নির্মল ধর: ছোট ছোট শহরের রাজনীতি। ছোট ছোট ঘটনার মধ্যেই বৃহত্তর বৃত্তের আভাস। ছোটখাটো ঘটনার মধ্যেই বৃহৎ দর্শনের লিলিপুটের অস্তিত্ব-সবই মিলবে কুশন নন্দীর ‘বাবুমশাই বন্দুকবাজ’ ছবিতে। এই সব ঘটনার সঙ্গে চিত্রনাট্যকার-পরিচালক রক্তের মধ্যে হিমোগ্লোবিনের মতো জুড়ে দিয়েছেন বন্দুকবাজি। ভাড়াটে খুনি ‘বাবুবিহারি’ নওয়াজউদ্দিন। তাঁর পরিচয়,- ‘ম্যায় পোস্টম্যান হ্যায় ভাইয়া, মওতকা চিঠি লেকে আতা হ্যায়।’ যেখানেই বাবু সেখানে ফট-ফটাশ গুলি। বিনিময় নয়, একপক্ষীয়। বাবুর সঙ্গে বিবি ফুলওয়া (বিদিতা বাগ) এসে পড়লে শরীরী খেলার বর্ণিল মেলা পর্দা জুড়ে। বর্ণিলতার সঙ্গে যৌনতার কড়া মিশেলও বলতে পারি। চিত্রনাট্যে আর এক ভাড়াটে খুনি বাঁকেবিহারি এসে পড়লে অ্যাকশন দ্বিগুণ। আর বাঁকে (যতীন গোস্বামী) যখন বলে বাবু তার ‘গুরু’, তখন কিছুটা ফিদাই হয়ে যায় বাবু। রাজনীতির দুই মানুষ- সুগন্ধী পান চিবনো নেত্রী সুমিত্রা (দিব্যা দত্ত) ও দুবেও (অনিল জর্জ) ঢুকে পড়েন খুনোখুনির খেলায়। রাজনৈতিক রেষারেষির খুনের সঙ্গে শুরু হয় প্রেমের রেষারেষিও। বাবু-ফুলওয়া এবং বাঁকে-শ্রদ্ধার প্রেমে কোথায় যেন ঈর্ষা এবং পরকীয়ার সুরও ঢুকে পড়ে। ফুলওয়ার প্রতি আকৃষ্ট হয় হয় বাঁকে। সে খুনও করে বসে বাবুকে। এখানে বিরতি।
[ সঞ্জয়ের আপত্তিতেই সোশ্যাল সাইট থেকে ছবি সরালেন মান্যতা! ]
পরের পর্ব সাত আট বছর পর। মৃত বাবুবিহারি ফিরে আসে। তার খুনের প্রতিশোধ নিতে। একে একে নেয়ও। এমনকী নেত্রীর পোষ্য পুলিশকেও রেহাই দেয় না। রেহাই পায় না বাঁকে এবং বিশ্বাসঘাতিনী ফুলওয়াও। একের পর এক খুন হয়েই চলে। কোনও মামলা নেই। গ্রেপ্তার নেই। প্রশাসনিক পদক্ষেপও নেই। শহরটা যেন কোয়েন্টিন টারান্টিনোর কোনও এক ‘কল্পিত’ শহর। পরিচালক এমন এক আইন-শাসনহীন শহর বা জায়গা বেছে ছবির গায়ে অন্য এক মাত্রা যোগ করার চেষ্টা করেছেন। খানিকটা ‘গ্যাংস অফ ওয়াসিপুর’কে মনে করিয়ে দেয়। পরিচালনার কাজ নিশ্চয়ই প্রশংসার। তবে তিনটি ট্রেনে তিনবারই একই টিটিকে দেখানোটা বড্ড সাজানো। শহর ও শহরের বাইরের লোকেশনকে সুন্দর ব্যবহার করেছেন। গালিব আসাদ ভোপালির লেখা সংলাপ এবং গানে কাঁচা শব্দের ব্যবহার ছবির শরীরে এক ধরনের বাস্তব চরিত্র এঁকে দেয়। দেবজ্যোতি মিশ্রর সুরে ‘চুলবুলি ইয়ে চুলবুলি’ বা ‘হায়রে হায় ঘুংঘটা’, অন্য এক ‘দেবু’কে সামনে আনে।
[ খান হিরোদের মাত দিয়ে কোন জাদুতে ছবি হিট নওয়াজের? ]
প্রধান চরিত্রে নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকির ঘাড়ে এবার বোঝাটা বেশি ওজনের। ফলে তাঁকেও একসময় ক্লান্ত লাগছিল। নিজস্ব ঘরানার পূর্ণ ব্যবহারের পরেও ছোট ছোট কাজগুলোয় নওয়াজ নিজের জাত আবার চিনিয়ে দিয়েছেন। তবে সেরা চমক বিদিতা বাগ। কলকাতায় তেমন জায়গা না পেয়ে তিনি এখন বলিউডবাসী। ফুলওয়ার চরিত্রে তাঁর শরীরী আবেদন-লাস্য-যৌনতা পরিচালক ব্যবহার করেছেন পুরোমাত্রায়। কোনও প্রিটেনশন রাখেননি বিদিতা। অসাধারণ তিনি। বাঁকের চরিত্রে নতুন মুখ যতীন গোস্বামীও নজর কাড়েন। তবু ‘বাবুমশাই বন্দুকবাজ’ ভাল ছবির মশলা নিয়ে তৈরি হয়েও, মিশ্রণ ঠিক না হওয়ায় একটু যেন স্বাদহীন থেকে গেল।