পলাশ পাত্র, তেহট্ট: মা’কে লাথি মেরেছিল এক শ্বেতাঙ্গ। অপমানের সেই জ্বালা আগুন জ্বালিয়েছিল কৃষ্ণনগরের ছেলেটার মনে। প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, এর প্রতিশোধ তিনি নেবেনই। কেবল নিজের মায়ের জন্যই নয়, সারা ভারতের মায়েদের উদ্ধার করবেন ইংরেজদের অত্যাচারের হাত থেকে। বিপ্লবের এই মন্ত্রেই দীক্ষিত হয়েছিলেন স্বাধীনতা সংগ্রামী শহিদ বসন্ত বিশ্বাস। ইংরেজদের হাতে ধরা পড়েও হার মানেননি। বরং হাসিমুখে বরণ করে নিয়েছিলেন ফাঁসির দড়িকে। ভারতমাতার সেই বীর সন্তানের কাহিনিই বড়পর্দায় তুলে আনছেন তাঁরই ভ্রাতুষ্পুত্র তথা রাজ্যের মন্ত্রী উজ্জ্বল বিশ্বাস।
[ভারতীয় জওয়ানদের উদ্বুদ্ধ করতে নতুন গান রেকর্ড সোনুর]
ব্রিটিশরা যখন বাংলার নীলচাষিদের উপর অতিরিক্ত করের বোঝা চাপিয়ে নৃশংসতার সমস্ত সীমা ছাড়িয়ে গিয়েছিল। সেই সময়ের সাক্ষী ছিল বিশ্বাস পরিবার। ছোট হলেও সেই ঘটনা ভীষণভাবে নাড়া দিয়েছিল বসন্তকে। এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতেই বিপ্লবের পথকে বেছে নিয়েছিলেন তরুণ বসন্ত। বিপ্লবী রাসবিহারী বসু ছিলেন তাঁর পথ প্রদর্শক। তাঁর নেতৃত্বেই দিল্লির চাঁদনি চকে মানরি বাহিনীর শোভাযাত্রায় লর্ড হার্ডিঞ্জকে বোমা মেরেছিলেন বসন্ত। ১৯১২ সালের ২৩ ডিসেম্বরের সেই ঘটনায় আহত হয়েছিলেন লর্ড হার্ডিঞ্জ ও লেডি হার্ডিঞ্জ। ইংরেজ শাসনের ভিত নড়ে গিয়েছিল এই ঘটনায়। ফেরার বসন্তকে ধরার জন্য সাম-দাম-দণ্ড-ভেদ কোনও উপায়ই বাদ রাখেনি ব্রিটিশ সরকার। শেষে এক বাঙালির বিশ্বাসঘাতকতার সৌজন্যেই ধরা পড়েন বসন্ত বিশ্বাস। পাঞ্জাবের আম্বালা জেলে ফাঁসি দেওয়া হয় তাঁকে। ১০২ বছর আগের সেই ঘটনা চিত্রনাট্যে সাজিয়েছেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি উজ্জ্বল বিশ্বাস নিজে। প্রযোজনায় তাঁরই স্ত্রী মীনাক্ষী বিশ্বাস।
মন্ত্রী হিসেবে হাজারও ব্যস্ততার মাঝেই একশো পাতার চিত্রনাট্যটি লেখেন উজ্জ্বলবাবু। যাতে উঠে এসেছে বিপ্লবী বসন্তর পোড়াগাছা গ্রামের শৈশব, বড় হওয়া থেকে স্বাধীনতা সংগ্রামে জড়িয়ে পড়ার কাহিনি। থাকছে জাপানের টোকিওতে রাসবিহারী বসুর বাড়ি, সমাধি, যে বেকারিতে উনি কাজ করতেন সেখানকার ছবিও। সেখানকার একটি পার্কে বিপ্লবী বসন্ত বিশ্বাসের মূর্তি বসিয়েছিলেন রাসবিহারী বসু। স্বাধীনতার পর সেই মূর্তির জায়গায় গান্ধীজীর মূর্তি বসান হয়। ওই পার্কে বসন্তর মূর্তি থাকা অবস্থার ছবিও থাকবে ফিল্মে।
[বিঘ্নহর্তা গণেশকে কটাক্ষ, আদালতের নোটিস রামগোপালকে]
পূর্ণ দৈর্ঘ্যের এই ফিল্মে ৩৬ জন অভিনেতা অভিনেত্রী কাজ করবেন। পরিচালনায় থাকছেন শংকর মজুমদার। জোরকদমে চলছে শুটিং। যাতে চেনা মুখেদের পাশাপাশি সুযোগ দেওয়া হয়েছে স্থানীয় অভিনেতা-অভিনেত্রীদেরও। বিশেষ কর্মশালার মাধ্যমে বেছে নেওয়া হয়েছে সকলকে। সবকিছু ঠিক থাকলে আগস্ট মাসেই নন্দনে দেখানো হবে ছবিটি। সাধারণ মানুষ জানতে পারবেন ভারতের ইতিহাসে উপেক্ষিত বাঙালির এই বিপ্লবীর কথা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.