বাবুল হক, মালদহ: এ যেন আস্ত একটা ব্যাংক৷ কিন্তু এখানে নিজেদের জমানো পুঁজি রাখা যাবে না! জমানো হবে খাবার৷ ব্যাংকে জমানো খাবার পৌঁছে যাবে গ্রামের দুঃস্থ, অভুক্ত ‘গ্রাহক’দের কাছে৷ নাম রুটি ব্যাংক৷ একদল যুবকের উদ্যোগে রাজ্যে প্রথম চালু হতে চলেছে আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়া মানুষদের ‘রুটি ব্যাংক’৷
মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুরের হাসপাতাল রোডের ধারে মারওয়াড়ি পাড়ায় ব্যাংকের ভবন নির্মাণের কাজ শেষ৷ খাবার সংগ্রহের জন্য শুরুতে ছোট্ট একটি তহবিলও গড়া হয়েছে৷ রুটি তৈরির উনুন থেকে আসবাবপত্র মজুত করা হয়ে গিয়েছে৷ উদ্যোক্তাদের আশা, খুশির ইদের পরই চালু হয়ে যাবে এই রুটি ব্যাংক৷ এ রাজ্যে এখনও পর্যন্ত কোথাও এই ধরণের রুটি ব্যাংক গড়ে ওঠেনি৷ ওই প্রথম হরিশ্চন্দ্রপুরে চালু হতে চলেছে নয়া এই পরিষেবা৷ গ্রামবাংলায় এখনও বহু মানুষ আছেন, যাঁরা দু’বেলা খেতে পান না৷ অনেকেই ভবঘুরে৷ খাবার জোটে না ঠিকঠাক৷
[সিউড়িতে খাদানকর্মীর বাড়িতে বিস্ফোরণ, গুরুতর জখম বাড়ির মালিক]
মূলত, অভাবী এই মানুষদের দু’বেলা দু’মুঠো খাবারের সংস্থান করার লক্ষ্যেই বিকল্প পথের সন্ধানে পা বাড়ালেন তনুজ জৈন, মহম্মদ সামিম, সাহেব দাস, কৌশিক সিং, দুর্জয় দাস, দীপক জৈন ও জিয়াউর-সহ জনা চল্লিশেক যুবক৷ প্রত্যেকেই মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুরের বাসিন্দা। তাঁরা ভাবছিলেন, রোজ যাঁরা দু’বেলা খেতে পান না, সেই মানুষদের জন্য দীর্ঘমেয়াদী কোনও প্রকল্প হাতে নেওয়া যায় কি না! মাস কয়েক আগে জামশেদপুরের ট্রেনে এক সহযাত্রীর কাছ থেকে তনুজ-সামিমরা প্রথম এই ধারণা পান৷ ওই সহযাত্রী তাঁদের জানিয়েছিলেন, কর্ণাটকের মহিশুরে অভুক্তদের জন্য এই ধরণের রুটি ব্যাংক রয়েছে। সেই ধারণা থেকে বন্ধুদের সঙ্গে আলোচনার পর তাঁরা সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেলেন৷ তারপরই রুটি ব্যাংক তৈরির তোড়জোড় শুরু তনুজ জৈন ও তাঁর বন্ধুরা৷
[ছেলে-বউমার অত্যাচারে ঘরছাড়া, থানায় অভিযোগ দায়ের সত্তরোর্ধ্ব বৃদ্ধার]
মহারাষ্ট্রের ঔরঙ্গাবাদে কয়েকজন সমাজকর্মী এই ধরণের ব্যাংক চালু করে দুঃস্থদের দু’বেলা খাওয়াচ্ছেন। উত্তরপ্রদেশের কয়েকটি জায়গায় রুটি ব্যাংক রয়েছে৷ সেখানে অবস্থা সম্পন্ন ঘরের মানুষদের কাছ থেকে রান্না করা খাবার সংগ্রহ করে রুটি ব্যাংকে মজুত করা হয়৷ কোনও রকম বাসি খাবার তাঁরা সংগ্রহ করেন না। গৃহস্থের কাছ থেকে সেখানে মাত্র দু’টি করে রুটি সংগ্রহ করা হয়। তারপর সেই খাবার তাঁরা পৌঁছে দেন দুঃস্থদের কাছে। কিন্তু মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুরের যুবকদের পরিকল্পনাটা একটু অন্য ধরনের। এখানে তাঁরা রান্না করা খাবার সংগ্রহ করবেন না। ব্যাংকের ভিতরেই থাকছে রুটি তৈরির কিচেন। খাবার রান্না হবে এখানেই৷ সদস্যরা শুধু এলাকা ঘুরে উপকরণ সংগ্রহ করবেন। ‘হরিশ্চন্দ্রপুরে ইয়ং বয়েজ গ্রুপ’ নামে একটি টিম গঠন করেছে এলাকার বেশ কয়েক জন যুবক৷ তাঁরা ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকটি সমাজসেবামূলক কাজ করে ফেলেছেন। নতুন সংযোজন, এই রুটি ব্যাংক৷
আর এক উদ্যোক্তা মহম্মদ সামিম বলেন, “এই রুটি ব্যাংকের দু’টি কাউন্টার থাকবে। কাউন্টারে দু’জন সদস্য বসবেন। আর দু’জন সদস্য এলাকা ঘুরে রুটি বিতরণের কাজ করবেন। আমরা ৪০ জনের বেশি সক্রিয় সদস্য রয়েছি। নিজেরাই পর্যায়ক্রমে ডিউটি ভাগ করে নেব। তাতে কোনও সমস্যা হবে না। এলাকার মানুষের পূর্ণ সহযোগিতা পাব বলেই আশা রাখছি।”