Advertisement
Advertisement
Prosenjit Chatterjee

আমাকে দেখে বাঙালিরা আঁতকে উঠবে পয়লা বৈশাখে: প্রসেনজিৎ

শুক্রবার মুক্তি পেয়েছে প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের ছবি 'শেষ পাতা'।

Exclusive interview of Prosenjit Chatterjee on Web series| Sangbad Pratidin
Published by: Akash Misra
  • Posted:April 14, 2023 5:24 pm
  • Updated:April 14, 2023 5:24 pm

‘জুবিলি’ সিরিজের হাত ধরে ওটিটিতে পা রেখেছেন। অন্য়দিকে মুক্তি পেয়েছে ‘শেষপাতা’। দুই ছবিতে একেবারে নতুন অবতারে টলিউডের বুম্বাদা। এই দুই ছবি নিয়ে বিশেষ আড্ডায় প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়। শুনলেন শম্পালী মৌলিক

বাংলা নববর্ষের শুরুটা তাহলে ভাল হতে চলেছে। একদিকে ‘শেষ পাতা’ মুক্তি পাচ্ছে, অন‌্যদিকে হিন্দি ওয়েব সিরিজ ‘জুবিলি’-র সাফল‌্য। কী বলবেন?

Advertisement

প্রসেনজিৎ: এটা আমার কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ বছর। চেষ্টা করি আট-­­দশ বছর পর পর নিজের একটা অধ‌্যায়কে পাল্টাতে। একটা সময় একদম কমার্শিয়াল ছবি করেছি, সেগুলো সুপার-ডুপার হিট হয়েছে। ঋতু (ঋতুপর্ণ ঘোষ) আমাকে অন‌্য একটা রাস্তা দেখিয়েছিল। তারপর সৃজিত, কৌশিকের হাত ধরে আমি অন‌্যরকম ছবি করা শুরু করি। ঠিক দশ বছর পরে আবার নতুন চ‌্যালেঞ্জ নিলাম, যেটা ওয়েব সিরিজের চ‌্যালেঞ্জ। নতুন মিডিয়াম, যেখানে সারা ভারতের ভাল অভিনেতারা কাজ করছেন। তাঁরা প্রচণ্ড ট‌্যালেন্টেড। তাঁদের কাজ দেখে একদিকে ঈর্ষা হয়, আবার ভীষণ ভাল লাগে। আমাদের রীতিমতো চ‌্যালেঞ্জ দিচ্ছেন। নিউ এজ ডিরেক্টরদের মধ্যে অন‌্যতম বিক্রমাদিত‌্য মোতওয়ানে, তাঁর সঙ্গে কাজ করাটা একটা ব্লেসিংস। ওটিটি-র প্রথম কাজেই যে এতটা সাড়া পড়েছে, এটা আমার কাছে আশীর্বাদের মতো। আমার হিন্দি ছবির প্রথম পরিচালক ডেভিড ধাওয়ান ফোন করেছিলেন, তাঁর ভাল লাগার কথা জানাতে। কত পুরনো লোকজন ফোন করছে! একইসঙ্গে এটাও বলব, দুটো সম্পূর্ণ বিপরীতধর্মী চরিত্রে আমাকে দেখে বাঙালিরা আঁতকে উঠবে পয়লা বৈশাখে। একদিকে ‘শেষ পাতা’-র লেখক ‘বাল্মীকি’, অন‌্যদিকে ‘জুবিলি’-র প্রযোজক-পরিচালক ‘শ্রীকান্ত রায়’। দু’জনেই শিল্পী কিন্তু পোলার অপোজিট। এটা শিল্পী হিসাবে আমার কাছে বড় চ‌্যালেঞ্জ ছিল। যখন ‘মনের মানুষ’ করেছিলাম তার কিছু দিনের মধ্যে ‘অটোগ্রাফ’-এর সেটে ঢুকতে হয়েছিল। একদিকে ত‌্যাগী চরিত্র অন‌্যদিকে ভোগী চরিত্র। ওটাও এইরকমই চ‌্যালেঞ্জ ছিল।

Advertisement

‘বাল্মীকি’ নিঃসঙ্গ-ক্লান্ত-বিধ্বস্ত লোক কিন্তু নিজের প্রিন্সিপল-এ অনড়। এমন আপসহীন লেখকের চরিত্রে অভিনয় করতে, তার সাইকি বুঝতে কী করেছিলেন?
প্রসেনজিৎ: বাল্মীকির চরিত্রটা প‌্যানডেমিকের মধ্যেই শুনিয়েছিল অতনু (ঘোষ)। ও আমাকে পর পর এক্সাইটিং চরিত্র দিয়েছে। এক্ষেত্রে স্ক্রিপ্ট শোনার পর বলেছিলাম, আমি এটা পারব না রে। কারণ একটা লোকের প্রতি পাঁচ মিনিটে মুড সুইং করছে। লোকটা বদমাইশ না প্রেমিক কিছুই বোঝা যাচ্ছে না, খ‌্যাপাটে আনপ্রেডিক্টেবল চরিত্রটা। তারওপর এই লোকটার কথাবার্তা বলার ধরন, উচ্চারণ, এই ভাষাটা তো আজকের নয় অথচ খুব সংবেদনশীল। অতনু খুব সাহায‌্য করেছে। আমি চেষ্টা করেছি যতটা সম্ভব।

এরকম মানুষ তো রোজ দ‌্যাখেননি নিজের আশপাশে।
প্রসেনজিৎ: এক্ষেত্রে প্রচুর লেখকের জীবনী পড়েছি। শক্তিদা, সুনীলদার জীবন নিয়ে লেখা পড়লাম। অল্প দেখেছি তবু আমার কাছ থেকে দেখা একজন হলেন ঋত্বিক ঘটক। আমার ছোটবেলায় উনি আমাদের বাড়িতে থাকতেন। শুধু লেখক নয়, বাঙালিদের মধ্যে এমন অনেক জার্নালিস্টকে চিনি, যাঁরা জীবনে কলমটাকেই অস্ত্র করেছেন। এই জায়গায় তঁারা কখনও অসৎ হননি। আজকের দিনে দাঁড়িয়ে আমরা আপস করি সবাই। যে কোনও ধরনের শিল্পীই ভীষণভাবে জাজড হচ্ছেন। বাল্মীকি কিন্তু জাজড হওয়া নিয়ে ভাবে না, তার কিচ্ছু এসে যায় না। এইরকম চরিত্র বাঙালিদের মধ্যে আছে।

বাল্মীকি লেখা দিয়ে উপার্জন করে। আগে টাকা নিয়ে ফেলেছে, এদিকে লেখাটা দিতে পারছে না…
প্রসেনজিৎ: কিন্তু সে জানে কোন গল্পটা চাওয়া হচ্ছে তার কাছে। বহুদিন ধরে লেখার তাগাদা সহ‌্য করছে। আসল কথাটা হচ্ছে, টাকা দিয়ে যখন-তখন লেখাতে পারো না। লেখা আসতে হবে। একজন মিউজিশিয়ানকে টাকা দিয়েই বলা যায় না, সেতারটা বাজাও। সেতারটা ভিতর থেকে আসতে হবে। সেইজন‌্যই তাকে শিল্পী বলে। ব‌্যাঙ্কের মতো তো নয় বিষয়টা! আমরা কিন্তু সকলেই কোথাও না কোথাও ঋণী। সেটা শুধু অর্থের বিষয় নয়। বাল্মীকি বহন করে চলেছে তার স্ত্রীর মৃত্যু, কিন্তু প্রকাশটা আলাদা। সামান‌্য প্রস্থেটিক আছে। তবে এই চরিত্রটা করতে গিয়ে আমি নিজেকে ভেঙেছি। চেহারা, হঁাটাচলা সবদিক থেকে। ওই কণ্ঠস্বর বের করে আনা খুব শক্ত ছিল। প্রায় চল্লিশ শতাংশ ডাবিং করে নিয়ে, আমি আবার পাল্টেছি। খুব খুঁতখুঁতে ছিলাম এটা নিয়ে, অতনুকে বলতাম সেটা। মনে হয় মানুষ, ‘দোসর’-এর পর আমার এই চরিত্রটা মনে রাখবে।

এই ছবিতে আপনার যা অভিনয় ন‌্যাশনাল অ‌্যাওয়ার্ডে বিবেচনায় আসতে পারে।
প্রসেনজিৎ: ওটা নিয়ে আর ভাবি না। আমাদের বাংলা থেকে ভয়েস রেজ করা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এটা আমার ক্ষেত্রে বলছি না। আমরা কিন্তু নিজেদের জিনিস নিয়ে আর গর্বিত হই না। বলি না, ন‌্যাশনালি পৌঁছই না। তবে আমি চেষ্টা কোনওদিন ছাড়ব না (হাসি)।

এই ছবিতে ধার নেওয়া এবং শোধ দিতে পারা-না পারার বিষয়টা ঘুরে ফিরে এসেছে। আপনার জীবনেও অনেক স্ট্রাগল আছে। এই চরিত্র করতে গিয়ে কখনও নিজের জীবনের আর্থিক অনটনের কথা মনে পড়েছে?
প্রসেনজিৎ: ঈশ্বরকে বলি, আমি যেটা দেখেছি, পৃথিবীর কোনও লোকের যেন এটা না হয়। সোনার চামচ মুখে জন্মেছি। স্কুলে যেতাম গাড়ি দঁাড়িয়ে থাকত, পিছনে একটা লোক দাঁড়িয়ে থাকত। তারপর একসময় এল, মা ব‌্যাগ থেকে খুচরো পয়সা বের করে করে কোনওরকমে একটা ডিম আর দুটো আলু দিয়ে ভুজিয়া করে দিচ্ছে, এটাও দেখেছি। তাই গর্ব করে বলি, পৃথিবীতে সব অন‌্যায় হয়তো করতে পারি, কিন্তু স্বপ্নেও কারও ভাত মারতে পারব না।

‘জুবিলি’-র প্রসঙ্গে যাই। বাংলা ইন্ডাস্ট্রির সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ নক্ষত্রের ওয়েব ডেবিউ হল গত সপ্তাহে। মুম্বইয়ে কেমন সাড়া পেলেন?
প্রসেনজিৎ: মুম্বইয়ের প্রোমোশনের সময়কার অভিজ্ঞতা দারুণ। সকলের ইন্টারভিউ শেষ হওয়ার পরেও দেখলাম ‘স‌্যর’-এর সঙ্গে কথা বলার জন‌্য বিশিষ্টজনরা অপেক্ষা করছে, সেটা আমার প্রাপ্তি। বাংলা ছবি করেই তো এই সম্মান অর্জন করতে পেরেছি। রিলিজের পরে এত কমপ্লিমেন্ট, ফোন, মেসেজ পেয়েছি কী বলব! এটা তো সিনেমা বা সিরিয়াল নয়, সিরিজ। এইখানে যে নিজেকে ফিট ইন করাতে পারলাম, আমি খুশি। এ জন‌্য বিক্রমাদিত‌্যকেই ধন‌্যবাদ দেব। আমাকে কলকাতার কয়েকজন লিখেছে, ‘এই ধৈর্যই প্রমাণ করে দিয়েছে তোমার ভাবনা কতটা ঠিক। কত কাজ না নিয়ে বসেছিলে।’

Prosenjit Chatterjee is briliant in new hindi Series jubilee

আপনার ‘শ্রীকান্ত’ চরিত্র সেই সময়ের হিমাংশু রায়-এর আদলে তৈরি, যে স্টারমেকার। ‘বম্বে টকিজ’-এর ছায়া সিরিজ জুড়ে। এই চরিত্রটা উওম‌্যানাইজার।
কিছুটা ধূসর। কানেক্ট করেছিলেন নিজের সঙ্গে?
প্রসেনজিৎ: আমি এটা এনজয় করছিলাম। শ্রীকান্ত রায় একটা প্ল‌্যাটফর্ম নিজে তৈরি করেছে। সে হিমাংশু রায়, শশধর মুখার্জি বা বি.এন সরকার-ও হতে পারে। যাঁরা স্টুডিও তৈরি করেছিলেন, তঁাদের স‌্যালারিতে হিরো-হিরোইনরা থাকতেন। এটা আমার চোখে দেখা। আমার বাবা তেমনই একজন অভিনেতা ছিলেন। যখনই ওরা আমাকে গল্প শুনিয়েছিল, ‘কাগজ কে ফুল’-এর কথা মনে পড়েছিল। সারা জীবন ভেবেছি, একটা ‘কাগজ কে ফুল’ কি কোনওদিন করতে পারব না? গুরু দত্ত-র আমি বিশাল ফ‌্যান, বিক্রমাদিত‌্য ঠিক সেই গাড়ি নিয়ে স্টুডিও-তে ঢোকার শটটাই আমাকে দিল! আমি ওকে জড়িয়ে ধরেছিলাম। বলেছিলাম, ‘তুমি জানো, এটা আমার কত ছোটবেলার স্বপ্ন!’ আমি স্টুডিও তৈরি করিনি, অ‌্যাক্টরও না, কিন্তু নিজে একটা ব্র‌্যান্ড তৈরি করেছি চল্লিশ বছর ধরে। এই ব্র‌্যান্ড কেউ বানিয়ে দেয় না। বানিয়ে দেন ঈশ্বর, আর আমাদের চেষ্টা, প্রযোজক, পরিচালক-অভিনেতার মিলিত চেষ্টা। এই ব্র‌্যান্ড বাঁচাতে তাকে নিষ্ঠুর হতে হয়। এই নিষ্ঠুরতায় কোনও পাপ নেই। ব‌্যবসার অঙ্গ। তার মধ্যে চরিত্রটা ফ্ল‌্যামবয়েন্ট। শ্রীকান্তকে দেখলেই মেয়েরা আকৃষ্ট হয়। হ্যাঁ, আমার ক্ষেত্রেও এটা হয়। ছেলের বান্ধবীরাও ট্রেলার দেখে বলেছে, ইওর ফাদার ইজ টু হট। রিল আর রিয়েল মিলেছে তো বটেই, কী আর করব (হাসি)! বম্বেতে সবাই কেবল বলছে, আমাকে বাবার মতো দেখাচ্ছে!

Sesh Pata

দেবিকা রানি এবং হিমাংশু রায়-এর আদলে সুমিত্রা-শ্রীকান্তর চরিত্র তৈরি, সেখানে প্রথম পাঁচ পর্বে আপনার আর অদিতির রসায়ন আরেকটু এক্সপ্লোর করা যেত না?
প্রসেনজিৎ: এই রসায়ন পুরো সিরিজে প্রচণ্ড নেই ঠিকই কিন্তু যেটা আছে মারাত্মক। পরের পাঁচটা এপিসোডও খুব ভাল। আসলে সুমিত্রা-শ্রীকান্ত তো দু’জন টাইকুন। এ বলে আমায় দ‌্যাখ, ও বলে আমাকে! দুটোই কিন্তু মোস্ট সাকসেসফুল অথচ ট্র‌্যাজিক চরিত্র। সকলের ওই ট্রেনের দৃশ‌্যটা মারাত্মক লেগেছে। আর যেখানে শ্রীকান্ত প্লেব‌্যাক নিয়ে আসছে, অপারশক্তি (মদন কুমার) আর আমার ওই নাচের দৃশ‌্যটা ভাইরাল। অপারশক্তি দারুণ চ‌্যালেঞ্জ নিয়েছে এবং সিদ্ধান্ত (জয় খান্না) তো অসামান‌্য!

পুজোয় তাহলে আবার প্রসেনজিৎ-সৃজিত জুটি ফিরছে?
প্রসেনজিৎ: ফিরছে তো বটেই, জোরালোভাবে। জুনে বা জুলাইয়ে শুটিং শুরু (হাসি)।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ