উর্মি খাসনবিশ: গতমাসের ঠিক এই দিনেই ভারতে এসেছিল ঐতিহাসিক পরিবর্তন৷ দেশ থেকে দুর্নীতি দূর করতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দেশের অভ্যন্তরেই চালিয়েছিলেন সার্জিক্যাল স্ট্রাইক৷ রাতারাতি বাতিল ঘোষণা করা হয়েছিল ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট৷ জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল বাজারে আসবে নতুন ৫০০ ও ২০০০ টাকার নোট৷
এই ঘটনার পর অতিক্রান্ত হয়েছে বেশ কিছুটা সময়৷ বাজারে এসেছে প্রায় ভাঙতি অযোগ্য ২০০০ টাকার নোট৷ রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার তরফ থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে নতুন ১০০০ টাকার নোট এখনই আসছে না৷ বাজারে এলেও ৫০০ টাকার নোটের জোগান প্রয়োজনের তুলনায় অনেকটাই কম৷ আর তাই এক মাস কেটে গেলেও এটিএম এবং ব্যাঙ্কের লাইনে প্রতিদিনই দেখা যাচ্ছে শয়ে শয়ে মানুষের লম্বা লাইন৷ আর এই লাইনগুলিতেই মানুষ মরছে কম বেশি প্রায় প্রতিদিনই৷ ৩০ দিনে এখনও পর্যন্ত ব্যাঙ্ক এবং এটিএমের লাইনে মৃত্যু হয়েছে কম করে ৯০ জনের৷
কিন্তু আম আদমি হার মানেনি৷ ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করছেন এখনও৷ দেশ থেকে দুর্নীতি দূর হওয়ার অপেক্ষা৷ কালো টাকা আমানতকারীদের শাস্তি হওয়ার অপেক্ষা৷ প্রধানমন্ত্রীর চাওয়া ৫০ দিন সময় স্বচ্ছন্দে দিয়ে দিয়েছেন তাঁরা৷ টাকা নিয়ে নাজেহাল হলেও মুখে একটাই কথা, ‘জয় হিন্দ’৷ আর তাই দেশ মাতার খোয়া যাওয়া সম্মান পুনরুদ্ধার করতে গিয়েই এক মাসে ৯০ জন সাধারণ মানুষ ব্যাঙ্ক এবং এটিএমের লাইনে শহিদ হয়ে গেলেন৷ কিন্তু আশ্চর্যভাবে এই মৃত্যুগুলিকে নিয়ে রাজনীতির বেশি আর কিছুই হল না৷ এই মানুষগুলোর পরিবারের সদস্যরা প্রিয়জনের শেষকৃত্য সম্পন্ন করতে পারলেন না আবার টাকার অভাবে তাঁরাও ব্যাঙ্ক, এটিএমের বাইরে লাইন দিলেন সেই খবর আমরা কেউ রাখিনি৷ রাখবই বা কেন বলুন? ‘বড়ে বড়ে দেশো মে, অ্যাইসি ছোটি ছোটি বাতে হোতি রহেতি হ্যায় সেনোরিটা৷’ অতএব গৌরী সেনের অপেক্ষা না করেই দেশের মিত্রোঁরা নিজেদের জমানো টাকারও বরাদ্দ অ্যামাউন্ট তুলতে ছুটে বেড়াচ্ছেন এই ব্যাঙ্ক থেকে সেই ব্যাঙ্কে৷
এক মাস আগে ঠিক এই দিনটাতেই সাধারণ মানুষ ভেবে নিয়েছিলেন দেশে কালো টাকা বাতিল হলে, কালো ধন আমানতকারীদের রাতের ঘুম উড়ে যাবে৷ এক রাতে সাধারণ মানুষ হয়ে যাবেন রাজা৷ কালো টাকা মজুতকারীরা হাজতবাস করবেন৷ মূলত এমন রঙিন স্বপ্নকে কেন্দ্র করে এক মাস কেটে গেলেও, কালো টাকার ব্যাপারীদের নজিরবিহীন শাস্তি পেতে দেখা গেল না৷ এক মাস কেটে গেলেও সাধারণ মানুষ রাজা হতে পারল না৷ কোনও কালো টাকার মালিক ব্যাঙ্ক আর এটিএমের লাইনে অপেক্ষা করতে করতে মরে গেলেন না৷
অবশ্য তাতে কী? আরও ২০ দিন বাকি রয়েছে৷ অপেক্ষা জারি রাখতে হবে৷ ২০০০ টাকা সাধারণ মানুষ ভাঙাতে পারুক চাই না পারুক ২০০০ টাকার নোটের গোলাপি রং নিয়ে এক পৃথিবী লিখে ফেলা হবে৷ নোট বাতিলের সময় যখন বলা হয়েছিল দরিদ্র মানুষের কাছে ৫০০ আর ১০০০ টাকার নোট থাকেনা, সেখানে এই হতদরিদ্র মানুষগুলো ২০০০ টাকার নোট হাতে পেয়ে কী করবেন সেই প্রশ্নও করা বারণ!
কেন বারণ? কারণ নিজেদের অসুবিধার কথা বললে পাছে কেউ দেশদ্রোহী বলে! সুতরাং মিত্রোঁ অপেক্ষা করুন৷ ব্যাঙ্ক, এটিএমের লাইনে থাকুন৷ ৩০ দিন কেন ৩০ মাস অপেক্ষা করুন৷ ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট না থাকলেও মহা আনন্দে ব্যবহার করে ফেলুন প্লাস্টিক মানি৷ স্মার্টফোন হাতে না থাকলেও খুলে ফেলুন পেটিএমে অ্যাকাউন্ট৷
দেশ এগোচ্ছে সেনোরিটা! এক মাসে ৯০ জনের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে কোনও কোলাহল যেন না থাকে! সাধারণ মানুষের হয়রানির কথা যেন জানাজানি না হয়৷ কারণ ‘বড়ে বড়ে দেশোমে, অ্যাইসি ছোটি ছোটি বাতে হোতি রহেতি হ্যায়’!