তন্ময় মুখোপাধ্যায়: সাধারণতন্ত্র দিবসে আরও একবার মাথা উঁচু হল বাঙালির। সাধারণের অসাধারণ কীর্তি। দেশের সবথেকে বড় পতাকা উড়ল এবঙ্গের ফুলিয়ায়।
[সবথেকে বড় জাতীয় পতাকা এবার বাংলায়, দাবি আয়োজকদের]
ছাব্বিশে জানুয়ারির সকালে এল সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। ঘড়িতে তখন ৮টা বেজে ১০। ১২১.৫ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৮১ ফুট প্রস্থ বিশিষ্ট সবথেকে বড় তেরঙ্গা উড়তেই নদিয়ার প্রান্তে বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস। প্রায় তিন হাজার উৎসাহীর করতালি বুঝিয়ে দেয় বাংলা কিছু পারে। আর এই ঐতিহাসিক মুহূর্তের সূচনার জন্য আয়োজকরা এনেছিলেন রামেন্দ্র চক্রবর্তীকে। যাঁর হাত ধরে পতাকার উত্তোলন হয়। অগ্নিযুগের এই বীরসন্তান একসময় পূর্ববঙ্গে নোয়াখালি বিদ্রোহে সামনের সারিতে ছিলেন। গান্ধীজির সান্নিধ্যেও এসেছিলেন। অধুনা বেথুয়াডহরির এই বাসিন্দা ৯৪ বছরে অশক্ত শরীরে তরুণদের ডাক ফেলতে পারেননি। বলা ভাল হৃদয়ের ডাক এড়াতে পারেননি। দেশের সবথেকে পতাকা তুলে রামেন্দ্রবাবুও যেন পৌঁছে গিয়েছিলেন কৈশোরে। শুধু প্রতীকী আনন্দে মেতে থাকা নয়, নতুন প্রজন্মকে জানিয়ে দিলেন দেশকে ভালবাসো। দেশের জন্য আরও কিছু কর। দেশই আমাদের প্রাণ। নতুনদের বলে গেলেন এরকম কাজ আরও করে যেতে। ঠিক আসবেন।
রামেন্দ্র চক্রবর্তীর এই বচন উদ্বুদ্ধ করেছে আয়োজকদের। কারণ তাঁরা যা করেছেন তা যে ভূ-ভারতে আর কোথাও হয়নি। সবথেকে বড় পতাকার ভূত কিছু দিন আগে মাথায় চেপে বসেছিল ফুলিয়ার জুনিয়র ওয়ান হান্ড্রেড ক্লাব এবং অ্যালবেকা ফাউন্ডেশনের সদস্যদের। তারা তন্য তন্য করে ইন্টারনেট সার্চ করেন। খোঁজেন পত্র, পত্রিকা। জানতে পারেন দেশের সবথেকে বড় পতাকা ১২০ ফুট বাই ৮০ ফুট। যা রয়েছে ভারত-পাক সীমান্তে আটারিতে। শুক্রবার সেই নজির তাঁরা ছাপিয়ে গেলেন। এই অভূতপূর্ব কর্মকাণ্ডের সফল হল দুই সংগঠনের সদস্য এবং শিল্পীদের কৃতিত্বে। আয়োজকদের তরফে অভিনব বসাক জানান, স্থানীয় এক শিল্পী এই বিশালাকার পতাকা তৈরি করেন। আর অশোক চক্রে হাত লাগান দশজন শিল্পী। আর বিশালাকার কাঠামো গড়তেও এলাহি আয়োজন। গত পনেরো দিন কার্যত শিল্পীরা দম ফেলার সুযোগ পাননি। ঠিকঠাক চললে গত তেইশে জানুয়ারি পতাকা উত্তোলনের কথা ছিল। কিন্তু কাঠামোগত ক্রটির কারণে পিছিয়ে দেওয়া হয়।
[বিশ্বের ‘সবথেকে বড়’ রসগোল্লার আত্মপ্রকাশ, ফুলিয়ায় মিষ্টিযজ্ঞ]
ফুলিয়ার মাথা উঁচু করেছে এই তেরঙ্গা। এত বড় যে, সত্যি মাথা উঁচু করে দেখতে হয়। এই গর্ব এবার কোথায় জায়গা পাবে? কৌতুহল ভেঙেছেন অভিনব। তাঁর সংযোজন, জেলাশাসককে দিয়ে মাপ দেখানো হবে। এই নিয়ে কলকাতায় জাতীয় সংগ্রহশালার সঙ্গে তারা যোগাযোগ করেছেন। এরপর কিছু না হলে সবথেকে বড় পতাকা জায়গা পাবে শান্তিপুর পাবলিক লাইব্রেরিতে। ইতিমধ্যে অভিনবদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে লিমকা বুক অব রেকর্ডস।
[সবথেকে বড় সরস্বতী গড়ে নজর কাড়ছে মালদহ, দেখুন ভিডিও]
তবে সবথেকে বড়র দৌড়ের ফুলিয়ার এই সংস্থা অনেক দিন আগেই নাম লিখিয়েছে। কিছুদিন আগে সবথেকে বড় রসগোল্লা বানিয়ে তার চমকে দিয়েছিল। কালীপুজোর পর বিশ্বের দীর্ঘতম আলপনা গড়ার নজিরও রয়েছে তাদের দখলে। সবথেকে বড় পতাকা উড়িয়ে তারা এবার বাংলার মাথা উঁচু করল।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.