Advertisement
Advertisement

Breaking News

Corruption

আগে দুর্নীতি, পরে নীতি?

আইন অমান্য করা মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি।

Corruption and various multitudes of interpretation | Sangbad Pratidin
Published by: Monishankar Choudhury
  • Posted:October 3, 2022 3:24 pm
  • Updated:October 3, 2022 3:31 pm

আইন অমান্য করা মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি। নীতি-দুর্নীতি, এসব সদর্থক আর নঞর্থক শব্দজোড় এমন অর্থই সূচিত করে যাতে মনে হয়, নীতি লঙ্ঘনই দুর্নীতি। নীতির প্রচলন না থাকলে তো তাকে লঙ্ঘন করার প্রশ্ন ওঠে না। কলমে মনসিজ মজুমদার

সংবাদপত্রগুলিতে দুর্নীতির খবরে পাঠকের প্রতিক্রিয়া কেমন হয় তা নির্ভর করে অনেক কিছুর উপর। সাধারণত মধ্যবিত্ত শ্রেণিই দুর্নীতির খবরের উৎসাহী পাঠক। তাদের প্রতিক্রিয়া ভিন্ন ভিন্ন হলেও দুর্নীতির সংবাদে কখনও অরুচি নেই। সকালে সংবাদপত্র খুলে গতকাল লোকসভায় কী নিয়ে বাদ-প্রতিবাদ, তর্কবিতর্ক বা হইচই হয়েছে; প্রধানমন্ত্রী দ্রব্যমূল্যের ক্রমন্বয় ঊর্ধ্বগতি সম্পর্কে কী বলেছেন; রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের সর্বশেষ খবর কী বা জলবায়ু পরিবর্তনে পৃথিবীর উত্তাপ বাড়ছে ইত্যাদি খবরের আগে যা নজর কাড়ে, তা হল দুর্নীতির সংবাদ।

Advertisement

কোন মন্ত্রী কত টাকা অসৎ উপায়ে আত্মসাৎ করেছে, কোথায় টাকা রেখেছে, যার কাছে রেখেছে তার সঙ্গে তার সম্পর্ক কী, কী করে ধরা পড়ল- এরকম সংবাদ প্রথম আমাদের আকৃষ্ট করে। আমরা কেউ উল্লসিত হই, কেউ বিব্রত হই, কেউ আশ্চর্য যুক্তিতে এই দুর্নীতির দায় লঘু করি এই বলে যে, আগের জমানাতেও অনেক দুর্নীতি হয়েছে। ‘তুমি অধম বলিয়া আমি উত্তম হইব না কেন?’ উনিশ শতকের বঙ্কিমি বাংলায় এই উদ্ধৃতি বিশ শতকের চারের দশকেও শোনা যেত। এখনকার কালোপযোগী আদর্শ– তুমি অধম, তবে আমিই বা অধম হইব না কেন? কিন্তু অধম হওয়াটা আমাদের দেশে বোধহয় একটা সামাজিক ব্যাধি। যদিও একসময় ব্যতিক্রমী মহাপুরুষরা জন্মাতেন। এখন অধম ‘মহাপুরুষ’ জন্মায়!

Advertisement

[আরও পড়ুন: ‘হেট স্পিচ’ নিয়ে ভর্ৎসনা সুপ্রিম কোর্টের, তবুও কেন নীরব সরকার?]

শরৎ বসু যখন কলকাতা কর্পোরেশনের মেয়র ছিলেন, তখন নীরদ সি. চৌধুরী ছিলেন তাঁর ব্যক্তিগত সেক্রেটারি। তিনি তাঁর আত্মজীবনীর দ্বিতীয় খণ্ড, ‘দ‌াই হ‌্যান্ড, গ্রেট অ‌্যানার্ক!’-এ লিখেছেন, ১৯২১ সালে কলকাতা কর্পোরেশন পরিচালনার দায়িত্ব পেল দেশবাসী। ব্রিটিশ আমলে কলকাতা কর্পোরেশন হল প্রথম স্বায়ত্তশাসনকারী প্রতিষ্ঠান। আমাদের শহরের স্বাধীন শাসনব্যবস্থা ন্যস্ত হল আমাদেরই হাতে। আমরা সুশাসন প্রতিষ্ঠা করে ব্রিটিশদের কাছে প্রমাণ করতে পারতাম আমরা স্বশাসনে কত পারদর্শী। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই কর্পোরেশনের নাম হয়ে গেল ‘চোরপোরেশন’।

দুর্নীতির দু’টি রকমফের আমরা দেখতে পাই- ব্যক্তিগত ও সামাজিক। যে কোনও অনৈতিক কাজই দুর্নীতির দৃষ্টান্ত। কিন্তু আইন ফাঁকি দেওয়া একটা ‘সামাজিক ব্যাধি’। আদিম মানুষকে সভ্য হতে হয়েছিল বহু কষ্ট করে তার স্বাভাবিক বর্বরতা বর্জন করে সভ্যতার ‘কৃত্রিম’ অনুশাসনে অভ্যস্ত হয়ে। এমন নয় যে আইন মাত্রেই অমান্য করার প্রবৃত্তি মানুষকে তাড়িত করে। অনেক আইনের মান‌্যতা পেতে সমস‌্যা হয়নি। যেমন, সবলের অত্যাচার থেকে দুর্বলকে রক্ষা করে যে-আইন- সেক্ষেত্রে দুর্বলরাই সংখ্যায় যেহেতু বেশি, তাই আইনটি মান্যতা পেতে বেশি বেগ পেতে হয়নি। যদিও যাদের মান্যতা না পেলে আইন কার্যকর হয় না, সেই আগ্রাসী সবলেরা সহজে এই আইনকে মান্যতা দেয়নি।

আইন অমান্য করা মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি। ইংরেজ দার্শনিক বার্ট্রান্ড রাসেল তাঁর আত্মজীবনীতে লিখেছেন- একসময় তাঁর দেশেও লোকে আইন মেনে চলত না। দুশো বছরের কড়া পুলিশ শাসন ব্রিটেনবাসীদের আইনের শাসন মেনে চলতে বাধ্য করেছে। এই দৃষ্টান্ত থেকে এই অনুমান করা অসঙ্গত যে, নীতি-দুর্নীতি বা সৎ-অসৎ, সভ্য-অসভ্য, সাম্য-অসাম্য এমন সব সদর্থক আর নঞর্থক শব্দজোড় এমন অর্থই সূচিত করে যাতে মনে হয়- নীতি লঙ্ঘন করাই দুর্নীতি, সততার বিকৃতিই অসততা, সভ্যতার অবক্ষয়েই আসে অসভ্যতা, সাম্য বরবাদ করেই আসে অসাম্য। অর্থাৎ আগে নীতি ছিল, তার পরে দুর্নীতি। নীতির প্রচলন না থাকলে তো তাকে লঙ্ঘন করার প্রশ্ন ওঠে না।

কিন্তু আগে দুর্নীতি ছিল বলেই তো প্রাচীন নীতিশিক্ষায় বলা হয়েছিল ‘পরদ্রব্যেষু লোষ্ট্রবৎ’। অর্থাৎ, পরের জিনিস ইষ্টক খণ্ডের মতোই মূল্যহীন। কিন্তু চোরা না শোনে ধর্মের কাহিনি। তাছাড়া মহিলা যাত্রীর গলায় সোনার চেন আসল না নকল সোনার, তা আজকের ছিনতাইকারী এক নজরেই বুঝতে পারে। সুতরাং আসল সোনাকে ‘লোষ্ট্রবৎ’ মনে করতে পারবে না। কিন্তু পরদ্রব্যকে নিশ্চয়ই একসময় নিজ-দ্রব্যের মতোই মনে করা হত। সেটা যে বেআইনি অভ্যাস ছিল এমন নয়। কিন্তু পরদ্রব্যকে ‘লোষ্ট্রবৎ’ মনে করতে বলার প্রত্যক্ষ কারণ নিশ্চয়ই ছিল। সেটা পরস্বাপহরণের সাধারণ প্রবৃত্তি বা এইরকমের নানা প্রাকসভ্য বা বর্বর যুগের প্রবৃত্তি থেকে মানুষকে মুক্ত করে সভ্য করার প্রয়াসেই এমন একটি আপ্তবাক্যের জন্ম।

সে কিন্তু নানা অর্থে চৌর্যবৃত্তি একটি চিরকালীন বৃত্তি। কেবল তাই নয়, চুরিবিদ্যা একটি সুবিদিত সুপ্রতিষ্ঠিত বিদ্যা। তাই বিজ্ঞেরা এই বিদ্যাকে ‘মহাবিদ্যা’ বলেছেন- ‘চুরিবিদ্যা মহাবিদ্যা যদি না পড়ো ধরা’। কিন্তু এই ধরা-পড়ার কথা উল্লেখ করাতে চোরেরা খুব সতর্ক হয়ে গিয়েছে। যারা চুরি করে, আর যারা চোর ধরে, তারা পরস্পরকে শত্রু মনে করে না। আর সত্যিই তো, যদি চোরেরা চুরি করা বন্ধ করে চাকরি বা চাষ করে খায়, তাহলে চোর যারা ধরে তাদের চাকরিই থাকবে না। তাই একটি ক্ষেত্রে আগে চোর, পরে পুলিশ। তাই কেউ পুলিশ-চোর বলে না, বললে অন্য অর্থ হয়। বলে, চোর-পুলিশ। এবং এই একটিমাত্র দৃষ্টান্তে আগে দুর্নীতি, পরে নীতি।

কিন্তু ‘পরদ্রব্য লোষ্ট্রবৎ’ মনে করতে বললে আর-একটা জটিলতা দেখা দিতে পারে। যা ‘লোষ্ট্রবৎ’ তা যেহেতু মূল্যহীন তা নিজ দ্রব্য করে নিলে খুব একটা দুর্নীতি কোথায়? তাই ‘পরদ্রব্যেষু লোষ্ট্রবৎ’ দুর্নীতির খুব একটা কার্যকর প্রতিষেধক নীতিশিক্ষা হতে পারেনি। আর যা মূল্যবান তার মূল্য বা দর নিম্নগামী হলেও তার আকর্ষণ কমে যায় না তার কাছে যে দ্রবে‌্যর প্রকৃত মূল্য জানে। প্রকৃত মূল্য অবশ্য টাকা দিয়ে নির্ধারিত হয় না। তবু সে জিনিস যে কেনে তাকে টাকা দিয়েই তার বহুমূল্য মেটাতে হয়।
অক্সফোর্ডে নীরদ সি. চৌধুরীর ব্যক্তিগত সংগ্রহে এমনই একটি বহুমূল্যে কেনা বই দেখার সুযোগ হয়েছিল। ১৬৭০ সালে প্রকাশিত বই। ইতিমধ্যেই আমি ১৬১১ সালের অথারাইজড ভার্সন দেখেছিলাম, অক্সফোর্ডের হোলি ট্রিনিটি চার্চে, কাচের বাক্সে চেন দিয়ে বাঁধা।

বইকে ‘লোষ্ট্রবৎ’ মনে করে তারা যারা কোনওভাবেই বই হাতে নেয়নি বইতে যা পাওয়া যায় তার জন্য। কিন্তু একসময় বই চুরি করা বিশেষ অপরাধ বলে মনে করা হত না। অধিকাংশ মধ্যবিত্ত বাড়িতে যে বইয়ের সংগ্রহ দেখা যেত সেগুলির কয়েকটি বইতে থাকত পাড়ার লাইব্রেরির সিল বা কোনও অপরিচিতের নাম।

একবার একটা কার্টুন দেখেছিলাম তখনকার দিনের বিখ্যাত হাস্যকৌতুক ম্যাগাজিন ‘সচিত্র ভারত’-এ। এক ভদ্রলোকের বাড়িতে অনেক বই ঘরের মেঝেয় স্তূপীকৃত হয়ে পড়ে আছে ঠিক যেমন করে আমরা সম্প্রতি ছবিতে দেখলাম কোনও একটি বাড়ির মেঝেয় পড়ে আছে বান্ডিল বান্ডিল টাকার স্তূপ। তাকে তার বন্ধু জিজ্ঞেস করছে, বইগুলো একটা আলমারিতে রাখা হয়নি কেন? উত্তর: যেভাবে বইগুলো সংগ্রহ করেছি সেইভাবে একটা আলমারি জোগাড় করা যায় না! সুতরাং বইচুরির ব্যাপারে নীতি বা দুর্নীতির কোনও প্রশ্ন একসময় ছিল না।

এখন ঘরে ঘরে টেলিভিশন এসে যাওয়ার পর পাড়ায় পাড়ায় আর লাইব্রেরি দেখা যায় না, বাড়িতে পাঠ্যপুস্তক ছাড়া অন্য বই পড়ার তাগিদ কমে গিয়েছে। বইচুরির ঘটনাও আর বিশেষ ঘটে না। অবশ্য বাৎসরিক বইমেলাতে বইচুরির সংবাদ পাওয়া যায়। সেটা যে দুর্নীতিমূলক তা নিয়ে অপরাধীর কোনও চেতনা না থাকলেও তা যে আইন-বিরুদ্ধ এবং দণ্ডনীয় অপরাধ সে-বিষয়ে সে সচেতন। এবং সেটা যে কোনও বই-পড়ুয়ার কাজ নয় তা নিয়েও সন্দেহের অবকাশ নেই।

ছেলেবেলায় ‘ফরগেটফুলনেস’ নামে একটি ইংরেজি রম্যরচনা আমাদের পাঠ্য ছিল। সেই রচনাটি মনে এল, কিন্তু লেখক ‘কমনেস্ট ফর্ম অফ ফরগেটফুলনেস’-এর যে দৃষ্টান্ত দিয়েছিলেন তা ভুলে গিয়েছি! কিন্তু কমনেস্ট ফর্ম অফ দুর্নীতি কী? যে দুর্নীতি আমার ধারণায় মোটামুটি তিন প্রকার- মিথ্যে কথা বলা, ঘুষ দেওয়া বা ঘুষ নেওয়া। আর নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস বাধ্য হয়ে ব্ল্যাক মার্কেটে বা কালোবাজারে কেনা।

ছেলেবেলায় খুব জনপ্রিয় ফিল্ম দেখতে গেলে টিকিট কাউন্টারে দেখতাম ঝোলানো আছে হাউসফুল নোটিস আর ফিরে যাওয়ার পথে একটি লোক কাছে এসে গলা নামিয়ে জিজ্ঞেস করত, ‘টিকিট লাগবে?’ ঠিক একই ঘটনা দেখেছিলাম অনেক পরে আমস্টারডামে, ভ্যান গঘের মৃত্যুশতবর্ষের প্রদর্শনীতে। সেই প্রদর্শনীর টিকিট একমাস আগেই সব বিক্রি হয়ে গিয়েছিল। কেবল কয়েকটা ফেরত-আসা টিকিট বিক্রির জন্যে ছিল। ভ্যান গঘ মিউজিয়াম প্রাঙ্গণে ঢোকার মুখে একজন ওলন্দাজ যুবক আমাকে দাঁড় করিয়ে বললে, ‘কাউন্টারে টিকিটের দাম কুড়ি গিল্ডার, কিন্তু সেখানে টিকিট পাওয়ার সম্ভাবনা খুব কম। আমার কাছে তুমি পাবে ষাট গিল্ডারে।’ আমি ব্ল্যাকেই টিকিট কিনতাম। ভাগ্যক্রমে আমি টিকিট পেয়েছিলাম, কিন্তু সে টিকিট ছিল সন্ধেবেলার। সেই অপরিচিত অনাত্মীয় শহরে আমি সারাদিন কী করে কাটাব? আমাকে দু’টি অতি সাধারণ দুর্নীতির আশ্রয় নিতে হল। আমি বললাম, সেদিন সন্ধেবেলার ফ্লাইটে ফ্র‌্যাঙ্কফুর্টের টিকিট কেনা আছে। সবটা মিথ্যে নয়। আমার ফ্লাইট ছিল পরের দিন। দ্বাররক্ষিণী খুব জাঁদরেল মহিলা। তিনি আমার টিকিট দেখতে চাইলে আমি বললাম, তাহলে আমাকে এখন তিরিশ মাইল দূরে ক্যাস্ট্রিকামে যেতে হবে। এছাড়াও আমি অনেক কিছু বললাম, যা মিথ্যা নয়। যেমন,আমি সুদূর ইন্ডিয়া থেকে আসছি, আমি একজন আর্ট রাইটার, ইত্যাদি। কিন্তু যেটুকু মিথ্যে ছিল তাকে ‘দুর্নীতি’ বলাটা কি নীতিবাগীশের মতো হবে না?

আসলে, নির্দোষ মিথ্যা বলাটা দুর্নীতি হিসাবে ধর্তব্য নয়। কিন্তু নীতিবিরুদ্ধ হলেও, কোন কাজটা নির্দোষ তার কোনও সুনির্দিষ্ট মাপকাঠি নেই। যে কোনও আইন অবজ্ঞা করা-ই দুর্নীতি, এমনকী, পথচলার আইনও। জেব্রা ক্রসিংয়ে ট্রাফিক সিগনাল মেনে রাস্তা পার না হওয়ার প্রবণতা আমাদের সকলের। দুই ক্রসিংয়ের মাঝে রাস্তার যে কোনও জায়গায় রাস্তা পারাপারের অভ্যাস কোনও সভ্য দেশেই নেই। এবং আমরা এই ধরনের বেআইনি কাজ করার অভ্যাসকে দুর্নীতি বলে মনেই করি না।

আমরা ‘দুর্নীতি’ বলতেই বুঝি বেআইনি টাকা লেনদেন এবং অসদুপায়ে কোটি কোটি টাকার মালিক হওয়া। কারণ, এসব দুর্নীতির নেতা ক্ষমতাবান, সম্মানিত, বহু-পরিচিত ব্যক্তি যাদের কীর্তি প্রকাশ পেলে তা সাধারণ মানুষের কাছে সমাজের উঁচুতলার কেচ্ছা বা স্ক‌্যান্ডাল হিসাবে খুবই উপভোগ্য।

নীতি থেকে দুর্নীতির দূরত্ব কতটা? নীতির সঙ্গে নৈতিকতার সম্পর্ক না আইনের সম্পর্ক কি ঘনিষ্ঠ? বলা বাহুল্য, এমন পরিস্থিতি সহজে ঘটে না যখন আইনবিরোধী কাজ নৈতিকতা বিরোধী নয়। কিন্তু পরাধীন ভারতে গান্ধীজি যে ‘আইন অমান্য আন্দোলন’ করেছিলেন, বা এখনও যখন সরকারের বিরোধী দলগুলি কোনও সরকারি সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে, তখন আইন অমান্য করাই দস্তুর। এই আইন অমান্য করাকে আমরা কি নৈতিকতার বিরোধী বলতে পারি? এই আইন-ভাঙা আন্দোলনকে অনৈতিক মনে করা হয় না, তার কারণ এইসব আন্দোলন করা হয় দেশ বা সমাজের কল্যাণের স্বার্থে, অন্তত সেটাই আন্দোলনকারীদের ঘোষিত দাবি। কারও ব্যক্তি বা কোনও গোষ্ঠীস্বার্থে এই আমান্য করা হয় না।

[আরও পড়ুন: এলোকেশী, মুক্তবেণী মাহশা আমিনির মৃত্যুতে জেগে উঠেছে ইরান]

কিন্তু ‘সুনীতি’ শব্দটিতে নৈতিকতার অনুষঙ্গ নেই। যা নৈতিক তার সদর্থ স্বতঃসিদ্ধ। ‘সুনীতি’-র অর্থ ইংরেজিতে বললে বোঝায় ‘পলিসি’। ছেলেবেলা অনেক দোকানে দেখতাম একটা কার্ডবোর্ডে লেখা থাকত– ‘অনেস্টি ইজ দ‌্য বেস্ট পলিসি’, অর্থাৎ সততা একটা চারিত্রিক গুণ নয়, বাণিজ্যনীতি! এই নীতি অনুসরণ করে ব্যবসা যদি বাড়ে ও লাভজনক হয়,খদ্দের আকৃষ্ট করা যায়,
তবে এই পলিসি আর পরিবর্তনের আর প্রয়োজন নেই।

কিন্তু কদাচ এমন বাণিজ্যে লক্ষ্মী বসত করেন। বাণিজ্যে অনেক অপ্রত্যাশিত ক্ষয়ক্ষতি থাকে। সেসব কাটিয়ে উঠতে যে বাণিজ্যনীতি পরিবর্তনের প্রয়োজন হয়, তাতে নৈতিকতা রক্ষার চেয়ে আইনরক্ষাই প্রধান বিবেচ্য। এবং অনেক সময় দুর্নীতির আশ্রয় নেওয়া অনিবার্য হয়ে পড়ে।

আমাকে একজন মিষ্টির দোকানের মালিক বলেছিলেন, এক মন চিনির রসে দুটো আরশোলা সারারাত সুখসায়রে সাঁতার কেটে মরে পড়ে আছে। এখন সকালে দোকানে এসে সেই দৃশ্য দেখে আমি কী করব? এক মন চিনির রসটা ফেলে দেব, না আরশোলা দুটো ফেলে দেব?

(মতামত নিজস্ব)
লেখক কলা ঐতিহাসিক
[email protected]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ