Advertisement
Advertisement
War

মহাকাব্যের যুদ্ধবর্ণনা আশ্চর্যসুন্দর! বদলেছে সংঘাতের সেই সংজ্ঞা ও সীমারেখা

যুদ্ধের প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া প্রধানত দু’রকমের।

An essay on war
Published by: Biswadip Dey
  • Posted:May 8, 2025 4:09 pm
  • Updated:May 8, 2025 4:09 pm  

আমাদের দু’টি আশ্চর্যসুন্দর মহাকাব্যে অসংখ্য যুদ্ধযাত্রা বর্ণিত। এবং তার সঙ্গে জড়িত ন্যায় ও অন্যায়, ধর্ম ও অধর্ম, বিচার ও অবিচারের দ্বন্দ্ব।

যুদ্ধের প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া প্রধানত দু’রকমের। একটি হল তীব্র ভীতি, হাড় হিম করা আতঙ্ক, সমাজব্যবস্থার তন্তুগুলি ছিন্নভিন্ন হয়ে যাওয়ার সংশয়। অন্যটি আবার সম্পূর্ণ বিপরীত– রণং দেহি উত্তেজনায় সাজো-সাজো রব তোলা, প্রতিপক্ষকে দুরমুশ করে দেওয়ার মনোবাসনা, আগ্রাসনের স্বাদে রাঙিয়ে নেওয়া বেঁচে থাকার প্রতিটি আনাচকানাচ। কোন পক্ষে কে ঝুঁকে থাকবে, তা স্থির করে রাজনৈতিক পক্ষপাক্ষিত্ব, বৃহত্তর অর্থে, জাতীয়তাবাদ।

Advertisement

বানর বাহিনী-সহ রাম যখন আক্রমণ করে বসলেন লঙ্কায়, সেই সময়টায় কুম্ভকর্ণ গভীর ঘুমে মগ্ন। তিনি মহাবীর, তবে ব্রহ্মার ‘বর’ বা ‘অভিশাপ’ যাই বলি না, তার প্রভাবে ছ’-মাস অন্তত ঘুমিয়ে থাকেন। রামের আক্রমণের সময়টায় তঁার সেই বিখ্যাত ঘুম-পর্ব চলছিল। বিশাল চেহারার কুম্ভকর্ণকে জাগাতে কী পরিমাণ নাচনকেঁাদন করতে হয়েছিল নিচু তলার রাক্ষস-কর্মীদের, তার অনবদ্য বর্ণনা ‘রামায়ণ’-এ রয়েছে। ঘুম থেকে জেগে তঁার ভীষণ খিদে পাবে, কাজেই প্রচুর সুখাদ্যের ব্যবস্থাও করা হয়। কুম্ভকর্ণ অবশেষে জাগলেন, ক্ষুণ্ণিবৃত্তি মিটলে, জানতে চাইলেন, অসময়ে তঁাকে জাগানোর কারণ। রাবণ কর্তৃক সীতাকে হরণ করে আনার ‘সংবাদ’ মন থেকে সমর্থন করতে না-পারলেও, লঙ্কার মাটির প্রতি আনুগত্যে, বড় ভাইয়ের প্রতি কর্তব্যবোধে, আর দেশে প্রবেশ করে বসা কিছু অনাহূত মানুষকে শাস্তি দিতে তিনি যুদ্ধে অংশ নেন।

এই আখ্যানে মনের দিক থেকে যেন আমরা কুম্ভকর্ণের দিকেই রয়ে যাই। ভুল করেছেন রাবণ, রামের লঙ্কা আক্রমণের অভিপ্রায় সে-দেশটাকে জয় করা নয়– এসবের পরেও– কুম্ভকর্ণকে যখন আমরা দেখি– প্রবল পরাক্রমে যুদ্ধে যেতে– সেই আগ্রাসনকে অতিরঞ্জিত বোধ হয় না। মাইকেল মধুসূদন দত্ত তো একধাপ এগিয়ে ‘গাইব মা বীররসে ভাসি’ সুর তুলে, ইন্দ্রজিতের মৃত্যুর পরে রাবণের যুদ্ধোন্মাদনা আশ্রয় করে ধ্রুপদী একটি কাব্যগ্রন্থও লিখে বসেন– ‘মেঘনাদবধ’।

এবং এখানেও আগ্রাসনের প্রতি আমাদের মনের প্রশ্রয় যেন অবচেতনে রয়ে যায়। বাস্তবিক, আমাদের দেশের দু’টি আশ্চর্যসুন্দর মহাকাব্যে যে-অসংখ্য যুদ্ধযাত্রার কথা বর্ণিত– বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সেখানে ভয়ের আবরণে আমরা আচ্ছন্ন হয়ে পড়ি না। কারণ, মহাকাব্যে আখ্যাত নানা যুদ্ধাভিযানের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে ন্যায় ও অন্যায়, ধর্ম ও অধর্ম, বিচার ও অবিচারের দ্বিপাক্ষিক শ্রেণিকরণ। মহাকাব্যরা আমাদের দিতে চায় ন্যায়, ধর্মবুদ্ধি ও সুবিচারের পাঠ। এখানে ‘ধর্ম’ অর্থে প্রাতিষ্ঠানিক বা আচারসর্বস্ব প্রক্রিয়া নয়। ‘ধর্ম’ অর্থে বোঝানো হয়েছে– জীবনের প্রকৃত অনুশীলন। কিন্তু কালক্রমে যুদ্ধের সংজ্ঞা ও সীমারেখা বদলেছে। দু’টি বিশ্বযুদ্ধ পেরিয়ে এখন আমরা যুদ্ধের মধ্যে ‘ন্যারেটিভ’ তৈরি করার প্রবণতা দেখতেই অভ্যস্ত হয়ে উঠেছি। ভয় ও আগ্রাসন: দুই-ই তার রূপভেদ মাত্র।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement