সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: ব্রিটিশরা তাদেরকে ‘জন্ম অপরাধী’ বলত। এমনকি তাদেরকে ‘ক্রিমিনাল ট্রাইব অ্যাক্টে’র অধীনেও নিয়ে আসা হয়েছিল। আর তার রেশ ধরেই বাম জমানায় পুলিশও তাদের ‘অপরাধী’ তকমা দিতে ছাড়েনি। সেই প্রান্তিক জনজাতির দুই মহিলা হিমানী ও বাসকি শবর থ্রি নট থ্রি রাইফেল বা ইনসাস হাতে হোমগার্ডের ডিউটি করবেন। খাঁকি উর্দিতে সামলাবেন আইনশৃঙ্খলা।
সুদূর অন্ধ্রে কাজ করতে গিয়ে ওড়িশায় ট্রেন দুর্ঘটনায় অকালে প্রাণ হারান শবর জনজাতির দুই পরিযায়ী ভাই। পুরুলিয়ার বান্দোয়ানের ঘাঘরার মতিলাল শবর ও জ্যোতিলাল শবর। মৃত এই দুই পরিযায়ী শ্রমিকের স্ত্রী যথাক্রমে হিমানী ও বাসকি শবরের হাতে বুধবার পাঁচ লাখ ১০ হাজার টাকার আর্থিক সহায়তা ও হোমগার্ডের চাকরির নিয়োগপত্র নেতাজি ইন্ডোর থেকে তুলে দেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সই করা হোমগার্ডের ওই নিয়োগপত্র পাওয়ায় যেন আঁধার হওয়া শবর সংসারে আলোর রেশ। পুলিশ সুপার বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে ওই দুই শবর মহিলাকে হোমগার্ডে যুক্ত করা হয়েছে।”
[আরও পড়ুন: ‘সৃজিতের ছবিতে সিরাজ হচ্ছি না…’! সাফ জানালেন দেব, বিতর্কে ‘ফোড়ন’ বিরসারও]
এদিন নিয়োগপত্র পাওয়ার মধ্য থেকেই খেড়িয়া শবর জনজাতির মধ্যে এই প্রথম কেউ কার্যত পুলিশের চাকরি বা হোমগার্ডে যুক্ত হলেন। পশ্চিমবঙ্গ খেড়িয়া শবর কল্যাণ সমিতির অধিকর্তা প্রশান্ত রক্ষিত বলেন, “শবর সমাজে এটা বড় প্রাপ্তি। যে জনজাতিকে ব্রিটিশরা ‘জন্ম অপরাধী’ বলত তারা এবার কার্যত পুলিশের সঙ্গে যুক্ত হয়ে হোমগার্ডের দায়িত্ব পালন করবেন। তার জন্য আমরা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ধন্যবাদ জানাই।” রাজ্য পুলিশ সূত্রে খবর, তাদেরকে একটি প্রশিক্ষণে পাঠানোর পর তারা কাজ শুরু করবেন। বাম জমানায় এই জেলায় কোন চুরি, ডাকাতি, ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটলেই শবর টোলায় চলে আসত পুলিশ। এই কাজ না করেও কতবার যে মিথ্যা মামলায় তারা জড়িয়ে গিয়েছেন তার হিসাব নেই।
এদিন নিয়োগপত্র হাতে পেয়ে হিমানী ও বাসকি দু’জনেই বললেন, “ভেসে যাওয়া সংসারটাকে হয়তো এবার বাঁচাতে পারবো। কিন্তু ওই মানুষগুলোকে আর ফিরে পাব না।” ঝাড়খণ্ডের রাইকাসিনির পাহাড়ের কোলে বাংলার শেষ ঠিকানা বান্দোয়ানের ঘাঘরার দুই ভাইয়ের অকাল মৃত্যুতে কান্নার রোল এখনও থামেনি। এখনও ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে চোখের জল ফেলছে ওই জনপদ। তবে সেই শোকের আবহে মৃত দুই ভাইয়ের স্ত্রীদের হোমগার্ডের চাকরি যেন নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখাল এই জনজাতির পরিবারকে।