সৌরভ মাজি, বর্ধমান: বছর আটেক আগে খুন হওয়া দুই তৃণমূলকর্মীর পরিবার সুবিচার পেয়েছে। পূর্ব বর্ধমানের জামালপুরের ওই দুই তৃণমূলকর্মী ইশা হক মল্লিক ও পাঁচু দাস। তাঁদের খুনের অভিযোগে ১৮ জন সিপিএম নেতাকর্মীর যাবজ্জীবন সাজা দিয়েছে বর্ধমান আদালত। জামালপুরে আরও দুই তৃণমূলকর্মী খুন হয়েছিলেন। একজন প্রায় এক দশক আগে।আর একজন দু’দশক আগে, তৃণমূলের প্রতিষ্ঠার বছরে। দুই ক্ষেত্রেই সিপিএমের বিরুদ্ধেই অভিযোগ। ওই দুই নিহত তৃণমূল কর্মীর পরিবার আজও সুবিচারের প্রতীক্ষায় রয়েছে। কবে চরম শাস্তি হবে খুনিদের তার প্রহর গুনছেন মৃতের পরিবারের সদস্যরা।
[স্কুলে ঢুকে বন্দুক দেখিয়ে সিপিএম প্রার্থীকে অপহরণ, সন্ধেয় উদ্ধার]
১৯৯৮ সালে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রতিষ্ঠা। সেই বছরই পঞ্চায়েত নির্বাচনের ঠিক পরপরে জামালপুরের জারোগ্রাম গ্রাম পঞ্চায়েতের মরাগ্রামে খুন হন ফিরদৌস রহমান ওরফে বোটন। ওই গ্রামের পঞ্চায়েত প্রার্থী জয়দেব মালিককে জেতাতে সর্বশক্তি দিয়ে লড়াই করেছিলেন ফিরদৌস। ভোটের দিন ও গণনার দিন তিনি সিপিএমকে কোনওরকম কারচুপি করতে দেননি। পরাজিত হয় সিপিএম। অভিযোগ, ভোট গণনার পরদিন গ্রামের মাচায় বসে থাকা ফিরদৌসকে কুড়ুল দিয়ে কোপায় সিপিএমের হার্মাদ বাহিনী। দু’দিন পর কলকাতার হাসপাতালে মৃত্যু হয় ওই তৃণমূলকর্মীর। ১২জন সিপিএম কর্মীর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয়।চারজন সিপিএম কর্মী গ্রেপ্তারও হয়। পরে জামিনও পায় তারা। কিন্তু দোষীরা এখনও সাজা পায়নি। ২০০৮ সালে একইভাবে সিপিএমের হার্মাদদের হাতে খুন হন জামালপুরের শিয়ালি দক্ষিণপাড়া গ্রামের তৃণমূলকর্মী উত্তম ভুল। ওই বছর ১৭ নভেম্বর সেচের পাম্পের তেল কিনে ফিরছিলেন উত্তমবাবু। পথে অমরপুর পাত্রপাড়ার কাছে মাথায় আঘাত করে খুন করা হয় তাঁকে। ঘটনায় সিপিএমের ৮ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয় পুলিশে। কিন্তু আজও সাজা হয়নি খুনিদের।
ফিরদৌসের বাবা বৃদ্ধ সামসের আলি মা তহুরা বেগম এখনও অপেক্ষায়। কবে ছেলের খুনিদের চরম শাস্তি হবে, তাঁর দিন গুনছেন। সামসের বলেন, “ইশা হক মল্লিক, পাঁচু দাসের খুনিরা সাজা পেয়েছে। আমার ছেলের খুনিদেরও সাজা দেখে যেতে চাই। যতদিন বেঁচে থাকব লড়াই চালিয়ে যাব। খুনিদের শাস্তি না হওয়া পর্যন্ত শান্তিতে ঘুমোতেও পারব না।” উত্তমবাবুর বড় ছেলে চিরঞ্জিত জানিয়েছেন, তাঁর বাবাকে খুনের ঘটনায় পুলিশে অভিযোগ করা হলেও কেউই গ্রেপ্তার হয়নি। উত্তমবাবুর স্ত্রী অঞ্জলি ভুল বলেন, “আদালতে মামলা চলছে। এখনও সুবিচার মেলেনি। তবে আমার স্বামীকে যারা খুন করেছে তাদের আদালত শাস্তি দেবেই। না হলে মরেও শান্তি পাব না।” দুই পরিবার এখন আদালতের উপরই ভরসা রাখছে। ঈশা হক মল্লিক, পাঁচু রায়ের খুনিদের মতো ফিরদৌস ও উত্তমের খুনীরিও সাজা পাবে আদালতের বিচারে। সময় লাগলেও প্রতীক্ষায় থাকবেন পরিজনরা। সুবিচারের আশায়।
ছবি : মুকুলেসুর রহমান