Advertisement
Advertisement

অন্ত্যেবাসীর মুখে ভাষা দিয়েছেন যে মহারানি

তাঁর অসাধারণ সব গল্প-উপন্যাসের সুবাদে তিনি বাংলা সাহিত্যে ‘মহারানি’ হয়েই আছেন, থাকবেন৷

Memoir of mahashweta devi
Published by: Sangbad Pratidin Digital
  • Posted:July 31, 2016 4:46 pm
  • Updated:July 31, 2016 4:46 pm

আফসার আহমেদ: প্রথমবার সামনে থেকে দেখে তাঁকে মনে হয়েছিল যেন-বা মহারানি! ভীষণ মুডি, ভীষণ অকপট, ভীষণ সাহসী৷
হাতে সিগারেটের প্যাকেট৷ দেশলাই ঠুকে জ্বালালেন৷ ছোট্ট আগুনশিখা হীরের মতো ঝিকমিক করে উঠল৷
এঁরই সাহিত্যগুণে মুগ্ধ আসমুদ্রহিমাচল?  

আজীবন তারুণ্যে ভরপুর ছিলেন তিনি৷ আর ছিল তাঁর সম্রাজ্ঞীর মতো সাহিত্যে সহজ পদচারণা৷ অনুচ্চ স্বরে তিনি কথা বলতেন না, তিনি ছিলেন উচ্চকিত, স্পষ্ট ও সাহসী সাহিত্যিক৷ বাংলা সাহিত্যে আবিষ্কার করেছেন এক ভূখণ্ড৷ আমরা যাঁরা তাঁর ভক্ত ও অনুরাগী, তাঁকে দেখেছি মহারানির মতো৷ অন্ত্যেবাসী আদিবাসী মানুষের মুখে ভাষা দিয়েছেন তিনি আবিষ্কারের ভূখণ্ডে৷ তিনি মহাশ্বেতাদেবী৷ তাঁর অনুরাগী লেখকরা দলে বেশ ভারীই, আর অনুগামীও হয়েছেন বেশ কিছু লেখক৷ উত্তর-প্রজন্মের লেখকদের মধ্যে মহাশ্বেতাদেবী গ্রহণীয় শুধু নন, আদরণীয়ও৷ যে-লেখকরা পরের প্রজন্মের লেখকদের পথ দেখান, তাঁদের মধ্যে মহাশ্বেতাদেবী ছিলেন অন্যতম৷ কী ছিল তাঁর লেখার জাদু?

Advertisement

বিষয় হিসাবে আবিষ্কৃত ভূখণ্ডের কথাই বলব না, বলব সেখানকার মানুষদের অসহায়তা, নিরুপায়তা, ক্ষুধা, দারিদ্র, নিপীড়ন, শোষণ, অপশাসন–যা, তিনি দেখিয়েছেন তাঁর আখ্যানে৷ শুধু তাই নয়, মানুষের অধিকারের কথা বলেছেন৷ সোজা কথায় ‘মানবিক’ হয়ে উঠেছেন৷ কোনও প্যাঁচপয়জার তাঁর লেখায় থাকত না৷ সোজা কথা সোজাভাবে বলেছেন৷ সেটা সাহিত্য হয় কি না-হয় সেসব নিয়ে ভ্রূক্ষেপ করতেন না৷ অথচ তিনি যেভাবে লিখতেন, তাঁর লেখার আঙ্গিকের প্রভাব পরবর্তী প্রজন্মের কাছে সবচেয়ে বেশি৷ একাই তিনি লেখার একটা ধারার প্রবর্তন করেছেন৷

সেই সবে লিখছি, আমার অল্প বয়সে প্রথম দেখি মহাশ্বেতাদেবীকে সাহিত্য অকাদেমির এক গোলটেবিলে৷ আমি তখন ‘নবীন’ হিসাবে আমন্ত্রিত৷ ১৯৮০ সালের কথা বলছি৷ সেই বছর তিনি ‘সাহিত্য অকাদেমি’ পুরস্কার পেয়েছেন৷ জনপ্রিয়তার তুঙ্গে৷ বসার আগে টেবিলে কাঁধ থেকে খুলে ব্যাগ রাখলেন সশব্দে৷ ৫৪-৫৫ বছর বয়স তখন৷ ভাষা পরিষদের কনফারেন্স রুমে আরও বেশ কিছু লেখকের সমাগমের মধ্যে তাঁকে মনে হচ্ছিল মহারানির মতো ঝকঝকে৷ খুব মুডি৷ ডানহাতে ধরা ছিল আস্ত একটা সিগারেটের প্যাকেট৷ তার থেকে সিগারেট বের করে দেশলাই কাঠি ঠুকে ধরালেন৷ মুখের সামনে আগুনের ছোট্ট শিখা হীরের মতো ঝিকমিক করে উঠেছিল৷ সেই আলোচনায় যাঁরা ছিলেন, তাঁরা হলেন অসীম রায়, অমিয়ভূষণ মজুমদার, কবিতা সিংহ, পূর্ণেন্দু পত্রী, অসমিয়া সাহিত্যিক বীরেন্দ্রকুমার ভট্টাচার্য ও মণিপুরি লেখক বিনোদিনীদেবী৷ আজ তাঁরা কেউই নেই৷ মহাশ্বেতাদিও চলে গেলেন৷ কল্পনা করি, যেখানে তিনি গেলেন, সেখানেও সেদিনের মতো তাঁকে আজ ঝকঝকে লাগছে৷

দিল্লিতে সাহিত্য সম্মেলন ও পুরস্কার নিতে বেশ কয়েকবার গিয়েছি, দেখা হয়েছে আলাপ হয়েছে অন্য ভাষা ও রাজ্যের সাহিত্যিকদের সঙ্গে৷ তাঁরা একবাক্যে মহাশ্বেতাদির নাম করতেন, প্রশংসা করতেন৷ মধ্যপ্রদেশে সাহিত্য অকাদেমির ভ্রমণভাতা নিয়ে গিয়েছি, জব্বলপুরে মিলন সাহিত্য সংস্থার সঙ্গে আড্ডায় তাঁরা মহাশ্বেতাদেবীর কথা বলেছেন৷ বাড়ি-বাড়ি প্রবীণ সাহিত্যিকদের কাছে গিয়েছি, তাঁদের মুখেও এক কথা৷ তাঁর ভাষা ও সাহিত্যের গুণে ভারতের অন্য প্রান্তে, তাঁরই নামের সহযোগে, আমরা আমাদের আত্মপরিচয় খুঁজে পেয়েছি৷ ‘জ্ঞানপীঠ’, ‘পদ্মশ্রী’, ‘পদ্মবিভূষণ’, ‘রামন ম্যাগসাইসাই’ কত পুরস্কার-সম্মান পেয়েছেন৷ সেই নক্ষত্রের পতন হল৷

মহারানি কি কম পড়েছে?

না, তাঁর অসাধারণ সব গল্প-উপন্যাসের সুবাদে তিনি বাংলা সাহিত্যে ‘মহারানি’ হয়েই আছেন, থাকবেন৷

২০২৪ এর পূজা সংক্রান্ত সমস্ত খবর জানতে চোখ রাখুন আমাদের দেবীপক্ষ -এর পাতায়।

চোখ রাখুন
Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement