Advertisement
Advertisement

Breaking News

জীবনের টার্নিং পয়েন্ট ‘থ্রি ইডিয়টস’

রাজকুমার হিরানির ‘থ্রি ইডিয়টস’ আর ওই ছবির মূলকথা ফলো ইওর প্যাশন অ্যান্ড ইউ উইল গেট ইওর সাকসেস ওয়ান ডে, আমাকে নাড়া দিয়ে গেল৷

Published by: Sangbad Pratidin Digital
  • Posted:August 12, 2016 3:49 pm
  • Updated:August 12, 2016 3:49 pm

তপন বকসি: অধিরাজ বোস৷ সদ্য পঁচিশ পেরনো বাঙালি পরিচালক৷ পূর্ণ দৈর্ঘ্যের নয়৷ এখনও পর্যন্ত শর্ট ফিল্ম মেকার৷ কিন্তু দু’টো শর্ট ফিল্মেই মাত করেছেন সিনেমা রসিকদের৷ ‘দ্য লাস্ট ডে’ আর ‘ইনটেরিয়র ক্যাফে নাইট’৷ যার মধ্যে ‘ইনটেরিয়র ক্যাফে’ অনেকেরই দৃষ্টি ঘুরিয়েছে এই যুবার প্রতি৷ ওর ওই ‘ক্যাফে’ নিয়েই মুখোমুখি হলাম মুম্বইয়ের আন্ধেরির ডি বেলা ক্যাফের টেবিলে৷

তাহলে রাজকুমার হিরানি আর ওঁর ওই ‘থ্রি ইডিয়টস’ আপনার জীবনে মোড় ফেরাল?

Advertisement

একদম৷ আমি তখন সান্তাত্রুজের আর.এন.পোদ্দার স্কুলে কমার্স নিয়ে বারো ক্লাসে৷ ভাবছি এবার ডিসিশন নিতে হবে৷ বাড়ি থেকে বলেছিল আইন নিয়ে পড়তে৷ কিন্তু ওই সময় রাজকুমার হিরানির ‘থ্রি ইডিয়টস’ আর ওই ছবির মূলকথা ফলো ইওর প্যাশন অ্যান্ড ইউ উইল গেট ইওর সাকসেস ওয়ান ডে, আমাকে নাড়া দিয়ে গেল৷ ছোটবেলা থেকে নিজের লেখা চিত্রনাট্যে সিনেমা পরিচালনা করার ইচ্ছেটাকে যেন এই সিনেমা আমাকে রাস্তা দেখিয়ে দিল৷ তখন থেকেই মনে মনে ভেবেছি রাজকুমার হিরানির মতো ছবি তৈরি করব৷ ওরকম ছবি করতে হবে আমাকে৷

Advertisement

কিন্তু একজন মধ্যবিত্ত ছেলের হিন্দি বলয়ে ফিল্মমেকার হয়ে ওঠার পিছনেও তো চিত্রনাট্য থাকে? সেটা কেমন? কীভাবে ঘটল এই ফিল্মমেকার হয়ে ওঠা?

বাবা স্টেট ব্যাঙ্কে চাকরি করতেন৷ আমি, মা, বাবা আর আমার এক ছোট বোন৷ এই নিয়েই আমাদের মধ্যবিত্ত সংসার৷ বাবার চাকরিসূত্রে আমি অনেক জায়গায় থেকেছি, ঘুরেছি৷ কখনও বাংলাদেশ, কখনও শিলিগুড়ি, কখনও দেশের আরও নানা জায়গায়৷ বিভিন্ন্ জায়গা, মানুষজন, পরিবেশ আমার মনে নানাভাবে প্রভাব ফেলে গিয়েছে৷ মুম্বইয়ে আছি শেষ দশ বছর৷ এখানেই স্কুলিং শেষ করেছি৷ তারপরে ভর্তি হয়েছি কে. সি. কলেজে৷ বারো ক্লাসের স্কুল থেকে কলেজে এসে আমার স্ট্রিম বদলে গেল৷ কমার্স থেকে মাস কমিউনিকেশনে স্নাতকোত্তরে পড়াশোনা শুরু করলাম৷ এই কোর্সের মধ্যেই আন্ডারস্ট্যান্ডিং সিনেমা, ডকুমেণ্টারি ফিল্মমেকিং সবকিছুই রয়েছে৷ শর্ট ফিল্ম মেকিংও রয়েছে৷ আমার গ্র্যাজুয়েশনের ফাইনাল ইয়ারে আধঘণ্টারও কম সময়ের একটা ডকুমেণ্টারি ফিল্ম তৈরির প্রোজেক্ট এল৷ হিমাচলপ্রদেশের জঙ্গলে ভাং আর অবৈধ গাঁজা চাষের ওপর তথ্যচিত্র ছিল এটা৷ এই ছবিতে অনসিন ন্যারেটর হিসাবে আমি নাসিরুদ্দিন শাহ স্যরকে পেয়েছিলাম৷ নাসির স্যরের সঙ্গে তখন থেকেই পরিচয়৷ কলেজ পাস আউট হয়ে অনেক শর্ট ফিল্ম বানিয়েছি৷ অ্যাড ফিল্ম তৈরি করেছি৷ ইন ফ্যাক্ট, আমার বাইশ বছর বয়সে আমি এই ‘দ্য লাস্ট ডে’ আর ‘ইনটেরিয়র ক্যাফে নাইট’ তৈরি করেছি৷ বানানোর দু’বছর পর এই ছবি দুটো ইউটিউবে রিলিজ করল৷ দু’-তিন সপ্তাহ আগে৷ আর তখন থেকেই অবিশ্বাস্য সাড়া পেয়েছি, পাচ্ছি৷

একজন মধ্যবিত্ত বাঙালি ছেলে, যিনি কি না পরিবারের বড় ছেলে, তাঁকে এই পেশায় এমন এক প্রথাভাঙা পেশায় আসতে দিলেন যিনি বা যাঁরা, কুর্নিশ তাঁদের৷ তাছাড়া এমনটা সম্ভব হত কি?

অবশ্যই কৃতজ্ঞতা জানাব আমার পরিবারকে৷ আমার বাবাকে৷ যিনি আমাকে একবারও পিছুটানে আটকে থাকতে দেননি৷ বরং আশ্বাস দিয়েছেন এগিয়ে যাওয়ার৷

আপনার দু’টো শর্ট ফিল্মেরই বিষয়ের মূলে রয়েছে রিলেশনশিপ৷ এই থিমটাই আপনার প্রিয় হয়ে উঠল কেন?

বরাবরই হিউম্যান রিলেশনশিপের ভিতরকার লাইট অ্যান্ড শ্যাডো আমাকে টানে৷ অনেকের মতো আমারও ব্রোকেন রিলেশনশিপের ঘটনা আছে৷ কিন্তু সেটা তো খুব কমন৷ ঘটনাটা হল সেই ভিতরকার জেব্রা ক্রসিংয়ের মতো জ্যামিতিটা আমাকে সবসময় হণ্ট করেছে৷ আমি গল্পের রসদ পেয়েছি৷ কাগজ-কলমে গল্প বলাকে ক্যামেরায় ধরতে পারার ইন্সপিরেশন পেয়েছি৷ আবারও বলছি আমি যখন এই শর্ট ফিল্মগুলো করেছি, তখন আমার বয়স বাইশ৷ গতকালই আমি পঁচিশ পূর্ণ করেছি৷ অনেকেই আমার ছবি দেখে বলেছেন একটা বাইশ বছরের ছোকরা কী করে এরকম বড়দের মনস্তত্ত্বের, রিলেশনশিপের বিষয় নিয়ে ছবি করে?

আপনার ‘ইনটেরিয়র ক্যাফে নাইট’ কতক্ষণের ছবি?

তেরো মিনিটের৷ ‘দ্য লাস্ট ডে’ তো আরও কম৷ সাড়ে তিন মিনিট৷ আট বছর ধরে একই রুম শেয়ার করার পর এক বন্ধু আরেকজনকে ছেড়ে চলে যাচ্ছে৷ কোনও একসময় আমি বোর্ডিংয়ে ছিলাম৷ এই গল্পের বীজ সেখান থেকে পাওয়া৷

আর ‘ইনটেরিয়র ক্যাফে নাইট’?

সব ছবির পিছনেই ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা আছে৷ আমারও মনে হয় কোনও না পাওয়া থেকেই বোধহয় সবচেয়ে ভাল শিল্পের জন্ম হয়৷

নাসিরুদ্দিন শাহ-র মতো অভিনেতা আপনার শর্ট ফিল্মে কাজ করে খুশি হয়েছেন৷ খুব কম কথা হল কি?

এখনও পর্যন্ত গ্রেটেস্ট অ্যাচিভমেণ্ট৷ কে না খুশি হবে এটা শুনলে?

শেরনাজ পটেল ও নাসিরুদ্দিন শাহকে চিত্রনাট্য বোঝাচ্ছেন অধিরাজ
শেরনাজ পটেল ও নাসিরুদ্দিন শাহকে চিত্রনাট্য বোঝাচ্ছেন অধিরাজ

ইউটিউব আপনাদের মতো ভবিষ্যত্‍ প্রজন্মের ফিল্মমেকারদের দরজা খুলে দিচ্ছে৷ কতটা কৃতজ্ঞতা জানাবেন এই নতুন মাধ্যমকে?

ইউটিউব না হলে আমরা কী করতাম ভাবতেই পারি না৷ চোদ্দো দিনে আমার ‘ইণ্টেরিয়র ক্যাফে নাইট’ দেখেছেন সাড়ে আট লক্ষ দর্শক৷ আমার চিনের বন্ধু, সাউথ আফ্রিকার বন্ধু, অস্ট্রেলিয়ার বন্ধুদের, তাদের পরিবারের সবার শুভেচ্ছাবার্তা পেয়েছি৷ ওঁরা আমার ছবির সাবটাইটেলের দৌলতে আমার ছবিকে ফিল করেছে৷ এনজয় করেছে৷ ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি থেকেও প্রচুর সাড়া পেয়েছি৷ অনুরাগ কাশ্যপ, আমার ফিল্ম রাইটিংয়ের স্যর অনজুম রাজা বল্লি, কান্ন্ন আইয়ার, ইমতিয়াজ আলিরা আমার চিত্রনাট্য পড়েছিলেন৷ দু’-একটা মতামতও দিয়েছিলেন৷ আর ছবি ‘ইউটিউবে দেখানোর পর আমি ফোন পেয়েছি, ই-মেল পেয়েছি, মেসেজ পেয়েছি আরও অনেকের৷ আমার জীবনের মোড় ঘোরানো ‘থ্রি ইডিয়টস’ ছবির পরিচালক রাজু হিরানি ফোন করেছেন৷ বিধু বিনোদ চোপড়াও ফোন করেছেন৷ মেল করেছেন ওই ছবির লেখক অভিজাত যোশি৷ মেল করেছেন আমির খান৷ আমি আপ্লুত৷ সেই সঙ্গে দায়িত্বও বেড়ে গেল৷

আপনার আগামী ছবি কী হবে?

রিসেণ্টলি পরিচালক বিজয় নাম্বিয়ারের জন্য ১৯৮৮ সালে তামিলে তৈরি মণিরত্নমের ‘অগ্নিনটচথিরম’-এর হিন্দি চিত্রনাট্য লিখেছিলাম৷ এবার এক বছর ধরে নিজের ফিচার ফিল্মের জন্য লিখতে থাকা চিত্রনাট্য সম্পূর্ণ করব৷ বিজয় নাম্বিয়ারের জন্য লেখা চিত্রনাট্যে অভিনেতা ধনুষ নির্বাচিত হয়েছেন৷

মুম্বইয়ে নিজের বাড়ি আছে?

হ্যাঁ৷ বাবা একটা ফ্ল্যাট কিনেছিলেন নিউ মুম্বইয়ের পাম বিচ রোডে৷ ওটা ভাড়া দিয়ে দিয়েছেন৷ আমিই বলেছি৷ আর আন্ধেরি-ওশিওয়াড়ায় এখনকার ফ্ল্যাটে ভাড়া রয়েছি আমরা৷ ভাড়ায়৷ বাবা রিটায়ার্ড এখন৷ আমি বলেছি আমরা সবাই একসঙ্গে থাকব৷ ভাড়া আমিই দেব৷ নিজের জন্য লেখায় তো প্রথমে টাকা পাওয়া যায় না৷ চিত্রনাট্য বিক্রি হলে পাওয়া যায়৷ আর খরচা তোলার জন্য তো অ্যাড ফিল্ম আছে৷ অ্যাড ফিল্মের টাকা জমিয়ে রেখে নিজের স্বাধীন লেখা লিখি৷ ‘ইনটেরিয়র ক্যাফে নাইট’ যেমন কয়েকজন বন্ধুরা মিলে অল্প কিছু টাকা দিয়ে বানিয়েছিলাম৷ দু’বছর পর সেই টাকা ডাবল ফেরত পেলাম৷ যাঁরা বিনা পারিশ্রমিকে আমাকে সাহায্য করতে এগিয়ে এসেছিলেন, তাঁদের কিছু কিছু টাকা পারিশ্রমিক হিসাবে দিয়েছিলাম দু’বছর পর৷ এভাবেই চালিয়ে যাচ্ছি৷

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ