Advertisement
Advertisement

Breaking News

বামেদের ব্রিগেডে ভিড় তো হল, ভোট আসবে কি?

ক্ষমতা হারানো ইস্তক বামেদের যে ক্রমাগত রক্তক্ষরণ হয়ে চলেছে, তাতে কি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হবে?

Will Brigade propel Left to power
Published by: Monishankar Choudhury
  • Posted:February 6, 2019 4:57 pm
  • Updated:February 6, 2019 4:57 pm

সুমিত গুহ: সভা, সমাবেশে উপচে পড়া ভিড় কি ভোটে প্রতিফলন হয়? এর উত্তর হ্যাঁ অথবা না, দুটোই হতে পারে। এমন অনেক ভূরি ভূরি উদাহরণ রয়েছে যে, সভা ভিড়ে ভিড়াক্কার হলেও ভোটবাক্স খুলে দেখা গিয়েছে, প্রার্থী লাড্ডু পেয়েছেন। আবার উল্টো ঘটনারও বহু উদাহরণ রয়েছে। কথাটা এ জন্যই প্রাসঙ্গিক যে, বামফ্রন্টের ব্রিগেড সমাবেশে বেশ ভাল লোক হয়েছিল। এই লোক সমাগম দেখে অনেক কমরেডরাই সুদিন ফিরে আসার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন। মাস দুই-তিনেকের মধ্যে সেই স্বপ্ন বাস্তবায়িত হবে না ভেঙে খান খান হয়ে যাবে, তা পরিষ্কার হয়ে যাবে।

[মালিয়ার সম্পত্তি ব্যাংক কনসর্টিয়ামকে দিলে আপত্তি নেই ইডি-র]

Advertisement

তৃণমূলের ব্রিগেড সমাবেশের পর বামফ্রন্টেরও ব্রিগেড সমাবেশ হয়ে গেল। যদিও দু’টো ব্রিগেডের চরিত্র ছিল সম্পূর্ণ আলাদা। মমতা ব্রিগেডের ডাক দিয়েছিলেন গত বছর ২১ জুলাই শহিদ দিবসে। আর বামেরা ব্রিগেড ডাকেন মাসকয়েক আগে। এর আগে অবশ্য বিজেপিও ব্রিগেডের সমাবেশের ডাক দিয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে এনে জনসভা করার পরিকল্পনা ছিল গেরুয়া শিবিরের। যদিও শেষ পর্যন্ত সেই সভা বাতিল হয়ে যায়। মমতার ব্রিগেডে আক্ষরিক অর্থেই ছিল নক্ষত্র সমাবেশ। কংগ্রেস-সহ ২২টি দলের প্রতিনিধিরা হাজির ছিলেন সেই সভায়। তার মধ্যে বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী, প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, লোকসভার বিরোধী দলনেতা, সবাই ছিলেন। এককথায় ছিল চাঁদের হাট। অন্যদিকে বামেদের ব্রিগেডে সেই অর্থে কোনও ‘স্টার’ ছিলেন না। বর্তমানে সাড়া ফেলে দেওয়া বাম যুব নেতা কানহাইয়া কুমারের আসার কথা থাকলেও শারীরিক অসুস্থার কারণে তিনি অাসেননি। অবশ্য বাম ব্রিগেডের চমক ছিল প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যর উপস্থিতি। শারীরিক কারণে বুদ্ধবাবু দীর্ঘদিন পাম অ্যাভেনিউয়ের বাসভবন ছেড়ে বেরোন না। এমনকী, আলিমুদ্দিন স্ট্রিটেও আসেন না। সেই বুদ্ধবাবুর ব্রিগেডে আসা নিঃসন্দেহে বাম কর্মী-সমর্থকদের কাছে টনিকের কাজ করবে। যদিও প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মঞ্চে ওঠেননি। গাড়িতেই প্রায় ঘণ্টাখানেক বসে ছিলেন। তবু দুধের স্বাদ ঘোলে মেটার মতো বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যর উপস্থিতি উপভোগ করেছে লাল ব্রিগেড।

Advertisement

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ব্রিগেডের মেজাজ ছিল অনেক চড়া। কলকাতার পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমারকে নিয়ে কয়েকদিন ধরে চলা কেন্দ্র-রাজ্য সংঘাতের মূল সুর কিন্তু বাঁধা হয়েছিল ১৯ জানুয়ারি ব্রিগেডের মাঠে। সেদিন অঘোষিতভাবে বিজেপি বিরোধী জোটের ব্যাটন সব দলের নেতারাই মমতার হাতে তুলে দিয়েছিলেন। তৃণমূলের ব্রিগেডের অভিঘাত ছিল অনেক বেশি। প্রায় সব রাজ্যের বিজেপি বিরোধী নেতারা হাজির ছিলেন তৃণমূল নেত্রীর ডাকে। ফলে এটি তৃণমূলের ব্রিগেড হলেও তা সর্বভারতীয় চেহারা নিয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে পর্যন্ত ওই ব্রিগেড সমাবেশের প্রতিক্রিয়া জানাতে হয়েছে। উলটোদিকে বামেদের ব্রিগেড ছিল অনেক লো প্রোফাইলের। একদিকে কেন্দ্র অন্যদিকে রাজ্য, দুই সরকারের বিরুদ্ধেই ব্রিগেডে আওয়াজ উঠেছিল। বিজেপি ও তৃণমূল একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ, বাম নেতারা ফাটা রেকর্ডের মতো একথা বলে চললেও কর্মীদের কাছে কিন্তু তৃণমূলই পয়লা নম্বর শত্রু। অন্তত সেদিন ব্রিগেডের মুড তাই বলে। যখনই রাজ্য সরকার বা তৃণমূল নেত্রীর বিরুদ্ধে নেতারা চোখা চোখা বাক্যবাণ নিক্ষেপ করেছেন, তখনই গর্জে উঠেছে ব্রিগেড।

সবচেয়ে যে প্রশ্নটি গুরুত্বপূর্ণ তা হল, ব্রিগেডের এই মুড, এই ভিড় ভোটবাক্স পর্যন্ত টেনে নিয়ে যাবে? ক্ষমতা হারানো ইস্তক বামেদের যে ক্রমাগত রক্তক্ষরণ হয়ে চলেছে, তাতে কি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হবে? ক্ষমতা হারানোর মাত্র আট বছরের মধ্যেই রাজ্যে ‘থার্ড বয়’ হয়ে গিয়েছে সিপিএম। শুধু একটি বা দু’টি ভোটে নয়, ধারাবাহিকভাবে দেখা যাচ্ছে, বিজেপিই বর্তমানে রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল। এমনকী, তৃণমূল নেতৃত্বও পরোক্ষে তা স্বীকার করে নিয়েছে। মাত্র মাসখানেক আগে কলকাতা পুরসভার একটি ওয়ার্ডের উপনির্বাচনেও (যে ওয়ার্ড থেকে জিতে ফিরহাদ হাকিম মেয়র নির্বচিত হয়েছেন) একই দৃশ্য দেখা গিয়েছে। প্রথম-দ্বিতীয়র সঙ্গে ব্যবধানের আসমান-জমিন ফারাক থাকলেও বিজেপিই ছিল দ্বিতীয় স্থানে। একটি সফল ব্রিগেড করলেই যে রাতারাতি চিত্রটা বদলে যাবে তা ভাবা ভুল। এত তাড়াতাড়ি ৩৪ বছরের স্মৃতি জনমানসের মন থেকে মুছে যাবে না। তাছাড়া ভিড় যদি ভোট টানার সূচক হয়, তাহলে অনেক আগেই বামফ্রন্টের বিদায় নেওয়ার কথা ছিল। কারণ ১৯৯২ সালে তৎকালীন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা যুব কংগ্রেসর সভানেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ব্রিগেডে বামেদের ‘মৃত্যু ঘণ্টা’ বাজিয়ে ছিলেন। সেই ব্রিগেডেও ঐতিহাসিক রূপ নিয়েছিল। তার পরও মমতা ভরা ব্রিগেড করেছিলেন। কিন্তু সিপিএমকে হঠানো যায়নি। তাই একটি ব্রিগেডে ভাল লোক এনে সুদিনের খোয়াব না দেখাই ভাল কমরেড। তবে ব্রিগেড একেবারে খালি হাতে ফেরায়নি কমরেডকুলদের। যে স্বপ্ন দেখা প্রায় ভুলেই গিয়েছিলেন লালঝান্ডাধারীরা, সেই স্বপ্ন ফের দেখা যেতেই পারে। অন্তত লোকসভা ভোট পর্যন্ত।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ