Advertisement
Advertisement
Dibakar Banerjee

ছবির জন্য রিস্ক নেওয়া আমার নেশা: দিবাকর বন্দ্যোপাধ্যায়

শুক্রবার মুক্তি পেয়েছে দিবাকর বন্দ্যোপাধ্যায়ের নতুন ছবি 'এলএসডি ২'।

Interview of Director Dibakar Banerjee on LSD 2
Published by: Akash Misra
  • Posted:April 19, 2024 7:55 pm
  • Updated:April 19, 2024 7:55 pm

শুক্রবার মুক্তি পেয়েছে দিবাকর বন্দ্যোপাধ্যায়ের নতুন ছবি ‘এলএসডি ২’। ছবি নিয়ে বিশেষ আড্ডায় পরিচালক। শুনলেন বিদিশা চট্টোপাধ্যায়। 

২০১০-এ মুক্তি পাওয়া ‘এলএসডি’ সময়ের থেকে এগিয়ে ছিল, সবাইকে নাড়িয়ে দিয়েছিল। ‘এলএসডি টু’-ও কি তেমন ছবি?
দিবাকর: আমি জানি না, ব‌্যক্তিগত স্তরে ‘এলএসডি টু’ কাকে কীভাবে প্রভাবিত করবে! আমি আর একতা (কাপুর) যখন ‘এলএসডি’ তৈরি করি, তখন একটা জিনিস রিয়‌্যালাইজ করি, যে এই ছবি ভারতের নির্দিষ্ট সময়ের সাংস্কৃতিক-সামাজিক ইতিহাসকে তুলে ধরেছিল। এটাই সেই সময়ের ভারত, আমাদের দেশ, আমাদের জীবন। ২০১৯-’২০ সালে একতা বলে, “লেট’স মেক ‘এলএসডি টু’, ইট’স টাইম।” ততদিনে প্রায় এক দশক কেটে গিয়েছে, নতুন ভারত গড়ে উঠেছে। এই এক দশক পরও ঠিক এক পরিস্থিতির মুখোমুখি আমরা। নতুন সময়ে এমন নেট-নির্ভর পৃথিবী যেটার মধ্যে পড়ে আমরা হাবুডুবু খাচ্ছি, হিমশিম খাচ্ছি বলা যায়। বর্তমান সময় আমাদের জীবনকে ভয়ংকরভাবে বদলে দিচ্ছে, প্রভাবিত করছে। এবং আমরা, মানুষ হিসাবে বদলে যাচ্ছি। আমাদের ভাবনা-চিন্তা-অনুভূতি বদলে যাচ্ছে। এর আগে ‘এলএসডি টু’ বানানো যেত না। লাইফ হ‌্যাজ টু হ‌্যাপেন।

Advertisement

ছবি প্রচারের সময় পরিবারের সবাইকে একসঙ্গে নিয়ে আসার আগে পরামর্শ করতে বলেছেন। নিজের ছবি নিয়ে কে এমন ডিসক্লেমার দেয়?
দিবাকর: ওয়েল ‘এলএসডি’ (প্রথম ছবি) যখন মুক্তি পায় তখনও পরিষ্কার বলেছিলাম, এটা অ‌্যাডাল্ট ছবি, অল্পবয়সিদের জন‌্য একেবারেই অ‌্যাপ্রোপ্রিয়েট নয় এবং নিশ্চিতভাবে সপরিবার দেখার ছবি নয়। আমার মনে আছে ‘এলএসডি’-র হল ভিজিটের একটা ঘটনা। যখন প্রেমিক যুগলের মাথা কেটে হত‌্যা করা হয়, আমার সামনে এক ভদ্রলোক সবে তাঁর পিৎজায় কামড় দিতে যাচ্ছিলেন। সেই দৃশ‌্য দেখে বলে ওঠেন, ‘খানে কা টেস্ট বিগাড় দিয়া’। সেই সময়ে যারা ছোট ছিল তারা এখনকার নতুন জেনারেশন, প্রথম ছবিটা
সম্পর্কে হয়তো জানেই না, এটা তাদের কাছে একটা নতুন ছবি।
দিবাকর: ‘এলএসডি’-তে রাজকুমারের গল্পে হিডেন ক‌্যামেরায় যৌনতা শু‌ট করার দৃশ‌্য ছিল। এখন আর ক‌্যামেরা হিডেন নয়। সোশ‌্যাল
মিডিয়ায় নিজেরাই ছবি দিচ্ছি, লাইভ করছি। এখন ডিপ ফেকের যুগ। সেটা আপনার তিনটে গল্পে কীভাবে পাব?
দিবাকর: হ্যাঁ, ঠিকই, ‘এলএসডি’-তে মেয়েটা জানত না, তাকে শু‌ট করা হচ্ছে। এখন পরিস্থিতি আলাদা। এখন কেবল সিনেমায় অভিনয় হয় না। এখন আমরা নিজেদের জীবন অভিনয় করে দেখাই সোশ‌্যাল মিডিয়ায়। উই অ‌্যাক্ট আউট আওয়ার লাইভস। এবং সবাই দেখছে জেনেই জীবনের সবচেয়ে ব‌্যক্তিগত কিংবা সাদামাঠা মুহূর্ত সোশ‌্যাল মিডিয়ায় তুলে ধরছি। জামাকাপড় পরে রেডি হওয়ার ভিডিও, আর্মপিট শেভ করার ভিডিও, ব্রাজিলিয়ান ব্লিচ ভিডিও, অ‌্যানাল ব্লিচ ভিডিও, কী নেই! আমাদের সব কিছু খুব সযত্নে ক‌্যামেরার সামনে তুলে ধরছি এটা জেনেই যে, গোটা বিশ্ব দেখছে। এবং গোটা পৃথিবী জানে যে আমরা জানি যে তারা দেখছে। ইটস এ গেম। সেই কারণেই দুটো ছবি আলাদা হয়ে যায়। যেন একটা নতুন জীবনশৈলী।

Advertisement

[আরও পড়ুন: ভোটকেন্দ্রে জনতার ধাক্কায় নাজেহাল থলপতি বিজয়, নেতা-অভিনেতাকে বাঁচাতে আসরে পুলিশ]

‘সন্দীপ অউর পিঙ্কি ফরার’ দেরিতে মুক্তি পাওয়া, ‘নেটফ্লিক্স’-এর প্রোজেক্ট ‘তিস’ বন্ধ হয়ে যাওয়া কতটা হতাশা তৈরি করেছিল?
দিবাকর: ওয়েল আপনি কথা বলছেন ‘খোসলা কা ঘোসলা’-র পরিচালকের সঙ্গে। যার প্রথম ছবি মুক্তি পেতে দুবছর লেগেছিল। আমি এসবে খুব ভালোভাবেই অভ‌্যস্ত। আমি বোধহয় বলিউডের সেই যোগ‌্য পরিচালক যে ইন্ডাস্ট্রির দমননীতির কোপে সর্বদাই পড়ে। গোড়া থেকে পরিচালক হিসেবে এটাই আমার যাত্রাপথ। তা সত্ত্বেও বলিউডে প্রান্তিক পরিচালক হিসেবে সারভাইভ করে যাওয়া একটা মিরাকল বলা যায়। এবং এত কিছুর পরও একতা কাপুর প্রযোজক হিসেবে আমার পাশে আছে, এবং ‘এলএসডি টু’-র মতো ছবি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাচ্ছে– এর চেয়ে বেশি আর কী-ই বা চাইতে পারি!

নেটফ্লিক্সের ছবিটা বন্ধ হয়ে যাওয়ার সময় বলা হয়েছিল, এটা ‘রিস্কি’ ছবি। এই যে ‘রিস্কি’ পরিচালকের তকমা– এটাকে কীভাবে দেখেন?
দিবাকর: এই তকমা আমাকে অনেক বেশি অ‌্যালার্ট, অ‌্যাক্টিভ এবং ‘টোনড’ করে রাখে। কারণ ছবি বানানো, শিল্পের আগে নিজের সারভাইভাল। তাই নিজেকে খানিক অভুক্ত, ঋজু এবং কৃশকায় রাখাটা খুবই জরুরি। খিদেটা জিইয়ে রাখা জরুরি। প্রতিটা নতুন ছবিই, প্রথম ছবি। এবং সবসময় যেন দড়ির ওপর দিয়ে চারটে বল জাগলিং করতে করতে এগনো– পরিচালক এবং প্রযোজক হিসেবে। তাতে রিস্ক নেওয়ার প্রতি, বিপদসংকুল পথে হাঁটার মারাত্মক নেশা তৈরি হয়। সিনেমার যাত্রাপথে আমি রিস্ক অ‌্যাডিক্টে পরিণত হয়েছি। রিস্ক নেওয়া বা বিপজ্জনক রাস্তায় হাঁটার নেশা আমার মারাত্মক। একটা সুবিধে আছে, আমার ছবিগুলো খুবই স্বল্প বাজেটে তৈরি, খুব সতর্ক হয়ে, সবদিক ভাবনাচিন্তা করে, প্ল‌্যান করে বানানো। একেবারেই তাড়াহুড়ো বা ম‌্যানেজ দিয়ে বানানো নয়। সেই কারণেই বোধহয় সারভাইভ করে যাই।

Here is the Review of LSD 2 Movie

‘এলএসডি টু’-তে ‘এব এল্লে উ’ খ‌্যাত প্রতীক ভ‌্যাটস এবং শুভম আপনার সহ-লেখক। শুনেছি নানা মতভেদ হয় এবং ওঁরা নিজেদের মতামত নিয়ে বেশ একগুঁয়ে ছিলেন।
দিবাকর: প্রতীক এবং শুভম দুজনেই ‘এফটিআইআই’-এর। যখন ছাত্রদের স্ট্রাইক চলছিল, আমি জাতীয় পুরস্কার ফিরিয়ে দিই, এই শুভম এবং প্রতীক সেই ছাত্রদের মধ্যে দুজন যাদের জেল হয়, মার খেতে হয় এবং এখনও হয়তো ওদের কেস ক্লোজ হয়নি। ওদের এখনও নির্দিষ্ট থানায় গিয়ে সময়সীমা অনুযায়ী হাজিরা দিতে হয়। ওরা দেখেছে এই দেশ, ভারত কী করতে পারে। আর ওরা এটাও জানে, মুখ খুললে কীভাবে প্রসিকিউটেড করা হয়। ওরা এই ছবির সঙ্গে যুক্ত হয়, কিন্তু সমস‌্যা একটাই ছিল। আমি একজন টিপিক‌্যাল বলিউড পরিচালক, তা সে যতই প্রান্তিক হই না কেন এবং ওরা এই ছবির আংশিক দায়িত্বে। ওদের চিন্তা ছিল যে, এই ছবি বিক্রি করতে যতটুকু প্রয়োজন ততটুকুই এর মান নিয়ে ভাবা হচ্ছে, তার বেশি কিছু নয়। ওরা আমাকে বাজিয়ে দেখতে চাইছিল, ছবিটা কী হতে পারে তাই নিয়ে আমার কতটা ক্ল‌্যারিটি আছে। আমাদের মধ্যে প্রচুর মতবিরোধ হয়েছে। তবে নিশ্চয়ই ওদের শেষ পর্যন্ত মনে হয়েছে যে, একটা পয়েন্টের পর ছবিটাকে বিকিয়ে যেতে দেব না, বা একটা পয়েন্টের পর ছবিটা ততটাও প্রবলেম‌্যাটিক নয়। একটা পয়েন্টের পর ছবিটার ‘গেজ’ নিয়ে সমস‌্যা হবে না। বা একটা পয়েন্টের পর ট্রান্সফোবিক নয়। অর্থাৎ ট্রান্স লিবারেশন-এর ছদ্মবেশে এই ছবি ট্রান্সফোবিক হয়ে উঠছে না। বলিউডের এই যে নানা সমস‌্যা, এবং এই ইস্যু নিয়ে ছবি করার সময়, ইস্যুগুলো অ‌্যাড্রেস করতে গিয়ে নিজেদের প্রবলেম‌্যাটিক দৃষ্টিভঙ্গিকেই তুলে ধরে। আমার ধারণা ওরা নানাভাবে আমাকে এই সব বিষয় নিয়ে পরীক্ষা করছিল। একগুঁয়ে বলতে এটাই বোঝাতে চেয়েছি।

স্বস্তিকা মুখোপাধ‌্যায়ের সঙ্গে আবার কাজ করলেন!
দিবাকর: স্বস্তিকা এই ছবিতে খুব গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে। সেই চরিত্র, যার মধ‌্য দিয়ে গোটা মধ‌্যবিত্ত ভারত এই ছবিটা দেখবে, ওর চোখ দিয়েই দেখবে। বনিতা (কুলু) এবং স্বস্তিকার (লভিনা) চরিত্র– এই দুই নারী কখনও একসঙ্গে পাশাপাশি, কখনও মুখোমুখি সংঘাতে। এই দুজনকে মুখোমুখি লড়িয়ে দিতে পরিচালক হিসেবে খুব এনজয় করেছি। এবং ওরা দুজনেই ওয়ার্কিং উইমেন, ক‌্যাপিটালিজমকে সার্ভ করছে আবার অন‌্যদিকে এরাই লিবারাল ফেমিনিজিম-এর যোদ্ধা। এবং তার পর কী হয় সেটাই দেখার!

‘পটলবাবু ফিল্মস্টার’ এবং ‘ডিটেক্টিভ ব্যোমকেশ বক্সি’-র পর বাংলা সাহিত‌্য নিয়ে কাজ করবেন?
দিবাকর: এখনই আমার প্ল‌্যান প্রকাশ্যে আনতে পারব না, কিন্তু বাংলা সাহিত‌্য এতটাই সিনেমা ফ্রেন্ডলি যে, সে বোকাই হবে যদি এমন সাহিত‌্যকে সিনেমায় কাজে না লাগায়। কারণ ভালো গল্পর ওপর নির্ভর করেই ভালো সিনেমা তৈরি হয়। সুযোগ পেলে নিশ্চয়ই করব।

[আরও পড়ুন: ‘লাভ সেক্স ধোঁকা’ নয়, মারণফাঁদের ভিন্ন গল্প বললেন পরিচালক দিবাকর, পড়ুন রিভিউ]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ