Advertisement
Advertisement
Lata Mangeshkar

Lata Mangeshkar: ‘সরস্বতী ঠাকুরের কখনও বিসর্জন হবে ভাবিনি’, লতা মঙ্গেশকরের প্রয়াণে স্মৃতিমেদুর কৌশিকী

কিংবদন্তির সঙ্গে দশ বছরের ব্যক্তিগত সম্পর্কের স্মৃতি সম্পদ কৌশিকীর। লিখলেন মনের কথা।

Kaushiki Chakraborty writes about Lata Mangeshkar | Sangbad Pratidin
Published by: Suparna Majumder
  • Posted:February 6, 2022 2:50 pm
  • Updated:February 6, 2022 2:50 pm

কোভিড ও নিউমোনিয়ার জোড়া ধাক্কার ধকল সামলে উঠতে পারল না তাঁর শরীর। ৯২ বছর বয়সে প্রয়াত লতা মঙ্গেশকর (Lata Mangeshkar)। মাথার উপরের ছাতাটা কখনও যে এভাবে সরে যাবে। ভাবতে পারেননি কৌশিকী চক্রবর্তী (Kaushiki Chakraborty)। কিংবদন্তিকে কাছ থেকে দেখেছিলেন তিনি। সেই স্মৃতিই স্মরণ করেই সংবাদ প্রতিদিনের হয়ে কলম ধরলেন সংগীতশিল্পী।

সরস্বতী ঠাকুরের কখনও বিসর্জন হবে এটা কখনও ভাবিনি, কখনও চিন্তার মধ্যে ছিল না। সেজন্য এখনও খানিকটা শকে আছি। ওনাকে তো ছোটবেলা থেকে আমরা খুব ভগবানের মতো শ্রদ্ধা করেছি। ঠাকুরের আসনে রেখে পুজো করেছি। তারপর একটা সময় এমন হয় যখন ওনার সঙ্গে দেখা হয়, আমার গান শোনেন, কথা হয় ওনার সঙ্গে, বাড়িতে নেমন্তন্ন করেন। খাওয়া-দাওয়া, কথা বলা, গান শোনানো, ওনার কাছ থেকে গল্প শোনা, ওনার ছোটবেলার ওনার গান শেখার কাহিনি, উনি কী ধরনের গান শুনতে ভালবাসেন সব কথা হয়েছে। আবদুল করিম খাঁ সাহেবের রেকর্ডিংগুলো চালিয়ে চালিয়ে শুনিয়েছেন একধিকবার। গত দশ বছর ধরে যতবার ওনার সঙ্গে দেখা হয়েছে।

Advertisement

Kaushik Lata

Advertisement

প্রত্যেক বছর ওনার সিদ্ধান্তেই দীনানাথ মঙ্গেশকর অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হয়। সেটা উনি আমাকে দিয়েছেন। আমার কথা ভেবেছেন। আমার এখনও মনে আছে রাত সাড়ে এগারোটার সময় আমাকে ফোন করে বলেছিলেন “আমরা এই অ্যাওয়ার্ড তোমাকে দিতে চাই তুমি যদি গ্রহণ কর!” আমি বিশ্বাস করতে পারছিলাম না যে ফোনের ওপার থেকে এমন একজনের গলা শুনছি যার গলা ছোটবেলা থেকে ঘুমিয়ে ঘুমিয়েও শুনেছি।

সেরকম একজন মানুষ, মানে একটা আইকন থেকে একেবারে বাড়ির মানুষ হয়ে যাওয়া। আমার ছেলেকে জন্মদিনে ফোন করতেন। উনি গণপতি ভালবাসতেন, সেজন্য আমার ছেলে গণপতি আঁকত। সেটা ওনাকে হোয়াটসঅ্যাপে পাঠিয়েছি। উনি উত্তর দিয়েছেন। কথা বলেছেন। এমন অ্যাকসেস মানে ভগবানের সঙ্গে কথা বলার মতোই সুযোগ আমার। এর ফলে ওনার সঙ্গে একটা অন্তরের, অন্যরকম সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল।

[আরও পড়ুন: শুটিং সেটে সবার জন্য উপহার নিয়ে আসতেন, লতার স্মৃতিচারণায় গুলজার]

কথা শোনা যায়, সামনে গিয়ে বসা যায়, ছুঁয়ে দেখা যায় এমন একজন ভগবান। তার চলে যাওয়াটা গান বাজনার ছাত্রী হিসেবে মেনে নেওয়া কঠিন। এমন খালি জায়গা তৈরি হল যা কখনই ভরা সম্ভব নয়। আবার আন্তরিক জায়গা থেকে, ভালবাসার জায়গা থেকে একটা খুব অদ্ভুত খালি জায়গা লাগছে। উনি অসুস্থ ছিলেন, ভেন্টিলেশন ছিলেন, কোভিড হয়েছিল, সেরে উঠছিলেন। ভেন্টিলেশন থেকে বার করা হয়েছিল। এই সমস্ত সময়টাই খবর নেওয়া, জিজ্ঞেস করা সবই করছিলাম। মনে মনে এটাই জানতাম থেকে উনি ভাল হয়ে যাবেন, বাড়ি চলে আসবেন। এর যে অন্যথাও হতে পারে, এটা সত্যিই ভাবিনি।

Lata Mangeshkar

তবে এটাও ঠিক, উনি কি এভাবে যেতে পারেন? আমরা যদি ওনাকে যেতে দিই, তাহলে আমাদের কাছে অনেকটা খালি হয়ে যাবে। যতক্ষণ গান-বাজনা থাকবে, ততক্ষণ ভাল গানকে ভালবেসে শুনব। ততক্ষণই তো উনি থাকবেন। উনি তো আমার মাধ্যে আমি হয়ে থাকবেন। ওনার গান ছাড়া তো সত্যিই জীবনটা কাটাতে পারব না। তাহলে ওনাকে যেতে দেব কী করে! সেই জায়গাটা থেকে আমরা সবাই ওনাকে আদর করে আগলে, যত্ন করে নিজেদের মধ্যে রেখে দেব। সেখান থেকে ওনাকে সত্যিই হারানো সম্ভব নয়। ওনাকে হারালে ভেতর থেকে নিজেদেরও অনেকটা অংশ হারিয়ে যাবে। সেজন্য আমাদের ভালবাসায়, প্রার্থনায়, গানে, সুরে, সমস্তকিছুর মধ্যে উনি সবসময় থাকবেন। এই জীবনটা ঠিক রক্তমাংসের জীবনের আবর্তের মতো। এক সময় শুরু হয়, একসময় শেষ হয়ে যায়। কিছু কিছু জীবন সেই ছাঁচে পড়ে না। ওনার জীবনটা সেই সেরকম। কাজেই ওনাকে সঙ্গে করে নিয়ে চলাটাই আমাজের জীবন।

[আরও পড়ুন: Lata Mangeshkar: ‘লতাজি একটা স্বপ্নের মতো’, ভারতরত্নকে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন প্রসেনজিৎ-ঋতুপর্ণা-দেবের]

ওনাকে আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম, আপনার গান গাওয়ার সময় কোনও শ্বাস নেওয়ার আওয়াজ শোনা যায় না। কোনও গানে কখনও লাইনের মাঝখানে যে একটা ছোট জায়গা যেখানে শ্বাস নিতে হয় গানটা গাওয়ার জন্য, তা নিতে শুনিনি। এটা কীভাবে প্র্যাক্টিস করেছেন? তখনকার দিনের মাইকের থেকে আজকের প্রযুক্তি উন্নত হয়েছে। কিন্তু তখন তো এত উপায় ছিল না যে শ্বাসের জায়গাটুকু কেটে দেওয়া হবে, এডিট করা হবে। তারপরও কোনও শ্বাসের আওয়াজ নেই, কীভাবে? উনি তখন জানিয়েছিলেন, যাঁরা বাশি বাজাচ্ছেন তাঁদের কাছে আমি জিজ্ঞেস করতাম যে তোমরা কীভাবে কর।

Kaushiki Lata

একটা মানুষ টেকনিক ও নান্দনিকতা এত সুন্দরভাবে এ দু’টোকে মেশাতে পারতেন এবং এই ধারা বজায় রেখে গিয়েছিলেন ক্রমাগত। যেখানে নান্দনিকতা এত সুন্দরভাবে মন ছুঁয়ে গিয়েছে যে তার পিছনে একটা টেকনিক্যাল এক্সসেলেন্স আছে সেটা আমাদের কখনও মনেই পড়েনি যতক্ষণ না সেই গানটা গাওয়ার চেষ্টা করেছি। ওনার গবেষণার কোনও তুলনা নেই।  আমি পুণেতে ওনার হাসপাতালে গিয়েছিলাম। আমার স্বামী পার্থর গলার চিকিৎসা হয়েছিল। ওর গলার যতটা কষ্ট ছিল তা একেবারে সেরে গিয়েছে সেটা শুধুমাত্র ওখানকার চিকিৎসার জোরে। শুধু ভারতবর্ষ নয়, এশিয়া উপমহাদেশে খুব কম জায়গায় এমন ইক্যুইপমেন্টস রয়েছে যেখানে গলার ভিতরে এভাবে ক্যামেরা ঢোকানো যায়, ক্যামেরা ভিতরে থাকা অবস্থায় যে পেশেন্ট সে কথা বলে। পুরো জিনিসটার ভিডিওগ্রাফ হয়, সেটা দেখে ডাক্তার তার ভয়েস বক্সে তার ভোকাল কর্ডে ভোকাল মাসলসের কী মুভমেন্ট আছে এবং তা ঠিক হচ্ছে কিনা তার চিকিৎসা করতে পারেন। এটা আমি চোখের সামনে দেখেছি। যেহেতু পার্থর চিকিৎসা হয়েছে। এই পুরো ব্যবস্থাপনা করার চিন্তাভাবনার পিছনে একটা মানুষের কতটা অধ্যাবসায় আছে। এটা খুব শ্রদ্ধার।

Veteran singer Lata Mangeshkar

৭০ বছরের জীবনকে মনে হয় একটা সম্পূর্ণ জীবন। যেখানে একটা মানুষের কর্মজীবন সত্তর বছর। সেখানেই সেই মানুষটার সেই মানুষটার চর্চা, নিজেকে ধরে রাখার ক্ষমতা, পারসেপশন এটা কোনও আলোচনা, পর্যালোচনা প্রয়োজন আছে বলে তো মনে হয় না। আমরা ওনাকে শ্রদ্ধা করতে পারি, ওনাকে প্রণাম করতে পারি এবং ওনাকে আদর্শ হিসেবে নিজেদের জীবনে সামনে রেখে আমরা নিজেদের জীবনটা সেভাবে কোন গতিতে চালাবে সেটার একটা ধারণা তৈরি করতে পারি। একটা বিশ্বাস তৈরি করতে পারি যে এটাও সম্ভব। একটা মানুষ এভাবেও চলেছেন সারা জীবন। এর বেশি আর কিছু বলাটা খুব ঔদ্ধত্য হবে। মানুষটাকে খুব সম্মান করি, শ্রদ্ধা করি এবং ভালবাসি। তাঁর গান এবং তাঁর সঙ্গে আমার যতটুকু আন্তরিকভাবে যোগাযোগ করার বা ব্যক্তিগত সম্পর্কের যতটা জায়গা সেখান থেকে তাঁকে আমি সর্বৈবভাবে আজকের দিনে এবং প্রত্যেকটা দিন আমার প্রণাম জানাতে চাই এবং আমার শ্রদ্ধা জানাতে চাই। ওনাকে উদাহরণ হিসেবে নিজের চোখের সামনে রেখে যদি তেমন একটি সুর লাগাতে পারি। ওঁর মতো যদি একটু গাইতে পারি। ওই পারসেপশনের হাঙ্গারটা যেন নিজের মধ্যে রাখতে পারি এবং নিজের জীবনটাকে যেন এমনভাবে চালিয়ে রাখতে পারি।

[আরও পড়ুন: ‘কিশোরদার সঙ্গে ডুয়েট থাকলে মুশকিল হত’, ‘সংবাদ প্রতিদিন’কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে কেন বলেছিলেন লতা?]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ