Advertisement
Advertisement

শাঁখের আওয়াজ, উলুধ্বনি, আবিরে যুদ্ধজয়ের উৎসব সিঙ্গুরে

পুজোর প্রায় মাস খানেক আগেই যেন দেবীর বোধন গোটা এলাকায়৷

With Singur verdict, People of Singur burst into joy
Published by: Sangbad Pratidin Digital
  • Posted:September 1, 2016 8:43 am
  • Updated:September 1, 2016 8:58 am

নব্যেন্দু হাজরা, সিঙ্গুর: সকাল থেকেই আকাশে কালো মেঘ৷ কেমন একটা গুমোট ভাব৷ গুমোট ছিল সিঙ্গুরবাসীর মুখও৷ বুধবার সুপ্রিম কোর্টে ছিল সিঙ্গুর মামলার রায়দান৷ বাজেমেলিয়া, গোপালনগর, বেড়াবেড়ির বাসিন্দারা তখনও জানেন না কী রয়েছে তাঁদের ভাগ্যে৷ কারণ, ভাগ্য তৈরি হচ্ছিল সিঙ্গুর থেকে কয়েক হাজার কিলোমিটার দূরে৷ তাই সকাল হতেই টিভির দিকে নজর ছিল সবার৷

বেলা যত গড়িয়েছে উৎকন্ঠার পারদ তত চড়েছে৷ দুপুর ২.০৫ মিনিট৷ মেঘ সরল সিঙ্গুরের আকাশে৷ টিভির পর্দায় ব্রেকিং নিউজ, “সিঙ্গুরে কৃষকের জমি ফেরতের নির্দেশ সুপ্রিম কোর্টের৷” শাঁখের আওয়াজ, উলুধ্বনি, পটকার শব্দ, সবুজ আবিরে সিঙ্গুরে শুরু যুদ্ধজয়ের উৎসব৷ ১০ বছরের অপেক্ষার অবসান৷ সিঙ্গুরবাসীর চোখে আনন্দাশ্রু৷ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামে মুহুর্মুহু স্লোগানে বিভাজন মুছে গেল ইচ্ছুক-অনিচ্ছুকের৷ মুখ্যমন্ত্রীর ছবির সামনে চলল পুজো৷ গোটা সিঙ্গুর হয়ে উঠল মমতাময়৷ পুজোর এক মাস আগেই যেন দেবীর বোধন সিঙ্গুরে৷

Advertisement

জিতল সিঙ্গুর৷ জিতল কৃষক৷ জিতল আন্দোলন৷ চতুর্দিক সবুজে সবুজ৷ আবিরের রং মিশে গেল তিন ফসলি-চার ফসলি জমির রঙের সঙ্গে৷ হুগলির এই একদা অখ্যাত গ্রামে সন্ধের পর থেকে চলল উৎসব৷ এ উৎসব বাঁধনহারা৷ আদালতের রায় বের হওয়ার উৎকন্ঠায় যে পরিবারে সকাল থেকে ছিল অরন্ধন, বেলা বাড়তেই সেই বাড়ি থেকে বিলানো হল মিষ্টি৷

Advertisement

২০০৬ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর৷ বাজেমেলিয়ার উজ্জ্বল সংঘের সামনে থেকে জন্ম নিয়েছিল নতুন ইতিহাসের৷ তারপর থেকেই হুগলির এই অখ্যাত গ্রাম আচমকাই হয়ে উঠেছিল গোটা দেশের পাখির চোখ৷ টাটার জমি অধিগ্রহণ, সেই পদ্ধতি নিয়ে জটিলতা, আন্দোলন, তাপসী মালিকের দেহ উদ্ধার, ধরনামঞ্চ, অনশনমঞ্চ, ভাঙচুর, শাসক-বিরোধী, ইচ্ছুক-অনিচ্ছুক – বছরের পর বছর এসব শব্দগুলোই ঘোরাফেরা করত সিঙ্গুরের আকাশে-বাতাসে৷ শুধুই অপেক্ষা৷ অবশেষে সেই অপেক্ষার অবসান৷ পূর্ণতা পেল দীর্ঘ অন্দোলনের বৃত্ত৷ বুধবার এক নতুন ইতিহাসের সাক্ষী হল সিঙ্গুরবাসী৷

রাজনৈতিক জমির হাতবদল হয়েছে ২০১১ বিধানসভা ভোটেই৷ কিন্তু কৃষিজমি ছিল এতদিন ফসলহীন৷ তাই বুধবার সিঙ্গুরের খেটে খাওয়া মানুষগুলোর কাটল টানটান উত্তেজনায়৷ মাঝে ঝিমিয়ে পড়া হাল ছেড়ে দেওয়া খেটে খাওয়া মুখগুলো ফের আওয়াজ তুললেন এদিন৷ বেড়াবেড়ি পূর্বপাড়ার বাসিন্দা সনাতন দাস বলেই ফেললেন, “আমরা জমি ফেরত চাই৷ অনেক কিছু দেখেছি এই দশ বছরে৷ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আমাদের আশ্বাস দিয়েছিলেন৷ আমরা অবশেষে সেই জমি ফেরত পাব৷”

টাটা শিল্পের জন্য সিঙ্গুরের জমি চেয়েছিল, না টাটাকে সিঙ্গুর বেছে দিয়েছিল বাম সরকার! তারই কাটাছেঁড়া এতদিন চলেছে আদালতে৷ এদিন ছিল সর্বোচ্চ আদালতের নিদান৷ আর সেই দিকেই তাকিয়ে সকাল থেকে সময় কেটেছে সিঙ্গুরবাসীর৷ বেলার পর থেকে কোথাও শঙ্খের আওয়াজ, উলুধবনি দিয়ে রাস্তায় নেমেছেন বাড়ির মহিলারা৷ নেচেছেন  ঢাকের তালে৷ আবার কোথাও দেখা গিয়েছে জমিহারা কৃষকও মনের আনন্দে সবুজ আবির কিনে মাখিয়ে দিয়েছেন প্রতিবেশীকে৷ চলেছে  দেদার মিষ্টি বিতরণ৷ আবিরে মাখামাখি মাস্টারমশাই রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য থেকে বেচারাম মান্না প্রত্যেকেই৷ কারণ ফের স্বপ্ন দেখতে শুরু করল সিঙ্গুর৷

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ