Advertisement
Advertisement

Breaking News

CAA

সিএএ বিতর্কের সমাধানে আগ্রহ নেই কেন?

ফের সুপ্রিম কোর্টে পিছিয়ে গেল সিএএ মামলার শুনানি?

The dilly-dallying on solving CAA logjam raises question | Sangbad Pratidin
Published by: Monishankar Choudhury
  • Posted:September 13, 2022 11:47 am
  • Updated:September 13, 2022 11:47 am

সিএএ-র সাংবিধানিক বৈধতা চ‌্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে যেসব মামলা হয়েছিল, তার শুনানি পিছিয়ে গেল দেড়মাস। সিএএ যদি দেশের ধর্মনিরপেক্ষতার কাঠামোকে ধাক্কা দিয়ে থাকে, সাম্যের অধিকারকে খর্ব করে থাকে, তাহলে সেই বিতর্কের নিষ্পত্তি করার তৎপরতা নেই কেন? কলমে সুতীর্থ চক্রবর্তী

সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন’ তথা ‘সিএএ’-র সাংবিধানিক বৈধতাকে চ‌্যালেঞ্জ করে যে মামলাগুলি সুপ্রিম কোর্টে হয়েছে, তার শুনানি আবার দেড়মাসের উপর পিছিয়ে গেল। ২০১৯-এর শেষে সিএএ-তে রাষ্ট্রপতির সিলমোহর পড়লেও বিধি তৈরি হয়নি বলে একদিকে যেমন আইনটি কার্যকর করা যায়নি, তেমনই এর সাংবিধানিক বৈধতা নিয়ে দেশজুড়ে যে শোরগোল পড়েছিল, তার নিষ্পত্তি হওয়ার সম্ভাবনাও দেখা যাচ্ছে না। কেন এই টালবাহানা, সেই প্রশ্ন তোলা এবার জরুরি হয়ে উঠেছে।

Advertisement

সিএএ কার্যকর করার যদি কোনও অভিপ্রায় কেন্দ্রীয় সরকারের না-ই থাকে, তাহলে কেন তড়িঘড়ি সংসদে এটি পাস করানো হয়েছিল? ১৯৫৫ সালে দেশে নাগরিকত্ব আইন করা হয়েছিল বেআইনি অনুপ্রবেশ ঠেকাতে। ৬৪ বছর পর সেই আইন সংশোধন করে বেআইনি অনুপ্রবেশকারীর সংজ্ঞাটি বদলানো হয়। ১৯৫৫ সালের আইনে ২ নম্বর ধারায় বেআইনি অনুপ্রবেশকারীর সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছিল। ২০১৯ সালের সংশোধনীতে ২ নম্বর ধারাটি সংশোধন করে ২(১)বি যুক্ত করা হয়। সেই ধারায় বলা হয়- বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে আসা হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন, পারসি ও খ্রিস্টানরা বেআইনি অনুপ্রবেশকারীর দলে পড়বে না।

Advertisement

[আরও পড়ুন: মাঝ রাস্তায় চুলের মুঠি ধরে মার বালোচ মহিলাদের, প্রকাশ্যে পাকিস্তানের আসল চেহারা]

২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের আগে ওসব দেশ থেকে আসা ৬টি ধর্মীয় গোষ্ঠীর লোক ভারতীয় নাগরিকত্বের জন‌্য আবেদন করতে পারবে। কেন্দ্রীয় সরকার এই সংশোধনীটি আনার সঙ্গে সঙ্গে দেশজুড়ে আগুন জ্বলে। সংশোধনীতে রাষ্ট্রপতি স্বাক্ষর করার পরের দিনই ‘ইন্ডিয়ান ইউনিয়ন মুসলিম লিগ’ সুপ্রিম কোর্টে মামলা করে। পরে আরও ২১৯টি আবেদন সুপ্রিম কোর্টে জমা পড়ে। আড়াই বছর অতিবাহিত হয়ে গেলেও সেসব আবেদনের শুনানি এখনও দেশের শীর্ষ আদালতে শুরুই হয়নি। তা নিয়ে যেন কারও মাথাব‌্যথাই নেই। তাহলে সিএএ নিয়ে প্রতিবাদে দেশ জ্বলে উঠল কেন?

এত ঢক্কানিনাদ করে, বিরোধীদের সঙ্গে আলোচনা না করে, লোকসভা ও রাজ‌্যসভায় নাগরিকত্ব আইনের সংশোধনী পাস করেও গত আড়াই বছরের উপর কেন্দ্র আইনের বিধিটি রচনা করতে পারেনি। বিধি ছাড়া কোনও আইন-ই রূপায়িত করা যায় না। আইনের বিধি তৈরি করার জন‌্য সংসদীয় কমিটির মেয়াদ মাসের পর মাস শুধু বেড়েই চলেছে। সিএএ চালু হওয়ার জন‌্য মতুয়া সম্প্রদায়ের একাংশ-সহ যারা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে চলেছে, তাদের কাছে এখন প্রশ্ন যে, নরেন্দ্র মোদি সরকার কি আদৌ আইনটির রূপায়ণে আগ্রহী? উলটোদিকে, সিএএ-র বিরুদ্ধে দেশজুড়ে বিরোধী দলগুলি একযোগে আপত্তি তুলেছিল। কেন প্রতিবেশী তিনটি দেশের অ-মুসলিম অনুপ্রবেশকারীদের বেছে বেছে ভারতের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে, সেই প্রশ্ন তোলা হয়েছিল। ধর্মীয় শ্রেণিভেদের ভিত্তিতে আইন তৈরি ভারতের সংবিধান পরিপন্থী ও দেশের ধর্মনিরপেক্ষ আদর্শের বিরোধী বলে অভিমত ছিল অ-বিজেপি সমস্ত দলের। গুরুত্বপূর্ণ এই প্রশ্ন তুলেই সুপ্রিম কোর্টে একের পর এক মামলা হয়। অথচ বিস্ময়করভাবে গত আড়াই বছরে দেশের শীর্ষ আদালতে সেই মামলার কোনও শুনানি হতে দেখা গেল না। এতদিন বাদে যখন মামলাটি শুনানির জন‌্য প্রধান বিচারপতির বেঞ্চের সামনে এল, তখন তা আবার মাস দেড়েকের জন‌্য ঠান্ডা ঘরে ঢুকে গেল। বিরোধী দলগুলিও নিশ্চুপ। সিএএ যদি দেশের ধর্মনিরপেক্ষতার কাঠামোকে ধাক্কা দিয়ে থাকে, সাম্যের অধিকারকে খর্ব করে থাকে, তাহলে সেই বিতর্কের নিষ্পত্তি করার তৎপরতা কোনও স্তরেই নেই কেন?

সুপ্রিম কোর্টের মামলাগুলির পরিপ্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে একটি হলফনামা দেওয়া হয়েছিল। যে-হলফনামায় কেন্দ্রের তরফে দাবি করা হয়, সংবিধানের ১৪ নম্বর ধারায় বর্ণিত সাম্যের অধিকার, আইনের চোখে সবার সমান থাকার অধিকার এই সংশোধনীতে ক্ষুণ্ণ হয়নি। সংবিধানের প্রস্তাবনায় উল্লিখিত ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শ থেকেও সিএএ চ্যুত হয়নি। হলফনামায় কেন্দ্র জানায়, তিব্বত থেকে যে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা ভারতে বেআইনি অনুপ্রবেশ করেছে বা শ্রীলঙ্কা থেকে যে তামিল হিন্দুরা বেআইনিভাবে ভারতে ঢুকেছে, তাদেরকে নাগরিকত্ব দেওয়ার বিষয়ে সিএএ-তে কিছু বলা হয়নি। পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও আফগানিস্তানে উৎপীড়নের শিকার ধর্মীয় সংখ‌্যালঘুদেরই একমাত্র নাগরিকত্ব দেওয়ার বিষয়টি সিএএ-তে আনা হয়েছে। ভারত ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শকে তুলে ধরতে চায় বলেই এই তিন দেশের উৎপীড়িত ধর্মীয় সংখ‌্যালঘুদের আশ্রয় দিতে চায়। কেন্দ্রের এই যুক্তি এবং এর পালটা যুক্তি সম্পর্কে, বিরোধীরা ধর্মের ভিত্তিতে আইনে বৈষম‌্য সৃষ্টি নিয়ে যে-প্রশ্ন হাজির করেছে, সেসবের দ্রুত সমাধান দেখতে চায় দেশবাসী। এই বিতর্কের মীমাংসার সঙ্গে দেশের ধর্মনিরপেক্ষ কাঠামোর ভবিষ‌্যতের প্রশ্নটি যে জড়িয়ে, তা অস্বীকার করার উপায় নেই। এরকম একটি গুরুত্বপূর্ণ বিতর্কের সমাধানে কেন এত বিলম্ব, সেই প্রশ্ন তাই তোলাই উচিত।

দেশে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন নিয়ে এই বিতর্কের মধ্যেই সম্প্রতি নাগরিকত্ব ত‌্যাগের বিষয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের একটি তথ‌্য হইচই ফেলেছে। সম্প্রতি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক সংসদে জানিয়েছে, ২০২১ সালে ১ লক্ষ ৬৩ হাজার ৩৭০ জন ভারতীয় নাগরিক তাদের পাসপোর্ট সারেন্ডার করেছে। অর্থাৎ, এরা ভারতীয় নাগরিকত্ব ত‌্যাগ করেছে। প্রতি বছরই গড়ে লক্ষাধিক ভারতীয় নাগরিকত্ব ত‌্যাগ করে। এতে অভিনবত্ব কিছু নেই। কিন্তু, ২০২১ সালের এই সংখ‌্যাটি চমকপ্রদ। কোনও এক বছরে একসঙ্গে এত সংখ‌্যক মানুষের নাগরিকত্ব ত‌্যাগের ঘটনা আগে ঘটেনি। বিশ্বজুড়ে কোভিড অতিমারীর অভিঘাত এখনও কাটেনি। ২০২১-এ ভারতেই কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউয়ে রেকর্ড সংখ‌্যক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। কোভিডের জন‌্য ২০২১ সালে ভারতীয়দের বিদেশযাত্রার ক্ষেত্রে নানারকম বিধিনিষেধও ছিল। আন্তর্জাতিক উড়ান চলাচলও অনিয়মিত ছিল। তবুও এত সংখ‌্যক ভারতীয়র অন‌্য দেশে নাগরিকত্ব গ্রহণ তাৎপর্যপূর্ণ। ২০২১-এ যারা ভারতীয় পাসপোর্ট সারেন্ডার করেছে, তাদের সিংহভাগ, ৭৮ হাজার ২৮৪ জন আমেরিকার নাগরিকত্ব নিয়েছে। মার্কিন নাগরিকত্ব যারা পেয়েছে, তারা অবশ‌্য বহুদিন আগেই দেশত‌্যাগী ধরে নেওয়া যায়। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের তথ‌্য বলছে, ২০১৫ থেকে ২০২১-এর সেপ্টেম্বরের মধ্যে ৯ লক্ষ ৩২ হাজার ২৭৬ জন ভারতের নাগরিকত্ব ছেড়েছে।

ভারতের নাগরিকত্ব ছেড়ে দেওয়ার এই হিড়িকও কি ধর্মীয় মেরুকরণ বৃদ্ধির কারণে? সেই প্রশ্ন কিন্তু উঠতে শুরু করেছে বিভিন্ন মহলে। ব্রেন ড্রেনের বিষয়টি রয়েছে বহুদিন ধরেই। কিন্তু, শুধু ব্রেন ড্রেনের কারণেই কি ভারতের নাগরিকত্ব ছাড়ার হিড়িক? আমেরিকা-সহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে নাগরিকত্ব পাওয়ার ক্ষেত্রে কড়াকড়ি ক্রমশ বাড়ছে। দীর্ঘদিন ধরেই ভারতীয়দের মধ্যে নাগরিকত্ব নেওয়ার আগ্রহ আমেরিকা, কানাডা, অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশগুলিতে বেশি। উপরোক্ত কোনও দেশেই নাগরিকত্ব দেওয়ার আইন শিথিল হয়নি। এই দেশগুলিতে ভারতীয় পেশাদারদের চাহিদা রাতারাতি বেড়েছে, এমনটাও নয়। ভারতীয়দের জন‌্য বিদেশে চাকরি পাওয়ার সুযোগ আগের তুলনায় বরং কঠিনই হয়েছে। তবুও দেশের নাগরিকত্ব ত‌্যাগের ইচ্ছা বাড়ছে কেন? এই প্রশ্নেরও যথাযথ ব‌্যাখ‌্যা কেন্দ্রের তরফে আসা প্রয়োজন।

[আরও পড়ুন: স্তালিনকে মনে করাচ্ছেন পুতিন?]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ