Advertisement
Advertisement

মহানায়কের স্মৃতি ফিরিয়ে সৃজিতের ‘চৌরঙ্গী’তে স্যাটা বোস প্রসেনজিৎ

কাস্টিং-এ রয়েছে দারুণ চমক।

Prosenjit Chatterjee to enact Uttam Kumar in Srjit’s Chowringhee
Published by: Sangbad Pratidin Digital
  • Posted:January 30, 2018 10:05 am
  • Updated:September 17, 2019 2:25 pm

ইন্দ্রনীল রায়: বাঙালি পাঠককে পাঁচতারা হোটেল প্রথম চিনিয়েছিল এই উপন্যাস। ঝাঁ চকচকে সেই হোটেলের পিছনে থাকা রক্তমাংসের কিছু মানুষের নেপথ্যকাহিনি ছিল এই উপন্যাস। এবং সেই সময়ের স্ক্যানড্যাল, হাই সোসাইটির মুচমুচে গসিপ, এয়ার হোস্টেসদের জীবনের গল্প, শংকরের চোখ দিয়েই প্রথম জেনেছিল বাঙালি।

গ্রেট ইস্টার্ন না গ্র‌্যান্ড হোটেল? কোন হোটেলের ভিত্তিতে ১৯৬২ সালের এই কালজয়ী উপন্যাস লেখা, তাই নিয়ে তর্কপ্রিয় বাঙালি হেমন্ত না মান্না, মোহনবাগান না ইস্টবেঙ্গলের মতোই আরও একটি বিষয় পেয়েছিল তর্ক করার। বেশ কয়েক দশক পরে লেখক মণিশংকর মুখোপাধ্যায় অবশ্য নিজে বলেছিলেন, কাল্পনিক ‘শাহজাহান’ আসলে ছিল ‘স্পেনসার্স হোটেল’-এর ভিতরকার কাহিনি। শুধু কি তাই, একটা উপন্যাসকে ঘিরে এত ‘মিথ’, এত আগ্রহের জন্যই বোধহয় লেখার বহু বছর পরেও সেই উপন্যাসের ইংরেজি অনুবাদও বেস্টসেলার হয়েছিল।

Advertisement

‘আওয়ার লাইফ ইজ বাট আ উইন্টার্স ডে: সাম ওনলি ব্রেকফাস্ট অ্যান্ড অ্যাওয়ে; আদার্স টু ডিনার স্টে অ্যান্ড আর ফুল ফেড; দ্য ওলডেস্ট ম্যান বাট সাপস অ্যান্ড গোজ টু বেড: হি দ্যাট গোজ সুনেস্ট হ্যাড দ্য লিস্ট টু পে।’ এসি ম্যাফেন-এর বিখ্যাত এই উক্তি দিয়ে যে বইয়ের শুরু, সেই শংকরের ‘চৌরঙ্গী’ আবার ফিরছে বড়পর্দায়। ছবির পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায়। সঙ্গে অবশ্যই এই সময়কার টালিগঞ্জের সবচেয়ে চমকে দেওয়া কাস্টিং। একই ছবিতে রয়েছেন প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, আবির চট্টোপাধ্যায়, যিশু সেনগুপ্ত, জয়া এহসান, মমতা শংকর। সোমবার বিকেলেই ছবির অফিশিয়াল অ্যানাউন্সমেন্ট হয়। যদিও এই ছবির নাম কী হবে, তা এখনও ঠিক হয়নি।

Advertisement

27067356_1338651192902482_8567892715711576580_n

[‘শ্রীকান্তদার ডিভোর্সের জন্য আমি দায়ী নই’]

এ ছাড়া ছবির প্রযোজকের জায়গাতেও রয়েছে চমক। এই প্রথম যৌথভাবে এসভিএফ-এর সঙ্গে ছবিটির প্রযোজনা করছেন সৃজিত মুখোপাধ্যায়, যাঁর প্রযোজনা সংস্থার নাম ‘ম্যাচকাট প্রোডাকশনস প্রাইভেট লিমিটেড’। নাম ঠিক না হলেও সোমবার বিকেলে যা জানা গেল, কলকাতায় এই ছবির শুটিং শুরু হবে এই বছরের জুন মাস থেকে। ছবির সংগীত পরিচালনা করছেন অনুপম রায়।

এর আগে ১৯৬৮ সালে উত্তম কুমার-শুভেন্দু চট্টোপাধ্যায়-বিশ্বজিৎ-সুপ্রিয়া দেবী-অঞ্জনা ভৌমিক অভিনীত ছবিটি অভিনয় এবং গানের জোরে আজও সুপারহিট। তার ঠিক পঞ্চাশ বছর পরে ‘শাহজাহান’ হোটেলের সেই স্যাটা বোস, মার্কো পোলো, শংকর, মিসেস পাকড়াশি, নিত্যহরি বাবু, করবী গুহ-র মতো অবিস্মরণীয় চরিত্ররা আবার করে জীবন্ত হয়ে উঠছে ২০১৮-এ।

তা নতুন এই ছবিতে কে হচ্ছেন স্যাটা বোস? শংকরই বা কে? উৎপল দত্তর মার্কো পোলো চরিত্র করছেন কোন অভিনেতা?

‘স্যাটা বোস অবশ্যই প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়,’ প্রশ্ন শুনে প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই বলেন ‘অটোগ্রাফ’, ‘বাইশে শ্রাবণ’-এর পরিচালক। তা ছাড়া? ‘শংকর হচ্ছে আবির। অনিন্দ্য পাকড়াশি, মানে যে চরিত্রটা বিশ্বজিৎ চট্টোপাধ্যায় করেছিলেন আগের ছবিতে সেটা করছে যিশু। মিসেস পাকড়াশি করছেন মমতা শংকর। সুপ্রিয়া দেবীর চরিত্রটা করছে জয়া এহসান আর আমার ছবিতে মার্কো পোলো হলেন অঞ্জন দত্ত। অঞ্জনা ভৌমিক, মানে এয়ার হোস্টেস সুজাতা মিত্রর চরিত্রের কাস্টিং এখনও ফাইনাল হয়নি। এ ছাড়াও বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাস্টিং এখনও বাকি আছে,’ ছবির প্রেস কনফারেন্সে যাওয়ার আগে ফোনে বলছিলেন সৃজিত।

[‘পদ্মাবত’ নিয়ে স্বরার কটাক্ষের কড়া জবাব দিলেন শাহিদ]

যে প্রশ্নটা খুব স্বাভাবিকভাবে উঠবেই, উত্তমকুমারের ‘নায়ক’ অবলম্বনে ‘অটোগ্রাফ’। ‘অ্যান্টনি ফিরিঙ্গি’ অবলম্বনে বানানো ‘জাতিস্মর’-এর পর ‘চৌরঙ্গী’ কি সৃজিত-প্রসেনজিৎ জুটির ‘উত্তম ট্রিলজি’-র তৃতীয় ছবি?

‘একেবারেই না,’ সাফ বলেন পরিচালক। ‘‘অটোগ্রাফ’ কোনওভাবেই যে ‘নায়ক’-এর রিমেক নয়, সেটা দর্শক প্রথম দিন থেকেই বুঝেছিলেন। ‘জাতিস্মর’-ও একদম অন্য ছবি ছিল ‘অ্যান্টনি ফিরিঙ্গি’-র থেকে। এখানেও কিন্তু আমরা একেবারেই পুরনো ‘চৌরঙ্গী’-র রিমেক করছি না, এটা প্রথমেই ক্লিয়ার করে দিতে চাই। ইটস আ ডিফারেন্ট ফিল্ম যেখানে গল্প বলার ধরনটাই আলাদা। এবং যেহেতু এত বছর পর হোটেল ইন্ডাস্ট্রিটাও সম্পূর্ণ পালটে গিয়েছে, তাই আমাদের গল্পটাও ২০১৮-র প্রেক্ষাপটে ফেলা হয়েছে। তবে এটুকু বলতে পারি, কবির সুমনের গান শুনে যেমন আমি কলকাতা শহরটাকে প্রথম ভালবেসেছিলাম, ‘চৌরঙ্গী’ প্রথমবার পড়েও আমার একই অনুভূতি হয়েছিল,’ বলেন সৃজিত।

আর নতুন এই ‘চৌরঙ্গী’-র ব্যাপারে কী বলছেন ছবির ‘সত্যসুন্দর’ ওরফে স্যাটা বোস ওরফে প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়?

‘এরকম একটা প্রাণবন্ত এবং একই সঙ্গে গভীর চরিত্র তো যে কোনও অভিনেতার কাছে সাংঘাতিক চ্যালেঞ্জিং। আমি জানি, আগের ছবিতে যেহেতু এই চরিত্রটা করেছিলেন উত্তমকুমার, তাই সেটা নিয়ে একটা অহেতুক বিতর্ক তৈরি করার চেষ্টা হবে। সেই বিতর্কে জল ঢেলে বলি, এটা একদম অন্য ছবি। এটার ট্রিটমেন্ট একেবারে আলাদা। এবং এটা কিন্তু এখনকার গল্প। তাই কোনও অর্থেই এটা পুরনো ‘চৌরঙ্গী’-র রিমেক নয়,’ বলছেন প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়।

[যৌন হেনস্তার অভিযোগ জিনাত আমানের, অভিযুক্ত ব্যবসায়ী পলাতক]

২০১৩-এ মুক্তি পাওয়া ‘জাতিস্মর’-এর পর আবার সৃজিতের ছবিতে ফিরছেন আবির চট্টোপাধ্যায়। তাঁর অনেক দিনের ক্ষোভ ছিল, সৃজিত তাঁকে বড়সড় কোনও চরিত্র দেন না। এই নিয়ে বেশ কয়েকমাস মন কষাকষিও চলে তাঁদের। এই ছবির অফার পেয়ে কি তাহলে মন কষাকষির অবসান হল?

‘না না, সৃজিতের সঙ্গে আমার ঝগড়া চলবেই। কিন্তু এবার আমরা প্রোডাকটিভ ঝগড়া করব। জোকস অ্যাপার্ট, ‘চৌরঙ্গী’ উপন্যাসের শংকর আমার খুব প্রিয় একটি চরিত্র। পুরো গল্পের সূত্রধর তো আক্ষরিক অর্থেই শংকর। বিরাট দায়িত্ব এটা। পুরো মনঃসংযোগ দিয়ে এই কাজটা করতে চাই,’ বলছেন আবির।

27459219_1338651126235822_4255629195416631812_n

সব মিলিয়ে ছবির লঞ্চের দিন থেকেই সৃজিত-প্রসেনজিতের ‘চৌরঙ্গী’ নিয়ে যথেষ্ট উত্তেজিত ধর্মতলার সিনেমা পাড়া। যারা এখন থেকেই ছবির রিলিজ ডেট জানতে ব্যস্ত হয়ে উঠেছে।

তবে শেষ করার আগে একটা জিনিস না লিখলেই নয়। আঠারো দিন আগে, বাইপাস লাগোয়া এক পাঁচতারা হোটেলে একসঙ্গে ২৫টি ছবির অ্যানাউন্সমেন্ট করেছিল এসভিএফ। ‘চৌরঙ্গী’ কিন্তু সেই লিস্টে ছিল না। যদিও এটা বলা হয়েছিল ওই ২৫টির সঙ্গে আরও ছবি জুড়বে, কিন্তু সেটা যে এত তাড়াতাড়ি হবে, অনেকেই ভাবতে পারেননি। তাহলে হঠাৎ কী হল? নাকি সৃজিত-প্রসেনজিৎ জুটির ম্যাজিক, সঙ্গে আবির আর যিশুর মতো নায়কের উপস্থিতি, এই আঠারো দিনে অনেক সমীকরণই বদলে ফেলল টালিগঞ্জে? ‘শাহজাহান’ হোটেলের নেপথ্যকাহিনিগুলোর মতো এই কাহিনিও কিন্তু অসম্ভব আকর্ষণীয়।

[মাত্র চারদিনেই সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে নজির গড়ল ‘পদ্মাবত’]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ