তন্ময় মুখোপাধ্যায়: এ বছরই মহালয়ার ভোরে এক অন্য ইতিহাসের সাক্ষী হয়েছিল তিলোত্তমা। দেবীপক্ষের সূচনালগ্নে বাঙালির ঘুম ভেঙেছিল রঙিন ভোরে। কলকাতার রাস্তা সেজে উঠেছিল বাহারি আলপনায়। কালো পিচের রাস্তায় পাখনা মেলেছিল অজস্র রঙিন প্রজাপতি। দক্ষিণ কলকাতার বিখ্যাত দুর্গাপুজো কমিটি সমাজসেবী সংঘের উদ্যোগে শহরবাসী পেয়েছিল এক রঙিন উপহার। ১.৪ কিমি রাস্তা জুড়ে সেই রঙের নকশাকেও এবার হার মানাল নদিয়া জেলার ফুলিয়ার একটি ক্লাব। স্থানীয় জুনিয়র ওয়ান হান্ড্রেড ক্লাবের সৌজন্যে ফুলিয়ায় তিন কিমি রাস্তা জুড়ে এই আলপনা বিশ্বের দীর্ঘতম। এমন কীর্তিমানের জোরেই রেকর্ড বুকে নাম তুলতে বদ্ধিপরিকর ফুলিয়ার এই ক্লাব।
মহালয়ার সকাল যদি হয় কলকাতার লেক রোডের, তবে জগদ্ধাত্রী পুজোর নবমীর সকাল অবশ্যই জুনিয়র ওয়ান হান্ড্রেড ক্লাবের। শনিবার রাত ৯টা থেকে রবিবার সকাল ৬টা পর্যন্ত প্রায় ৭০০-রও বেশি শিল্পীর হাতযশে রঙের ঘনঘটা তাক লাগিয়ে দিয়েছে ফুলিয়াবাসীর। কলকাতা পারলে আমরা কেন নয়, এই মন্ত্রেই হাতে রং-তুলি তুলে নেয় স্থানীয় চিত্রশিল্পীরা। দুর্গাপুজোর ভাসানের সময় নেওয়া হয়েছিল পরিকল্পনা। ঠিক হয়েছিল কালীপুজোর পর দিন হবে এই কর্মকাণ্ড। কিন্তু নাছোড় বৃষ্টি তাতে বাধ সেধেছিল। তবে তাতে আগ্রহ এতটুকু কমেনি শিল্পীদের। শুরু হয় আঠাশে অক্টোবরের প্রতীক্ষা। রাত নটা থেকে বেশ কয়েক ঘণ্টার অক্লান্ত পরিশ্রমে ৩ কিমি রাস্তা রঙিন হয়ে ওঠে। পড়শি বাংলাদেশে বর্ষবরণে এই ধরনের মঙ্গল আলপনার চল আছে৷ আর আলপনা তো আমাদের সংস্কৃতির অন্যতম অঙ্গ৷ বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণের অন্যতম আঙ্গিক এই আলপনা। বাঙালি সংস্কৃতি-ব্রতগুলির বাহকও বলা চলে। সমাজসেবী সংঘের সেই আলপনা যখন দেশ তথা গোটা বিশ্বে ভাইরাল হয়ে যায়, তখনই টেক্কা দেওয়ার কথা মাথায় আসে ফুলিয়ার এই ক্লাবের। জেলার এই বিরাট কর্মকাণ্ড নেটদুনিয়ার পাদপ্রদীপে আসবে কি না তা আলোচনাসাপেক্ষ। কিন্তু এ প্রয়াস যে নিঃসন্দেহে প্রশংসার ভাগীদার তা বলার অপেক্ষা রাখে না। যে শিল্পীদের হাতের শাড়ি গোটা দুনিয়ায় সমাদর, তাদের হাতের তুলিতে তৈরি হল নতুন ইতিহাস। তাঁতের শাড়ি, কৃত্তিবাস ওঝার জন্মস্থান। এসব বাইরে আরও একটা মাথা উঁচু করার পরিচয় পেল ফুলিয়া।
[আলপনায় রাস্তা রাঙিয়ে শহরে রঙিন মহালয়া]
ছবি ও ভিডিও- অভিনব বসাক