Advertisement
Advertisement

Breaking News

আশঙ্কা দূর হবে প্রিয়াঙ্কার হাসিতে?

উত্তরপ্রদেশে পায়ের তলার মাটি ঝুরঝুরে থাকলে দিল্লি-দখলের সম্ভাবনাও দূর অস্ত৷ এটা বুঝেই কংগ্রেসের নির্বাচনী প্রচারকৌশলের প্রধান স্তম্ভ প্রশান্ত কিশোর বাজি ধরছেন প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর উপর৷ তাঁকেই উত্তরপ্রদেশের ভাবী মুখ্যমন্ত্রী রূপে তুলে ধরা হচ্ছে৷ সংসারী প্রিয়াঙ্কা কি রাজনীতিতে সত্যি আসবেন? পারবেন হতে হ্যামলিনের বাঁশিওয়ালা?

Poll strategist Prashant Kishor Draw the Priyanka Gandhi Card for UP in 2017
Published by: Sangbad Pratidin Digital
  • Posted:May 18, 2016 3:08 pm
  • Updated:May 18, 2016 3:38 pm

priyanka2সৌম্য বন্দ্যোপাধ্যায়: এই লেখা যখন লিখছি তখন পাঁচ রাজ্যের ‘এক্সিট পোল’-এর সমীক্ষা নিয়ে দেশজুড়ে রাজনীতির বিস্তর চর্চা চলছে৷ একমাত্র পশ্চিমবঙ্গেই রয়েছে ক্ষমতাসীনের প্রত্যাবর্তনের স্পষ্ট ইঙ্গিত৷ বাকি রাজ্যগুলিতে পরিবর্তনের ঢেউ৷ অসমে প্রথমবার বিজেপি-রাজ শুরু হওয়ার জোরালো সম্ভাবনা, তামিলনাড়ুতে আম্মার প্রস্থান এবং কেরলে ফি-বারের মতো এবারও পালাবদলের সিগন্যাল৷ তামিলনাড়ুর সঙ্গেই সবসময় জড়িয়ে থাকে পুদুচেরির ভাগ্য৷ এবার তারাও পাচ্ছে করুণানিধির কৃপা৷ চর্চা চলছে এই নিয়েই৷ কারা ডুবছে, কারা ভাসছে, কারাই বা ‘আইসবার্গ’-এর মতো একটুখানি নাক ভাসিয়ে ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে বসে থাকছে, এ নিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ৷

আমি ওই পাণ্ডিত্যের কচকচানির মধ্যে যেতে চাই না৷ চক্ষু-কর্ণের বিবাদভঞ্জনে আর তো সাকুল্যে ক’টা ঘণ্টা মাত্র৷ অপেক্ষা করাই ভাল৷ তবে হ্যাঁ, দু’টো বিষয়ে দেখছি সব পক্ষই একমত৷ প্রথমটা দিদির প্রত্যাবর্তন, দ্বিতীয়টা কংগ্রেসের আরও পিছিয়ে পড়া৷

Advertisement

পাঁচ রাজ্যে কংগ্রেসের এই পিছিয়ে পড়ার ইঙ্গিতটা যখন এল, তার ক’টা দিন আগে মাত্র একটা খবর বেশ গুরুত্ব দিয়েই প্রকাশিত হয়৷ খবরটি যাঁর কাছ থেকে এসেছে, তাঁকে নিয়ে রাজনৈতিক মহলে কিছুদিন ধরে বেশ হইচই চলছে৷ ভদ্রলোকের নাম প্রশান্ত কিশোর৷ ইন্দিরা গান্ধীর কংগ্রেসকে ঠাঁইনাড়া করে দেশে প্রথমবার যখন অকংগ্রেসি সরকার গঠন হয়েছিল, মোরারজি দেশাই যে-সরকারের প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন, সেই ১৯৭৭ সালে এই প্রশান্ত কিশোরের জন্ম৷ তার মানে, বয়স তাঁর এখন উনচল্লিশ৷ আপাতত সাকিন দিল্লি হলেও জন্মসূত্রে তিনি বিহারি৷ জনস্বাস্থ্য নিয়ে ‘ইউনাইটেড নেশন্স’-এ আট বছর কাজ করেছেন৷ তবে এখন তাঁর পরিচিতি দেশের সেরা ‘পলিটিক্যাল স্ট্র্যাটেজিস্ট’ হিসাবে৷ এই বিশেষণের কারণও রয়েছে৷ ২০১৪ সালের ‘মোদি-ম্যাজিক’ নাকি তাঁরই সৃষ্টি৷ নরেন্দ্র মোদিকে প্রধানমন্ত্রীর কুর্সিতে বসানোর পর তিনি নীতীশ কুমারের কপালেও জয়তিলক পরান৷ সেই থেকে তাঁকে নিয়ে টানাটানি৷ সেই টানাটানিতে জয়ী হয় কংগ্রেস৷ ২০১৯ পর্যন্ত কংগ্রেসের প্রচার কৌশলের দায়িত্ব তাঁর৷ আপাতত তিনি মাথা ঘামাচ্ছেন আগামী বছরের উত্তরপ্রদেশ ও পাঞ্জাবের ভোট নিয়ে৷

Advertisement

উত্তরপ্রদেশে কংগ্রেসের পায়ের তলায় মাটি ঝুরঝুরে থাকলে দিল্লিও যে সোনিয়া-রাহুলের কাছে দূর অস্ত হয়েই থাকবে, প্রশান্ত কেন, যে কারও পক্ষে এটা বোঝা জলবত্‍ তরলং ব্যাপার৷ এই অসাধ্যসাধনে প্রশান্ত একটা রিপোর্ট তৈরি করেছেন৷ ফাঁস হয়ে যায় সেই রিপোর্টই৷ তার মোদ্দা কথা, ১) উত্তরপ্রদেশে কংগ্রেস এখন কোনও প্লেয়ারই নয়৷ কারণ, ২) কংগ্রেসে এমন একটা মুখ নেই যাঁকে ঘিরে রাজ্যের মানুষ নতুন এক আশায় বুক বাঁধতে পারে৷ ৩) কংগ্রেসের উচচবর্ণ ভোটব্যাঙ্ক বিজেপি ছিনতাই করে নিয়েছে, দলিত আশ্রয় নিয়েছে মায়াবতীর কোলে, মুসলমান ভরসা খুঁজেছে মুলায়মের বুকে৷ ৪) এই অবস্থায় একটাই মুখ রয়েছে, যাঁকে সব দ্বিধা ও দ্বন্দ্ব ঝেড়ে ফেলে এগিয়ে আসতে হবে৷ প্রিয়াঙ্কা গান্ধী৷ প্রিয়াঙ্কাকেই খাড়া করতে হবে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে৷ তিনিই হতে পারেন মুশকিল আসান৷ হ্যামলিনের বাঁশিওয়ালা৷

অভ্যন্তরীণ এই রিপোর্ট খবরের কাগজে বেরনোর পর প্রশান্ত কিশোর নিজে থেকে কোনও বিবৃতি দেননি৷ বরং দেখা গেল, রাজ্যের ৬৬০টি জেলার কংগ্রেস সভাপতিদের যে সম্মেলন দিনকয়েক আগে আগ্রায় হয়ে গেল, সেখানে ৬০০ জন সভাপতি প্রিয়াঙ্কার নামে জয়ধবনি দিলেন৷ এই খবরটাও বেশ ফলাও করে কাগজে ছাপা হল৷ এ নিয়ে কংগ্রেসের কোনও পদাধিকারীর কোনও মন্তব্যও দেখা গেল না৷ বোঝা যাচ্ছে, কংগ্রেসের ‘ফার্স্ট ফ্যামিলি’র উপর প্রশান্ত বেশ একটা মোক্ষম চাপ সৃষ্টি করতে পেরেছেন৷

প্রিয়াঙ্কা যে কংগ্রেসের রাজনীতিতে নেই তা নয়, আবার আছেনও যে তাও বলা যাবে না৷ প্রতিবার ভোটের সময় দেখা যায়, পারিবারিক খাসতালুক বলে পরিচিত উত্তরপ্রদেশে গায়ে-গা-ঠেকানো তিন জেলা অমেঠি, রায়বেরিলি ও সুলতানপুরে তিনি ভাই, মা ও অন্যদের জন্য প্রচার করছেন৷ গ্রামে গ্রামে ঘুরছেন৷ জনসংযোগ করছেন৷ আরামসে মিশে যাচেছন গ্রামের মানুষজনের সঙ্গে৷ জড়তাহীন৷ কিন্তু ওই পর্যন্তই৷ ওই তিন জেলাই তাঁর কাছে লক্ষ্মণের গণ্ডি৷ সেই গণ্ডি টপকে আরও বড় দায়িত্ব নিতে তাঁকে এগতে দেখা যায়নি৷ এটা কতটা নিজের অনিচ্ছায় আর কতটাই বা মা-ভাইয়ের অনাগ্রহে তা নিশ্চিতভাবে কেউ জানে না৷ সোনিয়া ও রাহুল একাধিকবার বলেছেন, রাজনীতিতে আসবেন কি আসবেন-না তা নির্ভর করছে প্রিয়াঙ্কার উপরেই৷ প্রিয়াঙ্কা কিন্তু কখনও স্পষ্ট করে বলেননি যে, রাজনীতিতে তাঁর আগ্রহ নেই৷ বরং, তাঁকে দেখে ও তাঁর রাজনৈতিক ভাষণ শুনে এটাই মনে হয়, রাজনীতির চ্যালেঞ্জ নেওয়ার মতো দক্ষতা ও আগ্রহ তাঁর আছে৷

প্রশ্ন হল, গান্ধী পরিবার প্রিয়াঙ্কাকে এগনোর লাইসেন্স দেবে কি না৷

প্রিয়াঙ্কাকে খুল্লামখুল্লা কংগ্রেসের রাজনীতি করতে দিলে যে-সত্যটা স্পষ্ট হয়ে উঠবে তা সোনিয়া বা রাহুলের পক্ষে সহজপাচ্য হবে না৷ সংসারী প্রিয়াঙ্কাকে রাজনীতিতে টেনে আনার অর্থ হবে রাহুলকে দিয়ে যে বেশি কিছু হবে না, তা মেনে নেওয়া৷ সোনিয়ার পক্ষে এই সত্য মেনে নেওয়া কঠিন৷ এটা তাঁদের কাছে নৈতিক হার স্বীকারেরই শামিল হয়ে দাঁড়াবে৷ আবার এটাও ঠিক, এত সুযোগ পেয়েও রাহুল কংগ্রেসের পুরনো গৌরবের কণামাত্রও ফিরিয়ে আনতে পারেননি৷ পারবেন যে সেই আশাও কম৷ এক্সিট পোলের হিসাব ঠিক হলে এবার অসমও কংগ্রেসের হাতছাড়া হচ্ছে৷ পাঞ্জাবে আগামী বছর কংগ্রেসের সুযোগ রয়েছে ঠিকই, কিন্তু আমআদমি পার্টি যেভাবে এগচ্ছে তাতে তারা নেপো সেজে দই মেরে দেবে না কে বলতে পারে? প্রিয়াঙ্কাকে ঘিরে যে-চাপটা তৈরি হচ্ছে সেটা তাই ফুৎকারে উড়িয়ে দেওয়ার মতো হিম্মত সোনিয়া দেখাতে পারছেন না৷ প্রশান্ত কিশোর এখানেই মোক্ষম চালটা চেলেছেন৷

এই চাপ সৃষ্টির আরও একটা কারণ রয়েছে৷ প্রশান্ত দেখছেন, কংগ্রেস যত দুর্বল হচ্ছে, বিজেপির বিকল্প হিসাবে ততই মাথাচাড়া দেওয়ার চেষ্টা করছেন নীতীশ কুমার৷ মোদি যেমন ‘কংগ্রেসমুক্ত ভারত’ গড়ার ডাক দিয়েছেন, নীতীশও তেমন হাঁক পেড়েছেন ‘সংঘমুক্ত ভারতের’৷ বিহারে যে মহাজোট বিজেপিকে রুখেছে, সেই মহাজোটের পরীক্ষা তিনি উত্তরপ্রদেশেও করতে উদ্যোগী৷ বিহার জয়ের পর নীতীশের চোখে প্রধানমন্ত্রিত্বের স্বপ্ণ লেপ্টে গিয়েছে৷ তাঁর অঙ্কটা খুবই সহজ৷ বিজেপি-বিরোধী জোটের নেতা হিসাবে ক্রমে ক্রমে নিজেকে গ্রহণযোগ্য করে তুলে নিজের অধিনায়কত্ব প্রতিষ্ঠা করে ফেলা৷ তারপর কংগ্রেসের কাঁধে বন্দুক রেখে করে দেবেন কিস্তিমাত৷

প্রশান্ত জানেন, নীতীশের এই প্রচেষ্টা সফল হলে তার প্রধান বলি হবেন রাহুল গান্ধী৷ বিহার-নরেশের সেই গুড়ে বালি ছেটাতেই প্রশান্ত তড়িঘড়ি প্রিয়াঙ্কাকে উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী প্রজেক্ট করার দাবিটা তুলে দিয়েছেন৷ তিনি বুঝেছেন, একমাত্র প্রিয়াঙ্কাকে সামনে টেনে আনলে উত্তরপ্রদেশে কংগ্রেস চনমনে হয়ে উঠবে৷ চার বা পাঁচ নম্বর জায়গা থেকে উঠে কংগ্রেস হতে পারবে একনম্বর প্লেয়ার৷ বোনের ক্যারিশমায় ভর দিয়ে তখন ভাই রাহুলও হয়ে উঠতে পারেন বিজেপি-বিরোধী বিকল্প জোটের নেতৃত্বের দাবিদার৷ উত্তরপ্রদেশ হল ‘মিনি ইন্ডিয়া’৷ এই রাজ্য অধরা থাকলে ‘ইন্ডিয়া’য় কংগ্রেসের দেউড়িতে বাতি জ্বালানো কঠিনই শুধু নয়, প্রায় অসম্ভব৷

প্রশান্ত তাঁর ইচ্ছাটা প্রকাশ করে দিয়ে নিজেকে নিরাপদে রাখতে চাইছেন৷ গান্ধী পরিবার প্রিয়াঙ্কার আগল খুলে দিলে ভাল৷ প্রিয়াঙ্কা-জাদুতে উত্তরপ্রদেশ ছেয়ে ফেলবেন৷ না হলে দায়টা চাপিয়ে দেবেন ফার্স্ট ফ্যামিলির ‘গোঁড়ামি’র উপর৷ কাঁধ ঝাঁকিয়ে বলতে পারবেন, আর কী-ই বা আমার করার ছিল?

এই লেখাটা লিখতে লিখতে প্রয়াত অজিত পাঁজার কথা বারবার মনে পড়ছে৷ কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দেওয়ার পরে এক ঝরঝর  শ্রাবণসন্ধ্যায় কংগ্রেসের ভবিষ্যত্‍ নিয়ে বলেছিলেন, ‘ইন্দিরা গান্ধীর ব্যক্তিত্বের প্রধান আকর্ষণ ছিল তাঁর হাসি৷ ইন্দিরার হাসি রাজীব পেয়েছিলেন৷ সোনিয়া বা রাহুল ওই ভুবনমোহিনী হাসি পাননি৷ পেয়েছেন প্রিয়াঙ্কা৷ কংগ্রেসের ভবিষ্যত্‍ ওই প্রিয়াঙ্কাই৷’

প্রিয়াঙ্কাকে বাজি ধরে ময়দানে নামতে চাইছেন প্রশান্ত কিশোর৷ ২০১৭ টপকালে পরের টার্গেট ২০১৯৷

[email protected]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ