Advertisement
Advertisement

Breaking News

Suchitra Sen

আজও ‘টাচ’ করা যায়নি, কোন জাদুতে এখনও অমলিন ব্র্যান্ড সুচিত্রা?

মহানায়িকার ৯৩তম জন্মজয়ন্তীতে শ্রদ্ধার্ঘ্য।

Suchitra Sen: the enigma of Bengali movie
Published by: Biswadip Dey
  • Posted:April 6, 2024 2:10 pm
  • Updated:April 6, 2024 10:59 pm

বিশ্বদীপ দে: সময় চলে যায়, বেয়াড়া টাট্টু। সাদা-কালো পৃথিবীকে পিছনে ফেলে কোথায় যে চলেছে ‘এআই’ দুনিয়া! তবু তাঁকে ‘টাচ’ করা গেল না! সুচিত্রা সেন আজও মরণশীল জগতের স্পর্শ এড়িয়ে যৌবরাজ্যের অধিশ্বরীই রয়ে গিয়েছেন। ‘ও আমায় টাচ করবে না’ বলে তর্জনী তুলে রেখেছেন মহানায়িকা। আর চারপাশে সব কিছু বদলে যাচ্ছে। ভেঙে পড়ছে হারানো দিনকাল, ফেলে আসা কালখণ্ড! এতগুলো দশকে বাঙালির এত কিছু বদলে গেল, কিন্তু সুচিত্রা সেনের মতো গুটিকয় আইকন চিরকালীন ফ্রেমে ঝলমল করে রইল! কী সেই জাদু?

সদ্য মুক্তি পেয়েছে একটি বাংলা ছবি। যেখানে প্রযুক্তির জাদু-পরশে ‘অভিনয়’ করেছেন বাঙালির মহানায়ক। উত্তমকুমারের (Uttam Kumar) মতোই সুচিত্রাকেও (Suchitra Sen) ফিরিয়ে আনবেন কেউ? কিন্তু হারানো সময় যে ফেরে না! বরং এই সময়টাকেই পুরনো দিনকালের ভিতরে ঢুকিয়ে দেওয়া যায় অনায়াসে। কেবল হাতের ফোনে বা কম্পিউটারে একবার ক্লিকের অপেক্ষা। ‘সপ্তপদী’ কিংবা ‘চাওয়া পাওয়া’ চলতে শুরু করলেই মনে হবে সদ্য মুক্তি পেয়েছে বুঝি! সাদা-কালোর প্রাচীনতা নিয়ে কেউ মাথা ঘামাবে না। কেবল চেয়ে থাকবে। উত্তম ও সুচিত্রা। পর্দায় কিছু একটা ঘটবে। আর বিস্ফোরণ ঘটতে থাকবে দর্শকের হৃদয়ে।

Advertisement

Uttam-Suchitra

Advertisement

[আরও পড়ুন: ইডির পর NIA, এবার ভূপতিনগরে ‘আক্রান্ত’ কেন্দ্রীয় এজেন্সি]

সম্প্রতি একটি সাক্ষাৎকারে লিলি চক্রবর্তী বলেছেন, ওঁর অভিনয় আরও সাবলীল হতে পারত যদি তিনি নিজেকে সুচিত্রা সেন না ভাবতেন। ভাববার কথা। কিন্তু দর্শক হিসেবে আমরা ভুলতে পারি না ‘উত্তর ফাল্গুনী’ কিংবা ‘সাত পাকে বাঁধা’র মতো ছবিতে তাঁর চরিত্র। সময়ে সময়ে ‘ব্র্যান্ড সুচিত্রা’র ‘লার্জার দ্যান লাইফ’ জৌলুসকেও সরিয়ে রাখতে তাঁর কোনও দ্বিধা ছিল না। কিন্তু এও সত্যি, সব মিলিয়ে আগাগোড়াই ইমেজ-সচেতন ছিলেন সুচিত্রা।

অবিকল তাঁর ‘কাউন্টার পার্টে’র মতোই! শুভেন্দুকে উত্তম পেট্রল পাম্পে নিজে নেমে গাড়িতে তেল ভরতে বারণ করেছিলেন। কারণটা ‘নায়ক’ ছবিতে ‘অরিন্দম’ চরিত্রে তাঁর মুখে শোনা গিয়েছিল, ”আমরা ছায়ার জগতে বিচরণ করি তো…” সুচিত্রা সেনও এই ছায়াময় অলৌকিকতায় বিশ্বাসী ছিলেন। আর তাই তিলে তিলে গড়ে তুলেছিলেন এক জাদুবাস্তব অস্তিত্ব। যে কারণে একটু বয়স হতেই সরে যাওয়া। একেবারে পর্দার আড়ালে চলে যাওয়া। এবং সেটা বছরের পর বছর ধরে অব্যাহত রাখা। তিনি ছিলেন। এই শহরেই। অথচ ছিলেন না! হৃদয়ের গোপন বাণীর মতো, আনমনা বাতাসের মতো কেবল বয়ে গিয়েছিলেন বাঙালির অস্তিত্ব জুড়ে। যাকে দেখা যায় না, ছোঁয়া যায় না, কেবল অনুভবে পাওয়া যায়। এই আত্মগোপন যে কত কঠিন! আজ সোশাল মিডিয়ায় রিলসে এসে কোমর দোলাতে হয় সিনেমা কিংবা সিরিয়ালের নায়িকাদের। ফলোয়ার নামের এক ‘খুড়োর কল’ তাঁদের ছুটিয়ে চলেছে অবিরল। অথচ দৃশ্যমান না থেকেই যে এমন দ্যুতি ছড়িয়ে রাখা যায়, তা সুচিত্রা আমাদের দেখিয়ে দিয়েছেন।

Suchitra-Sen-1

[আরও পড়ুন: রাজ্যপাল-রাজ্য সংঘাতের আঁচ বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়েও]

শনিবার ৯৩ বছর হল তাঁর। সেই কবে পাবনায় যে মেয়েটি জন্মেছিল, ইতিহাসের নিয়মে সে শতবর্ষ ছুঁতে চলল। কিন্তু শতাব্দীর পাথুরে ভাঁজে তাঁকে খুঁজলে হবে না। তিনি যে এক জীবনেই হাজার বছরের পথ পেরিয়ে গিয়েছেন! পাঁচ-ছয়ের দশকের কোনও কিশোর বা কিশোরীর স্মৃতিতে আজও মন্ত্রের মতো ভেসে আসে ‘পেন পেন পেন পাইলট পেন/ প্লেন থেকে নেমে এল সুচিত্রা সেন।’ এই আপাত সামান্য উচ্চারণেই কিন্তু রয়েছে এক অধরা মাধুরীর জলছাপ। আকাশপথের অনন্ত বিস্তারে ভেসে চলা মানুষটা কি সত্যিই কোনওদিন নেমে এসেছিলেন বিমান থেকে? নাকি চিরকাল ধরাছোঁয়ার জমি থেকে বহু দূরে নীল আকাশের মঞ্চই ধারণ করে রেখেছে ‘ব্র্যান্ড সুচিত্রা’কে?

সিনেমা হলের সুস্বাদু অন্ধকারে যুগ যুগ ধরে বয়ে গিয়েছে আর্তি, ‘কিছু খন আরও না হয় রহিতে কাছে’… কিন্তু কোথায় তিনি? এই তো আছেন। আবার নেইও। যা আছে তা কেবল মায়া, কেবল ছায়া, কেবলই প্রেমের মতো অতিলৌকিকতা। পৃথিবী আরও বুড়ো হয়ে গেল, সুচিত্রা কিন্তু একই রয়ে গেলেন। থাকতেই হবে। হরিপদ কেরানিরা বছর গোনে। দেখতে দেখতে একশোও পেরিয়ে যাবে তাঁর ‘ফিজিক্যাল’ বয়স। কিন্তু তুচ্ছ নশ্বর কড় গোনাকে তুড়ি মেরে একই থেকে যাবে সেই অতুলনীয় তর্জনী। না বললেও চলত সুচিত্রা, আপনাকে ‘টাচ’ করার সাধ্যও হবে না কারও।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ