Advertisement
Advertisement
Supreme Court

আজও ধর্মের কল বাতাসে নড়ে! বিলকিস রায় ভরসা জোগাবে নির্যাতিতাদের

বিজেপির শাসনে নারীর সম্মান মরীচিকা? 

What Positive in Bilkis bano Case Verdict of Supreme Court | Sangbad Pratidin

২০০৮ সালের ২১ জানুয়ারি মোট ১২ জনের বিরুদ্ধে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায় দিয়েছিল আদালত।

Published by: Kishore Ghosh
  • Posted:January 8, 2024 8:03 pm
  • Updated:January 8, 2024 8:59 pm

কিশোর ঘোষ: আইন, আদালত, সংবিধান… আমজনতার অরুচির বিষয়। খটমট, মাথার উপর দিয়ে যায়। ভদ্রলোকের নামও ছিল ওরকম- রোনাল্ড মাইলস ডোয়ার্কিন। কে রোনাল্ড? আমেরিকান আইনবিদ, মস্ত অধ্যাপক। বিশ্বের হাতে গোনা আইন দার্শনিকদের একজন। এই রোনাল্ডের বক্তব্য ছিল সোজা- ‘যে কোনও দেশের আইন হল সেই দেশের সমাজ ব্যবস্থার আয়না।’ সেই আয়না ভাঙার চেষ্টা করবে দুষ্কৃতীরা, এর মধ্যে অবাক হওয়ার কিছু নেই। দুর্নীতির কারিগররা পিঠ বাঁচাতে অর্থ-ধর্ম-রাজনীতির বাঙ্কারে আশ্রয় নেবে। সেও তো ইতিহাস বলছে। ঠিক এখানেই আইন, আদালতের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। বিলকিস বানো মামলায় ১১ দোষীকে কার্যত জেলে ফেরানোর সুপ্রিম নির্দেশে যা টের পাচ্ছে আমজনতা। ভরসা পাচ্ছেন বিলকিসের মতোই গোটা দেশের বহু নির্যাতিতাও। নচেত ‘দুর্বলে’র দিনও যা রাতও তাই। দমবন্ধ অসহায় অন্ধকারই নিয়তি! কিন্তু প্রশ্ন হল, গেরুয়া শাসনে তেমনটা হওয়ার কথা ছিল?

বিশেষত প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি জমানায়। ‘মোদি হ্যায় তো মুমকিন হ্যায়’- কোভিডের মতোই ‘মোদি ডোজে’ দুর্নীতি বিদায় নেবে দেশ থেকে। সুইস ব্যাঙ্কের কালো টাকা ফিরবে, বণ্টন হবে সাধারণ নাগরিকদের মধ্যে! ‘আমরা সবাই রাজা’ হব! সেই কারণেই তো নোটবন্দি। বিজেপি সরকারের দুর্নীতি বিরোধী হাজারও অভিযান। ‘স্বচ্ছ ভারতে’র প্রতিজ্ঞা। এক্ষেত্রে বাস্তবিক মহাত্মা গান্ধী ও নরেন্দ্র মোদির মধ্যে আশ্চর্য মিল! দুজনের মুখেই ‘রাম’ তথা ‘রামরাজ্যে’র কথা শুনেছি আমরা।

Advertisement

 

Advertisement

[আরও পড়ুন: দেশজুড়ে ‘বয়কট মালদ্বীপে’র ডাক, দ্বীপরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের অবনতি কেন?]

প্রচারে, সভায়, টিভিতে, মন কি বাতে দেশবাসীকে দুর্নীতিমুক্ত, অপরাধী ও অপরাধমুক্তির স্বপ্ন দেখিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। উত্তরপ্রদেশের ‘দুষ্কৃতীরাজ’ নিয়ে যোগীর মতোই অখিলেশ (যাদব) শিবিরকে তোপ দেগেছেন, বাংলার ভোটহিংসা নিয়েও লম্বাচওড়া কথা বলেছেন। যদিও ২০০২ সালে গুজরাটে সাম্প্রদায়িক হিংসার পর সেই রাজ্যের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী মোদিকে সুশাসনের কথা, রাজধর্ম পালনের কথা বলেছিলেন, সেই সময় দেশের প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ী। ‘‘রাজার কাছে বা শাসকের কাছে প্রজায় প্রজায় ভেদ হয় না। জন্ম, জাতি বা সম্প্রদায়, কোনও কিছুর ভিত্তিতেই প্রজায়-প্রজায় ভেদাভেদ করতে পারেন না শাসক।’’ তিনি নিজেও রাজধর্ম পালনের চেষ্টা করছেন, গুজরাটেরও মুখ্যমন্ত্রীরও উচিত তেমনটা করা— পরামর্শ ছিল বাজপেয়ীর। পাশে বসা মোদি সেদিন স্মিতহাস্যে বলেছিলেন, ‘‘আমিও তা-ই করছি সাহেব।’’ প্রশ্ন ওঠে, তাই যদি হবে, তবে বিজেপি শাসিত গুজরাট সরকার বিলকিসের অপরাধীদের আগাম মুক্তি দেয় কীভাবে? এমনকী তারা নাগরিক সংবর্ধনাও পান! যাদের অপরাধের ফিরিস্তি শুনলে রক্তমাংসের মানুষের ঘুম ছুটে যায়।

২০০২ সালে গোধরাকাণ্ডের পর গুজরাটে সাম্প্রদায়িক হিংসা চলাকালীন ৩ মে দাহোড় জেলার দেবগড় বারিয়া গ্রামে হামলা চালানো হয়। গ্রামের বাসিন্দা পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা বিলকিসকে গণধর্ষণ করা হয়। বিলকিসের চোখের সামনেই তাঁর তিন বছরের মেয়েকে পাথরে আছড়ে মারেন হামলাকারীরা। ঘটনাস্থলেই মারা যায় সে। তাঁর পরিবারের আরও কয়েক জন সদস্যকে হত্যা করা হয়। তদন্তে নেমে ঘটনার ভয়াবহতা জেনে চমকে উঠেছিলেন সিবিআই আধিকারিকরাও। চার্জশিট দাখিল হয়। ২০০৮ সালের ২১ জানুয়ারি মোট ১২ জনের বিরুদ্ধে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায় দিয়েছিল আদালত। প্রমাণের অভাবে বাকি সাত জন বেকসুর খালাস পান। পরে শুনানি চলাকালীন এক অভিযুক্তের মৃত্যু হয়। শুনানি চলাকালীন প্রত্যেক অভিযুক্তকেই শনাক্ত করেছিলেন বিলকিস। জানিয়েছিলেন, অভিযুক্তেরা সকলেই তাঁর পরিচিত।

 

[আরও পড়ুন: দেশজুড়ে ‘বয়কট মালদ্বীপে’র ডাক, দ্বীপরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের অবনতি কেন?]

এমন ভয়ংকর অপরাধীদের ২০২২ সালের ১৫ আগস্ট ৭৬তম স্বাধীনতা দিবসে মুক্তি দিয়েছিল গুজরাট সরকার। মুক্তির পর স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্ব ওই অপরাধীদের সংবর্ধনা দিয়েছিলেন বলেও অভিযোগ। এমনকী বিতর্কের মাঝে গুজরাট সরকার জানায়, জেলে ওই ১১ জন ধর্ষক ও খুনি ‘ভালো আচরণ’ করেছে। সেই কারণেই তাদের সাজার মেয়াদ কমানো হয়েছিল।

গুজরাট সরকারের দোষীদের মুক্তির সিদ্ধান্ত, এমনকী খুনিদের হয়ে সাফাইয়ে চমকে গিয়েছিল গোটা দেশ। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি এবং নাগরিকদের একাংশ প্রশ্ন তুলেছিল, তবে কি প্রশাসন, সরকার, এমনকী আদালতের উপরেও আস্থা থাকবে না জনতার? ২০১৯ সালে রামমন্দির-বাবরি মসজিদ রায় নিয়েও দেশের একাংশের মানুষ এমন প্রশ্নই তুলছিল। সকলকে কিন্তু খুশি করতে পারেনি সুপ্রিম রায়। এমন আবহাওয়ায় বিলকিস মামলায় দোষীদের মুক্তির সিদ্ধান্ত বাতিল করে আইনের শাসনেরই বার্তা দিল শীর্ষ আদালত। এমনকী আইনের অপব্যবহারের অভিযোগে গুজরাট সরকারকে ভর্ৎসনা করা হল। আমরা দেড়শ কোটি নাগরিকও আশ্বস্ত হলাম- ‘ধর্মের কল আজও বাতাসে নড়ে’! সভ্য দেশে অপরাধীদের রেয়াত করা হয় না। এই লেখার শুরুতে আমেরিকান আইন দার্শনিক যে আয়নার কথা বলেছিলেন, শীর্ষ আদালতের রায়ে তা অক্ষত থাকল। 

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ