Advertisement
Advertisement

Breaking News

কেমন আছেন পাকিস্তানের হিন্দুরা?

পাক-দেশে থেকেও ওঁরা না-পাক! হিন্দু বলে জোরজুলুমের শিকার! পাক সরকার সিন্ধে সম্প্রতি হিন্দুর ধর্মাচরণ সুরক্ষিত করতে চাইলেও ছবিটা কি বদলেছে?

Hindu Life In Pakistan: An Overview

পাক-দেশে থেকেও ওঁরা না-পাক! হিন্দু বলে জোরজুলুমের শিকার! পাক সরকার সিন্ধে সম্প্রতি হিন্দুর ধর্মাচরণ সুরক্ষিত করতে চাইলেও ছবিটা কি বদলেছে?

Published by: Sangbad Pratidin Digital
  • Posted:October 24, 2016 3:32 pm
  • Updated:October 24, 2016 3:38 pm

পাক-দেশে থেকেও ওঁরা না-পাক! হিন্দু বলে জোরজুলুমের শিকার! পাক সরকার সিন্ধে সম্প্রতি হিন্দুর ধর্মাচরণ সুরক্ষিত করতে চাইলেও ছবিটা কি বদলেছে? অবস্থা দেখে মাথা কুটলেন অনির্বাণ চৌধুরী

পাকিস্তান সরকার অনেক দিন ধরেই উদ্যোগী হয়েছে হিন্দু মন্দির সংস্কারে। এবার প্রায় ৪০ কোটি টাকা খরচ করে সিন্ধ প্রদেশের হিন্দু মন্দিরগুলোর নিরাপত্তা সুদৃঢ় করছেন তাঁরা। বেশ কথা। এর পর আশা করাই যায়, ওদেশের হিন্দুরা ধর্মকর্ম নিয়ে ভালই থাকবেন!
তবে কী, ‘কেমন আছেন’- জানতে চাওয়া হলে সত্যিটা তো কেউই বলেন না! যে যাঁর মতো যতটা সম্ভব মুখটি হাসিতে ভরিয়ে প্রত্যুত্তর দেন- ‘ভাল আছি’!
এই ছবিটাও কিন্তু আমার দেশের। মানে, ভারতের। তারই ভেঙে আলাদা হয়ে যাওয়া একটা টুকরো পাকিস্তানে হিন্দুদের জন্য নানা সংস্কারের প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে যদি এই প্রশ্নটা করা হয়? আরও একটু স্পষ্ট করে বললে, প্রশ্নটা যদি করা হয় পাকিস্তানি হিন্দুদের?
তাঁরা খুব সম্ভবত ‘ভাল আছি’- এই উত্তরটা দিতে পারবেন না। কেন না, তাঁরা শুধুই হিন্দু নন, পাকিস্তানের হিন্দু। নানা জটিলতার মধ্যে দিয়ে গা বাঁচিয়ে চলতে হয় তাঁদের। তাছাড়া সংখ্যালঘুরা বিশ্বের ইতিহাসে কবেই বা কোথায় ভাল থেকেছে?

Advertisement

pakhindu1_web
কিন্তু হিন্দু শব্দটা ক্রমাগত মাটি খুঁড়ে চলেছে। খুঁড়তে খুঁড়তে সে দাঁড় করিয়ে দিচ্ছে সমান উচ্চারণের একটা শব্দের সামনে- সিন্ধু! এই যে ভক্তিভরে, দেশপ্রেমে আপ্লুত প্রাণ নিয়ে জাতীয় সঙ্গীত গেয়ে যাই, সেই ‘পাঞ্জাব সিন্ধু’র সিন্ধু! প্রত্নতত্ত্বের দাবি ধরলে যেখান থেকে প্রথম শুরু হয়েছিল হিন্দু সভ্যতা। সিন্ধুর পারে যারা বাস করত, তারাই উচ্চারণ-বিকৃতিতে হিন্দু। সিন্ধুস্থান অতএব হিন্দুস্তান।
ওদিকে রামায়ণ-মহাভারতও দাবি ছাড়ছে না। বলে চলেছে, লাহোর নগরীর পত্তন করেছিলেন রামের ছেলে লব। কুশও কিছু কম যান না। তাঁর হাতে গড়ে ওঠে কসুর। দুটোই এখন পাকিস্তানে। আবার মহাভারতের গোটা সঙ্কটটাই আসছে গান্ধার প্রদেশ থেকে। যার কিছুটা একসময় ছিল বর্তমান পাকিস্তানে। চোখে কাপড় বেঁধে গান্ধারকন্যা এলেন হস্তিনাপুরে, এলেন তাঁর ভাই শকুনি। শুরু হল রাজনীতির পাশাখেলার ধারাবাহিকতা।
সনাতন হিন্দু ধর্মের দিকে তাকালেও হাত বাড়াতে হয় পাকিস্তানের দিকেই। হিন্দুধর্ম যে আদিশক্তি থেকে সমস্ত দেবদেবীর উদ্ভবের দাবি তুলে থাকে, সেই হিঙ্গুলা মাতার মন্দিরটি পাকিস্তানের হিংলাজে। যা কি না হিন্দুর একান্ন পীঠের অন্যতমও! তা বাদেও পাকিস্তানে হিন্দু মন্দিরের কমতি নেই। অন্তত ৩০০টির কাছাকাছি তো হবেই!

Advertisement

pakhindu2_web
হলে কী হয়! আদিগঙ্গার অবস্থা দেখছেন না! মূল ধারা সে-ই, অথচ এখন পাঁকে পরিপূর্ণ। স্নান তো দূরের কথা, তর্পণের এক আঁজলা জলও সেখানে মেলা ভার। পাকিস্তানের হিন্দু সংস্কৃতির সঙ্গেও সেটাই হয়েছে। হিন্দুত্ববাদ সেই ১৯৪৭ সাল থেকেই বয়ে গিয়েছে ভারতের খাতে। সুমারির হিসেব বলছে, সেই সময় প্রায় ৮০ লক্ষ হিন্দু এবং শিখ পূর্ব পাকিস্তান (যা কি না এখন বাংলাদেশ), পাকিস্তানের পাঞ্জাব (কাশ্মীরের মতো পাঞ্জাবেরও কিছুটা পাকিস্তানের! কে জানে কেন, পাঞ্জাব দখল নিয়ে ততটা চিন্তিত নয় কেন ওরা!), সিন্ধ এবং খাইবার-পাখতুনখোয়া থেকে চলে আসেন ভারতে। সেই দলে দেব আনন্দ, রাজ কাপুর, মনোজ কুমার, যশ চোপড়া, বলরাজ সাহনি এঁরাও ছিলেন। উল্টো পিঠে, প্রায় সমপরিমাণ মুসলমান চলে যান পাকিস্তানে।
সেই শুরু! মাথার মধ্যে গেঁথে যাওয়া- হিন্দুর দেশ ভারত আর মুসলমানের দেশ পাকিস্তান। প্রজন্মের পর প্রজন্ম এই নিয়েই বড় হল। আরও হবে। তার মধ্যেই যতটা সম্ভব মানিয়ে-গুছিয়ে নিয়ে থাকবে পাকিস্তানের হিন্দুরা।

pakhindu3_web
মানিয়ে-গুছিয়ে না নিয়ে পাকিস্তানের হিন্দুদের উপায়ও নেই। এই আমরাই যেমন নিম্ন মধ্যবিত্ত মুসলমান শ্রেণিকে মানুষের দলে ফেলতে চাই না, তেমনই পাকিস্তানও তার গরিব বাসিন্দা হিন্দুদের নিয়ে তেমন করে ভাবে না! ভাবতে তাদের দায় পড়েছে! কেনই বা ভাববে? গোষ্ঠীতন্ত্রের সভ্যতায় দলে খাটো মানুষ কোনও দিনই কি খুব একটা আমল পেয়েছে?
ফলে, পাকিস্তানে হিন্দুরা টিকে আছে! ব্যস, এই পর্যন্তই! নানা ব্লগ, পাতায় ছাপা খবরে দেখা যাচ্ছে তাদের হেনস্তার কথা। শোনা যায়, ওদেশে না কি মুসলমান ভাইয়েরা তিনটে অপশন দিয়ে থাকেন হিন্দুদের। যখন ঝামেলা শুরু হয় জোরদার। ১. মুসলিম হয়ে যাও, ২. পাকিস্তান ছেড়ে চলে যাও (তা বলে জিনিসপত্র কিছু নিয়ে যেতে পারবে না! ওটা থাকবে পাক-মানুষের দখলে। প্রাণটা নিয়ে যেতে পারছো, সেটাই কি বড় ব্যাপার নয়?), ৩. এখানে পড়ে পড়ে মার খাও, মার খেয়ে মানুষ থেকে লাশ হয়ে যাও! লেখা বাহুল্য- দ্বিতীয় অপশনটাই বেছে নেন দলে খাটো হিন্দুরা। ওটাই সবচেয়ে উদার এবং প্রকৃত প্রস্তাবে সম্মানজনক! এভাবে অর্থনীতিরও পরিবর্তন ঘটে। জোরজুলুমের ধারায় কোনও মুসলিম পরিবারের সম্পত্তি বাড়তে থাকে। আর, ও দেশ থেকে অন্য দেশে যাওয়া হিন্দুরা গরিবের সংখ্যা বাড়ায়।

pakhindu4_web
আবার একটু সমীক্ষায় ফেরা যাক! সেই সমীক্ষা বলছে, ১৯৪৭-এর সময়ে পাকিস্তানে না কি হিন্দুর সংখ্যা ছিল প্রায় ১৬ শতাংশ। এখন সংখ্যাটা এসে ঠেকেছে ১.৬ শতাংশে। এই ১.৬ শতাংশের বেশির ভাগটাই আবার বাসা নিয়েছে সিন্ধে। সেই জন্যই সিন্ধ সরকার ওই মুলুকে হিন্দুদের ধর্মাচরণ সুরক্ষিত করতে চাইছেন।
তা বলে সিন্ধ বা পাকিস্তানের অন্য জায়গার হিন্দুরা খুব নিশ্চিন্তে কিন্তু নেই। তারা বেশির ভাগ সময়েই খুব সঙ্কুচিত হয়ে থাকে। কে জানে, কখন অজান্তে কী অপরাধ হয়ে যায়! যেমন, লাহোরের নানা অনুষ্ঠান-বাড়িতে ঝোলানো থাকে স্পষ্ট বিজ্ঞপ্তি- এখানে হিন্দুদের কোনও উৎসব পালন করা যাবে না। এমনকী, মাঠে বা পথেও নয়! কেন না, মুসলিমরা হিন্দুদের ধর্মকৃত্য দেখতে মোটেই পছন্দ করে না।
বিয়ে? এতদিন পর্যন্ত পাকিস্তানে হিন্দু ম্যারেজ অ্যাক্টও ছিল না। এখনও যে আছে, তা নয়! তবে ওদেশের পার্লামেন্টে প্রস্তাব উঠেছে হিন্দু বিবাহ আইন পাস করার! হয়তো তা পাস হয়ে যাবেও। তা বলে ভোট?  উঁহু, হিন্দুদের মোটেই সমান রাজনৈতিক অধিকার দেওয়া যাবে না! তারা আলাদা দল গঠন করুক, পঞ্চায়েতের মতো, সেই দলের প্রতিনিধিকে তারা ভোট দিক, অতঃপর সেই নির্বাচিত প্রতিনিধি পাক-সরকারের কাছে হিন্দুদের দাবি-দাওয়া তুলে ধরবেখন! এটাই কি যথেষ্ট নয়?
ওদিকে, ভারত-পাকিস্তান ক্রিকেট ম্যাচের সময় খোঁচা দেওয়া তো আছেই! যারা কস্মিনকালেও হিন্দুদের ছায়া মাড়াতে চায় না, সেই মুসলমানরাই তখন দলে ভারি হয়ে এসে জানতে চায়- ”বলো, তুমি ভারতকে সমর্থন করো না পাকিস্তানকে?” তাজ্জব তো! পাকিস্তান ওদেশের হিন্দুরও দেশ! সেই জন্যই তো শুধু হিন্দু না বলে বলা হচ্ছে পাকিস্তানি হিন্দু। তাহলে আর জাতীয়তাবোধ নিয়ে প্রশ্ন তোলা কেন? স্রেফ সংখ্যাগুরুর রাজনীতি, আর কোনও কারণ নেই! স্কুলে যেমন দুর্বল ছেলেটা সমস্ত সবলের মার খায়, ঠিক তেমনই! কেন না, শুধু হিন্দুই তো নয়, খ্রিস্টানও পড়ে পড়ে মার খাচ্ছে পাকিস্তানে। এমনকী মার খাচ্ছে শিয়া সম্প্রদায়ের মুসলিমরাও! তারাও তো সংখ্যালঘু!

pakhindu5_web
অতএব, ‘আমি আজকাল ভাল আছি’, এই বলেই নিজেদের সান্ত্বনা দিচ্ছে পাকিস্তানের সংখ্যালঘুরা। যাদের পয়সা এবং ক্ষমতার জোর বেশি, তারা হয়তো ভালই আছে। তারা নিজেদের মধ্যে গঠন করেছে নানা কমিটি। যেমন, পাকিস্তান হিন্দু পঞ্চায়েত, করাচির হিন্দু জিমখানা, পকিস্তানি হিন্দু ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন ইত্যাদি প্রভৃতি! যতটা সম্ভব রক্ষা করতে চাইছে কৌমের কাঠামো!

পুনশ্চ: বয়স হলে এই এক সমস্যা হয়, কথা থামতেই চায় না! আমারও কিছু কথা বাকি আছে। আজকাল মাঝে মাঝেই আয়না দেখার এক বেয়াড়া অভ্যাস হয়েছে। সে দিন আয়নায় দেখলাম, ভারতেও শুরু হয়ে গিয়েছে সংখ্যাগুরুর রাজনীতি। মুসলমান বলে, গরু খায় বলে মেয়েদের ধর্ষণ করছে উদারপন্থী হিন্দুরা, মেরে ফেলছে পুরুষদের, বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দিচ্ছে। পাকিস্তানেও এসব হয় বলে অভিযোগ করে না হিন্দুরা? কী আর করা! দুর্বলের কথায় কে-ই বা কবে পাত্তা দিয়েছে!

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ