Advertisement
Advertisement

Breaking News

নীললোহিতের হারিয়ে যাওয়াও ‘নিয়তির মুচকি হাসি’!

বিস্মৃতি আর উদাসীনতার কুয়াশা এসে ঘিরে ধরে ক্যালেন্ডারের ২৩ অক্টোবর৷ বাঙালি চমকে দেখে আজই তো নীললোহিতের স্রষ্টার চলে যাওয়ার দিন৷

Death anniversary of Sunil Ganguly
Published by: Sangbad Pratidin Digital
  • Posted:October 23, 2016 2:15 pm
  • Updated:January 14, 2020 7:06 pm

সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ট্রেন ছাড়তে দেরি হলে সে নেমে পড়ত না-জানা কোনও স্টেশনে৷ তারপর দিকশুন্যপুরের অভিযান৷ সে অভিযানে মিশে থাকে চেনা দুনিয়ার অচেনা মায়া৷ লেগে থাকে প্রাত্যহিক যাপনের ঘাম-গন্ধ৷ আর থাকে বোতাম খোলা শার্টের বোহেমিয়ানা৷ সে অভিযানে মিশে থাকে ‘মুমু’র জন্য মনখারাপ৷ লেগে থাকে ‘বন্দনাদি’র ছায়া৷ বাঙালিকে বলে দিতে হয় না এ অভিযান কার৷ তাকে বোধহয় এও বলে দিতে হয় না যে, সে অভিযানের আর কোনও উত্তরাধিকার বাঙালির হাতে নেই৷

নিয়তির মুচকি হাসি যে শুধু গ্রিক ট্র্যাজেডিরই দখলে তা তো নয়৷ বাঙালির আপন উদাসীনতাও তাতে ভাগ বসিয়েছে৷ ফলত বাঙালির বুক কেসে ঠাসা থাকে নীললোহিত, উধাও হয় যাপনে৷ বস্তুত এই গুগল ম্যাপের জীবনে কে আর দিকশূন্যপূরের দিকনির্দেশ পেতে পারে! এই প্রতিপলে হিসেবের মেসেজ জমিয়ে রাখা জীবনে কে আর বোহেমিয়ানায় বুক পেতে দিতে পারে! নস্ট্যালজিয়া যখন মৃদু রোমন্থনের আতরমাখা আদিখ্যেতা মাত্র, তখন কে আর হৃদয় খুঁড়ে বেদনা জাগাতে ভালবাসে!

Advertisement

নীললোহিতকে তাই আর কোথাও পাওয়া যাবে না৷ পাওয়া যাবে না তার স্রস্টাকেও৷ বস্তুত বাঙালির রোম্যান্টিকতার দাঁড়িপাল্লার একদিকে যদি রাখা যায় অপরাজিত অপুকে, অন্যদিকে তবে দ্বিধাহীন রাখা যায় নীললোহিতকে৷ জীবনের প্রতি অপুর বিস্ময়ে যে মায়াবী পেলবতা আছে তা বিভূতিভূষণের নিজস্ব ঘরানা৷ সেই অননুকরণীয় ভঙ্গিতে তিনি ‘পথের পাঁচালী’তে ক্রনিক দারিদ্র্য-অপুষ্টির ছবিও আঁকেন অনেকখানি নরম করে৷ নবারুণ ভট্টাচার্যর মতো সচেতন পাঠকই ভাষার আড়াল থেকে বাস্তবের সেই খর চেহারাটা খুঁজে নিতে পারেন৷ এই ভাষাতেই ফুটে ওঠে অপুর রোম্যান্টিকতা৷ কাশের বনে প্রকৃতির অপরিসীম প্রাচুর্যের মধ্যে যান্ত্রিক সভ্যতার বিস্ময় সেখানে দোলা দেয়, নাড়া দিয়ে যায় প্রথম বায়োস্কোপের আনাস্বাদিত অভিজ্ঞতা৷ এসবই আমাদের বিহ্বল করে৷ প্রকৃতির ভিতর যন্ত্রসভ্যতার অনুপ্রবেশ কখন যে সংঘটিত হয়ে যায়, পাঠক যেন টের পায় না৷ অন্যদিকে নীললোহিতের রোম্যান্টিকতা শুরু হয় ঠিক এখান থেকেই৷ যন্ত্রসভ্যতার আঁকশি কেটে সে তাই বারবার পাড়ি দেয় সেখানে, যেখানে মুখোমুখি এসে দাঁড়ায় জীবন আর জীবনের মর্ম৷ যে জীবন দোয়েলের, ফড়িংয়ের তার সঙ্গে কি কোনওদিন আমাদের দেখা হবে না? অন্তত নীললোহিত পাশে থাকলে সে কথা মনে হয় না৷ স্রষ্টার ঋজু গদ্যভাষার মতোই জীবনও যেন জটিলতা-বাহুল্যবর্জিত এক বৃহত্তর জীবনের সামনে এসে দাঁড়ায়, যেখানে অমরতা তাচ্ছিল্য করার ঔদ্ধত্যও আয়াসসাধ্য বলে মনে হয়৷

Advertisement

দুর্ভাগ্য এই যে, এ উত্তরাধিকার বাঙালি আয়ত্তে রাখতে পারেনি৷ এ জীবনকে সে স্বেচ্ছায় হারিয়েছে৷ বিশ্বায়নের গোলোকধাঁধায় তার শোণিতপ্রবাহে মিশেছে যে মাদক, সেখানে কে না জানে জীবন বাঁধা পড়েছে ভোগে আর দুর্ভোগে! ফলে তার আর অচেনা কোনও স্টেশনে নেমে পড়ার স্বাধীনতা নেই৷ তাঁর চৌখুপি থেকে উধাও হয়েছে বন্দনাদির ছায়া৷ সোশ্যাল মিডিয়ায় মুখ আর মুখোশের খেলা তাকে ক্লান্ত, কেবল ক্লান্ত করেছে, কিন্তু এই চক্রব্যূহ থেকে বেরনোর মন্ত্র সে জানে না৷ বরং বলা ভাল জানতে দেয়নি তার উদাসীনতা৷ তার নস্ট্যালজিয়া নামের আদিখ্যেতার ঘেরাটোপেই ভিতর হারিয়েছে সে নিজেই৷ ফলে রাজনীতি হয়েছে বিস্তর৷ কৃত্রিম দেওয়ালে ছবি পোস্ট ও গদগদভাষণ হয়েছে আরও বেশি৷ পত্রিকা নিয়ে চুলোচুলি হয়েছে বেদম৷ শুধু নীললোহিত আর তাঁর স্রষ্টা হারিয়ে গিয়েছেন বাঙালির জীবন থেকে৷ হারিয়ে গিয়েছে আজীবন জামার বোতাম খুলে রাখার ঐশ্বর্য৷ হারিয়ে যাচ্ছে এক গদ্যভাষা, যা পাঠককে মুহূর্তমাত্র বিরামের প্রশ্রয়টুকুও দেয় না৷

কার্তিকের মিঠে কুয়াশার দেখা এ শহরে মেলে কি না কে জানে৷ তবু এই বিস্মৃতি আর উদাসীনতার কুয়াশা এসে ঘিরে ধরে ক্যালেন্ডারের ২৩ অক্টোবর৷ বাঙালি চমকে দেখে আজই তো নীললোহিতের স্রষ্টার চলে যাওয়ার দিন৷ মুখোমুখি হয় বাঙালি আর বাঙালির আদিখ্যেতা৷ আর তার ভিতর দাঁড়িয়ে কে যেন বলে ওঠে-

“কুয়াশার মধ্যে এক শিশু যায় ভোরের ইস্কুলে

নিথর দিঘির পারে বসে আছে বক

আমি কি ভুলেছি সব

             স্মৃতি, তুমি এত প্রতারক?’

 

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ