কিশোর ঘোষ: আমাদের রাষ্ট্রপতির নাম দ্রৌপদী মুর্মু, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সম্প্রতি শুরু হয়েছে WPL। মেয়েদের আইপিএল। পুরুষ ক্রিকেটারদের মতোই কোটি টাকা নিয়ে ক্লাব ক্রিকেট খেলছেন হরমনপ্রিত কৌর, স্মৃতি মান্ধানা, রিচা ঘোষরা। এদেশের লন টেনিস মানে সানিয়া মির্জা। সদ্য অবসর নিয়েছেন, মন খারাপ ভক্তদের। ভারতীয় ব্যাডমিন্টন অথবা সাইনা নেওহাল, পিভি সিন্ধু, এভাবে বলাই যায়। ইতিমধ্যে ভারতীয় বাহিনীর সদস্য হিসেবে যুদ্ধবিমান উড়িয়ে তাক লাগিয়েছেন মহিলারা। এদেশের পৃথিবীখ্যাত ইতিহাসবীদের নাম রোমিলা থাপার। সবচেয়ে বড় অ্যাকামিডিশিয়ান গায়েত্রী চক্রবর্তী স্পিভাক। তালিকা দীর্ঘ। আসল কথা সভ্যতা যত দরজা-জানলা খুলে দিয়েছে বৈষম্যহীন সূর্যের দিকে তত আলোকিত হয়েছে অর্ধেক আকাশ। নেপথ্যে নারী আন্দোলন, যা নারী দিবসের উৎস।
‘সন্তান উৎপাদনের যন্ত্র’ থেকে একজন দ্রৌপদী মুর্মু কিংবা একজন রোমিলা থাপার হয়ে ওঠার লড়াইকেই আসলে স্বীকৃতি দিয়েছে রাষ্ট্রসংঘ। তাই ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস। সমাজে মেয়েদের গুরুত্ব ও অবদানের কথা মনে করিয়ে দিতেই এই বিশেষ দিনটিকে পালন করা হয়। কিন্তু ৮ মার্চই কেন? কীভাবে শুরু হয়েছিল আন্তর্জাতিক নারী দিবস (Women’s Day) পালন?
[আরও পড়ুন: ভাড়া নিয়ে তুমুল বচসা, রাস্তাতেই যুবতীকে এলোপাথাড়ি কোপালেন অটোচালক!]
সে এক শতাব্দীরও বেশি পুরনো ইতিহাস। ১৮৫৭ সাল। মজুরিবৈষম্য, কাজের সময়, কাজের অমানবিক পরিবেশের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে নিউইয়র্ক শহরের রাস্তায় নামেন সুতো কারখানার মহিলা শ্রমিকেরা। মিছিল শান্তিপূর্ণ হলেও সহ্য হয়নি সমাজনিয়ন্ত্রক পুরুষদের। মেয়েরা এভাবে সরব হবেন ভাবতেই পারেননি তাঁরা। ফলে লেঠেন বাহিনী হামলা চালায় ওই মিছিলে। পরের ইতিহাস লেখেন জার্মান রাজনীতিবিদ তথা জার্মান কমিউনিস্ট পার্টির স্থপতিদের অন্যতম ডাকসাইটে নেত্রী ক্লারা জেটকিন। তাঁর নেতৃত্বেই নিউইয়র্কে ১৯০৯ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি সোশ্যাল ডেমোক্র্যাট নারী সংগঠনের পক্ষ থেকে প্রথম আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন আয়োজিত হয়। ১৯১০-এ অনুষ্ঠিত হয় দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন। ডেনমার্কের কোপেনহেগেন শহরে।
[আরও পড়ুন: ভারতের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তরে সোনা আফগান তরুণীর, শিক্ষা নিয়ে তোপ তালিবানকে]
কোপেনহেগেনের মতো বড় নারী সম্মেলন আগে দেখেনি দুনিয়া। ১৭টি দেশের ১০০ জন মহিলা প্রতিনিধি এই সম্মেলনে যোগ দিয়েছিলেন। এখানেই প্রতি বছর ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে পালনের প্রস্তাব দেন ক্লারা। সিদ্ধান্ত হয় আগামী বছর থেকে নারীর সম-অধিকারের দাবিতে এই দিনটি পালিত হবে। ১৯১৩ সাল থেকেই ৮ মার্চ নারী দিবস হিসেবে পালন শুরু করে বেশ কয়েকটি দেশ। রাষ্ট্রসংঘের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি আসে ১৯৭৫ সালে। তখন থেকেই প্রতি বছর একটি বিশেষ থিম বা ভাবনা নিয়ে পালন করা হয় এই দিনটিকে। এখনও যে ঘরের একাংশ অন্ধকার, বহু জানলা খোলা বাকি!