Advertisement
Advertisement
Harvard University

শাসকের শর্তে মিলবে অনুদান, মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়কেই ‘শিক্ষা’ ট্রাম্পের

শাসক চায় শিক্ষার অঙ্গনটি থাকুক তার শাসনে, অধীনে, নিয়ন্ত্রণে।

Harvard University funding frozen by Donald Trump
Published by: Kishore Ghosh
  • Posted:April 27, 2025 10:40 pm
  • Updated:April 27, 2025 10:40 pm  

ট্রাম্প বন্ধ করে দিচ্ছেন মার্কিন বিশ্ববিদ‌্যালয়গুলির জন‌্য সরকারের অনুদান। বিপুল অঙ্কের টাকা মিলবে একমাত্র সরকারের শর্ত মানলেই।

সর্ব যুগে, সর্ব দেশে, সর্ব অবস্থায় শাসকের মনে একটি ভয় আছেই আছে। সেই ভয় শাসিতর শিক্ষা, ভাবনা ও প্রশ্নের অধিকার নিয়ে। শিক্ষাই ভাবনার আঁতুড়ঘর। আর ভাবনাই মানুষের মনে আনে সেই উর্বরতা, যা জন্ম দেয় প্রশ্নের। অতএব শাসক চায় শিক্ষার অঙ্গনটি থাকুক তার শাসনে, অধীনে, নিয়ন্ত্রণে।

Advertisement

শিক্ষার আলো নিভিয়ে দিয়ে মানুষকে মধ‌্যযুগীয় অথবা একেবারে প্রাচীন অন্ধকারে নিক্ষেপ করা আর সম্ভব নয়। কিন্তু শিক্ষার উন্নতির অজুহাতে শিক্ষার পিছনে শাসক এখন আর্থিক অবদানে রাজি হয় একটিই শর্তে। সেই শর্তটি হল, শিক্ষা যেন মানুষকে শাসক-বিরোধী না-করে তোলে। শাসকের দেখানো পথেই যেন দেশের মানুষ বিনা প্রশ্নে ও সংশয়ে চলতে শেখে, কোনও বিরোধী মত না গড়ে ওঠে– তবেই শাসক শিক্ষার জন‌্য টাকা ঢালবে। নচেৎ সরকারি অর্থসাহায‌্য শিক্ষা-সংস্থাগুলি থেকে সরিয়ে নেওয়া হবে।

সম্প্রতি আমেরিকায় যা ঘটল, বা ঘটছে, তা শিক্ষার প্রতি শাসকের মনোভাবকে বড় বেশিই প্রকট করে তুলেছে। কিছু দিন আগে মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট ভান্স বলেছেন, বিশ্ববিদ‌্যালয় মানুষের শত্রু। আর এখন তো মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প পরপর বন্ধ করে দিচ্ছেন মার্কিন বিশ্ববিদ‌্যালয়গুলির জন‌্য সরকারের অনুদান। প্রতে‌্যকটি বিশ্ববিদ‌্যালয়কে তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, বিপুল অঙ্কের যে-সমস্ত অনুদান এই বিশ্ববিদ‌্যালয়গুলিকে বঁাচিয়ে রেখেছে, তা শর্তহীন নয়।

সরকারের শর্ত মেনে নিলে অনুদান চালু হতে পারে, তবে তারও কোনও গ‌্যারান্টি নেই। এতে যদি মার্কিন বিশ্ববিদ‌্যালয়গুলি গোল্লায় যায় তো যাক। যদি সে-দেশে শিক্ষা ব‌্যবস্থা ভেঙে পড়ে তো পড়ুক। এই হল ট্রাম্প সরকারের মোদ্দাকথা। রবীন্দ্রনাথের বিশ্বভারতীর কথাই ধরা যাক। রবীন্দ্রনাথ যে স্বাধীন ভাবনা ও শিক্ষার কথা ভেবেছিলেন, শিক্ষার যে মুক্ত পরিবহ ও আদর্শের কথা ভেবেছিলেন, বিশ্বভারতী কেন্দ্রীয় সরকারের অর্থ সাহায‌্য নেওয়ার পর রবীন্দ্রনাথের আদর্শের উপর কি কেন্দ্রীয় সরকারের ছায়াপাত ঘটেনি?

প্লেটো তঁার ‘রিপাবলিক’ বইয়ে জ্ঞানচর্চা নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা করেছেন। এবং জ্ঞানের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে প্লেটো বারবার বলেছেন, জ্ঞান হল সতে‌্যর সন্ধান। এবং সত‌্যকে আবেগ, বিশ্বাস, সংস্কার, ধর্মীয় বা সাংস্কৃতিক ধারণার পথে সন্ধান করলে চলবে না। সতে‌্যর সন্ধানের জন‌্য প্রয়োজন আবেগবর্জিত, সংশয়তাড়িত, অন্বেষী প্রশ্ন। যে-প্রশ্ন উঠে আসবে বিশুদ্ধ যুক্তির সিঁড়ি দিয়ে। অর্থাৎ যুক্তিনির্ভর আবেগবর্জিত জ্ঞানের পথ দেখিয়েছেন প্লেটো। যে-পথে পদে পদে থাকবে বিরোধী মতের পরিসর। এবং বাক্‌স্বাধীনতার অধিকার।

প্লেটো যে বিশ্ববিদ‌্যালয়ের স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন, তার উপর নেই শাসকের অধিকার ও শাসন। তার সবটুকু সম্পূর্ণ সমর্পিত নিখাদ, স্বাধীন, মুক্ত জ্ঞানচর্চায় ও অন্বেষে।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement