ব্লক সভাপতির বিরুদ্ধেই তৃণমূলের ৫ গোঁজ প্রার্থী জামুড়িয়ায়]
নদিয়ায় গ্রাম পঞ্চায়েতের ৩২০৯টি আসনের মধ্যে তৃণমূল ৩৫৪৪টি, বিজেপি ২১৮০, সিপিএম ১৬৪২ ও কংগ্রেস ৩৫০টি-তে মনোনয়ন দাখিল করেছে। পঞ্চায়েত সমিতির ৫৪১টি আসনের মধ্যে তৃণমূল ৬৩৩, বিজেপি ৪৩২, সিপিএম ৩৬৭, কংগ্রেস ৬৫টি-তে মনোনয়ন দাখিল করেছে। জেলা পরিষদের ৪৭টির মধ্যে তৃণমূল ৫১, বিজেপি-৫২, কংগ্রেস-১৩, সিপিএম ৪৩টি মনোনয়ন দাখিল করেছে। এর মধ্যে সীমান্তের করিমপুর দুই ব্লকের নতিডাঙা এক ও দুই, নারায়ণপুর এক ও দুই, ধোড়াদহ এক পঞ্চায়েতের অর্ধেক ও দুই পঞ্চায়েতে সিপিএম, নির্দল, কংগ্রেসই অধিকাংশ প্রার্থী দিয়েছে। আবার মুরুটিয়া, দীঘলকান্দি, রহমতপুর, নন্দনপুর বা ধোড়াদহ এক পঞ্চায়েতের অর্ধেক অংশে বিজেপির প্রার্থী বেশি। ১৩ আসনের ধোড়াদহ এক নম্বরে তৃণমূল ১৩টি আসনেই মনোনয়ন দিয়েছে। এখানে বিজেপি-৬, কংগ্রেস-৫, অন্যান্য-৩টি আসনে প্রার্থী দিলেও আর কোনও দলই প্রার্থী দেয়নি। ধোড়াদহ দুইয়ে তৃণমূল সব কটি আসনে প্রার্থী দিয়েছে। এখানে সিপিএম কংগ্রেস চারটি করে, বিজেপি একটি, নির্দল পাঁচটি ও অন্যান্যরা একটি আসনে প্রার্থী দিয়েছে। সংখ্যালঘু অধ্যুষিত নতিডাঙা এক নম্বরে সিপিএমের লোকজন কংগ্রেসে দাঁড়িয়েছে। এখানে কংগ্রেস দশটি ও অন্যান্য, নির্দল মিলিয়ে আরও তিনজন মনোনয়ন দিয়ে তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নেমেছে।
এই প্রসঙ্গে তেহট্ট তথা নদিয়ার বিজেপির উত্তরের সাংগঠনিক সম্পাদক অর্জুন বিশ্বাস বলেন, ‘তৃণমূলকে হারানোর জন্য কেউ যদি আমাদের সমর্থন করে তাহলে আমরা তা নেব। তবে নিজে থেকে কারওর সাহায্য না চাইলেও আমাদের সাহায্য করতে চাইছে।’ কংগ্রেস, সিপিএম ও বিজেপি যে এক হচ্ছে তেহট্ট তথা জেলা কংগ্রেসের নেতা আনসার উল হক স্বীকার করছেন। তিনি বলেন, বিপদে পড়লে মানুষ খড়কুটো ধরেও বাঁচে। তাই কোন নির্দেশ ছাড়াই তৃণমূলকে হারাতে স্থানীয় স্তরে বিরোধীরা একজোট হচ্ছে। এর সঙ্গে বিক্ষুব্ধ তৃণমূলীরাও জুড়ে যাচ্ছে। সিপিএমের তেহট্ট এরিয়া কমিটির সম্পাদক সুবোধ বিশ্বাস বলেন, তৃণমূলের সন্ত্রাসে মানুষ দলমত নির্বিশেষে একজোট হওয়ার চেষ্টা করছে। সব শুনে তৃণমূল জেলা সভাপতি গৌরী দত্ত বলেন, ‘তৃণমূলকে হারাতে বাম-কং-বিজেপি এক হয়েছে। আগে গোপনে ছিল। এখন প্রকাশ্যে এসেছে। এতে আমাদের কিছু হবে না। বরং পরিশ্রম কম হবে।’